হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী স্থিতি বা রক্ষণাবেক্ষণের দেবতা হলেন শ্রীবিষ্ণু। যাঁর অন্য নাম নারায়ণ। আগেকার দিনে বহু বনেদি বাড়িতে নারায়ণ পূজার চল ছিল। শাস্ত্রমতে ভগবান বিষ্ণু বা নারায়ণ ভক্তের মনস্কামনা পূরণ করে থাকেন। সেই নারায়ণেরই মন্দির রয়েছে শহর কলকাতায়। অবশ্যই এক বনেদি বাড়িতে।
আজও অবশ্য অনেকের বাড়িতে নারায়ণ পুজো হয়। কিন্তু, এখানকার নারায়ণ পুজোর সঙ্গে অন্যান্য বাড়ির নারায়ণ পুজোর পার্থক্যটা কি? সেই প্রশ্ন অনেকের মনে জাগতেই পারে। তাহলে, জেনে রাখা ভালো, এটা নারায়ণ মন্দির। অত্যন্ত জাগ্রত। আর, তাই এখানে নারায়ণের নিত্যপুজোর বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে।
উত্তর কলকাতার হেদুয়া জলাশয়ের কাছে রামদুলাল স্ট্রিট ও বেথুন রো-এর সংযোগস্থলে বাড়ির ঠিক পাশের বাড়িতে এই মন্দির। ঠিকানা, ১৩৩/২/১, রামদুলাল সরকার স্ট্রিট। এই মন্দিরটি এলাকাবাসীর কাছে কালাচাঁদ মন্দির নামে পরিচিত। এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা বিসি নান। তাঁর পরিবার মানিকতলা বাজারের মালিক। এই পরিবারের অন্য শরিকদের তৈরি নিস্তারিণী কালী মন্দির। সেখানে প্রতিষ্ঠাফলক থাকলেও নারায়ণ মন্দিরে অবশ্য কোনও প্রতিষ্ঠাফলক নেই।
আরও পড়ুন- নানেদের জাগ্রত কালী মন্দির, বারাণসী থেকে তৈরি করে আনা হয়েছিল বিগ্রহ
উঁচু বেদির ওপর তৈরি দক্ষিণমুখী এই মন্দিরে রয়েছে পাথরের অপূর্ব কারুকাজ। মন্দিরের কার্নিসের ভারবাহক হিসেবে বাদকদের নানা মূর্তি রয়েছে। মাঝখানে রয়েছে শিব ও অন্নপূর্ণার ছোট মূর্তি। মন্দিরে রয়েছে প্রবেশের দুটি দরজা। তার একটি সামনে, অন্যটি পিছনে। সামনের দরজা দিয়ে প্রবেশের পর ভক্তসংখ্যা বেশি হলে, তার ব্যবস্থা হিসেবে রয়েছে বেশ বড় অলিন্দ।
মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশের দুটি কাঠের দরজা ও একটি কলাপসিবল গেট রয়েছে। এর কাঠের দুটি দরজা ও অন্যান্য কাঠের দরজায় কাঠের সুন্দর কাজ রয়েছে। গর্ভগৃহের সামনের দেওয়ালে রয়েছে রামসীতা, অনন্তশায়িত বিষ্ণু, রাধাকৃষ্ণ, কৃষ্ণলীলা ও ফুলকারি নকশা। অলিন্দে প্রেক্ষাগৃহের মত রয়েছে সুন্দর ঝুল বারান্দা। মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রতিষ্ঠিত রয়েছে নারায়ণ শিলা। এই নারায়ণ শিলাই পরিচিত কালাচাঁদ নামে। দীর্ঘদিনের এই মন্দিরে বহু ভক্তই বংশপরম্পরায় ছুটে যান। বিপদে-আপদ কাটাতে পুজো দেন।