'ফ্যাশনটা হলো মুখোশ, স্টাইল মুখশ্রী' শেষের কবিতা ধার করেই বলা। একবিংশ শতাব্দিতে ফ্যাশনকে যুগোপযোগী করে তোলার চেষ্টা চলছে বিগত বেশ কিছু সময় ধরেই। তবে এবার এই শহর ভাবছে অন্যরকম ফ্যাশনের কথা। পরিবেশ বান্ধব ফ্যাশন।
শুক্রবার জেডি বিড়লা ইন্সটিটিউট এবং ইন্দো ব্রিটিশ স্কলারস অ্যাসোসিয়েশানের যৌথ উদ্যোগে এক বিকল্প ফ্যাশন প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল। টেকসই উন্নয়নের ভাবনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ফ্যাশনের চিন্তা কলকাতারই একঝাঁক তরুণীর মস্তিষ্ক প্রসূত। এরা সবাই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় স্বীকৃত জেডি বিড়লা ইন্সটিটিউটের পড়ুয়া। আর তাদের প্রদর্শনীর পোশাকি নাম ক্যালাইডোস্কোপ, ২০১৯।
জলবায়ুর দ্রুত পরিবর্তনের কারণ হিসেবে বিশ্ব উষ্ণায়নের কথা আমরা জেনে এসেছি সেই কবে থেকেই। আর এই উষ্ণায়নের পেছনে যে রয়েছে দূষণ, তাও তো কারো অজানা নয়। অথচ পরিবেশকে বঞ্চনার মাধ্যমে গড়ে ওঠেনি, এমন বিকল্প ফ্যাশনের ভাবনা আমাদের মাথাতেই আসেনি এতদিন। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখা ভাল, সারা বিশ্বে বস্ত্র শিল্পজাত দূষণ কিন্তু পরিবেশ দূষকের তালিকায় দু'নম্বরে।
জেডি বিড়লা ইন্সটিটিউট-এর ছাত্রীদের ভাবনায় উঠে এসেছে 'ওয়ান্ডার ফ্রম ট্র্যাশ' অর্থাৎ ফেলনা থেকেও ফ্যাশন হয়। কোকাকলার বোতল, খবরের কাগজ, ডিম রাখার বাক্স, ফেলে দেওয়া টাই, কম্পিউটার কি বোর্ডের বোতাম, পলিথিন সবকিছু থেকে পোশাক বানিয়ে দর্শকদের এবং বিচারকদের রীতিমতো চমকে দিয়েছে ছাত্রীরা।
আরও পড়ুন, ম্যাজিকে মাতালেন মুমতাজ
সাবেকিয়ানাকে ধরে রেখে নাকি ফ্যাশন হয় না। অন্তত ফ্যাশনের চলতি ধারণা তাই বলে। কিন্তু এরা দেখিয়ে দিয়েছে ২ হাজার বছর আগের জামদানি আর গাঙ্গেয় মসলিন শিল্পকে কতটা সমকালীন করে তোলা যায়। জামদানি কাপড়ের স্কার্ট, টপ, পালাজো কুর্তি যে কত আধুনিক লাগে, তা নতুন করে বোঝালো এই প্রদর্শনী।
দ্রুত জীবনে ফ্যাশনও যে জীবনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাল্টে যাবে, সেটাই স্বাভাবিক। আর টেকসই এবং ট্যাঁকসই করতে ফেলে ডেনিম জিন্সের সঙ্গে কারো তুলনাই চলে না। কিন্তু তার পাশাপাশি যে তথ্যগুলো নিয়ে আমরা উদাসীন, তা হল, একটা জিন্স তৈরি এবং রক্ষণাবেক্ষণে কতটা জল লাগতে পারে, কোনো ধারণা নেই আমাদের। ৩৮০০ লিটার জল খরচ হয় শুধুমাত্র একটা জিন্সের পেছনে। তাই পুরনো ডেনিম ফেলে না দিয়ে একটু পালটে নিলেই নতুন করে পরলে দিব্যি মানিয়ে যাবে। খরচ যেমন বাঁচল, পরিবেশের ওপর অত্যাচারও কম হল, আবার সঙ্গে ফ্যশনটাকেও বাদ দিতে হল না।
আরও পড়ুন, নগরকীর্তন থেকে প্রেম, কী বললেন ঋদ্ধি?
স্নাতকোত্তরের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রীরা যে পরিবেশের কথা ভেবে যে সমস্ত পোশাক বানিয়েছে, নিঃসন্দেহে তা প্রশংসার দাবি রাখে। তবে এগুলো কোনোটাই আপাতত বিক্রির কথা ভাবা হচ্ছে না। ভবিষ্যতে যখন হবে, তখন কিন্তু পকেটের দিকটাও ভেবে দেখতে হবে। মধ্যবিত্তের ধরাছোঁয়ার আওতায় হলে এবং পরে আরামদায়ক লাগলে তবেই সেই ফ্যাশন গ্রহণ করবে সমাজ। এখানেই শেষ নয়। ফ্যাশনের কথা বললে প্রথমেই মনে হয় পোশাক দৃষ্টিনন্দন হওয়া দরকার। দেখতে আকর্ষক হলে, তবেই সেই পোশাকের প্রতি আকর্ষণ বাড়বে। কিন্তু কি বোর্ডের বোতাম কিমবা দুধের প্যাকেট গায়ে ধারণ করে ভারতের মতো দেশে রাস্তায় হেঁটে চলে বেরানো আম জনতার পক্ষে কতোটা সম্ভব?