রামপ্রসাদের জন্ম হয়েছিল ১৭২০ সালে। আর, বিগ্রহ নিয়ে তিনি গঙ্গায় ডুব দিয়েছিলেন ১৭৮৬ সালে। ৬৫ বছর এই কালীসাধক জীবিত ছিলেন। গঙ্গাতেই ঘটেছিল তাঁর সলিল সমাধি। হালিশহর স্টেশন থেকে টোটোয় চেপে যাওয়া যায় রামপ্রসাদ সেনের বসতবাড়িতে। সেখানে রয়েছে রামপ্রসাদের কালীমন্দির। মন্দিরে তৈরি হয়েছে প্রশস্ত নাটমন্দির। মন্দিরের পাশেই রয়েছে পুকুর। সেখানেই স্নান করতেন তন্ত্রাচার্য কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের শিষ্য প্রখ্যাত কালীসাধক রামপ্রসাদ সেন।
একটা সময় হালিশহরের নাম ছিল কুমারহাট। তারপর হয় কুমারহট্ট। সেখান থেকে নাম বদলে হয় হাভেলিশহর। পরে যার অপভ্রংশ হিসেবে জায়গাটির নাম হয় হালিশহর। বর্তমানে এখানে রামপ্রসাদ স্মৃতিমন্দির রক্ষণাবেক্ষণ করে কুমারহট্ট-হালিশহর গুডউইল ফ্রেটারনিটি। ভিটার কাছে রয়েছে পঞ্চবটী।
আরও পড়ুন- দীপান্বিতা অমাবস্যায় বিশেষ আয়োজন, বামদেবের স্মৃতিধন্য তারাপীঠে সাজো সাজো রব
যেখানে কালীসাধক রামপ্রসাদ সেন তন্ত্রসাধনা করতেন। পঞ্চবটীর বটগাছের বয়স ৪৫০ বছর। এই পঞ্চবটীতে বসেই দেবী কালীর সাধনা করতেন সাধকপ্রবর রামপ্রসাদ সেন। রামপ্রসাদ সেনের দুই মেয়ে ছিলেন। তাঁরা হলেন জগদীশ্বরী এবং পরমেশ্বরী। এখানে কষ্টিপাথরের তৈরি দেবী কালীর বিগ্রহের নামও প্রসাদময়ী জগদীশ্বরী কালী। অসমের তেজপুরের জমিদার সুধাংশুকুমার রায় ১৩৬৪ সালের ২৯ জ্যৈষ্ঠ কষ্টিপাথরের এই দেবীমূর্তি রামপ্রসাদের বসতভিটেয় স্থাপন করেছিলেন।
আরও পড়ুন- রামকৃষ্ণদেবের স্মৃতিধন্য দক্ষিণেশ্বর, ভক্তদের ব্যাপক ভিড়, পুজোয় সকাল থেকেই বিশেষ আয়োজন
রামপ্রসাদ সেনের সম্পর্কে বহু কাহিনি প্রচলিত আছে। শোনা যায়, তিনি একবার বাড়িতে বেড়া বাঁধছিলেন। সেই সময় কাছেই তাঁর মেয়ে খেলা করছিল। মেয়ের থেকে দড়ি চেয়েছিলেন রামপ্রসাদ। মেয়ে খেলার আনন্দে সেই ডাককে গুরুত্ব দেয়নি। ভক্তদের বিশ্বাস, সেই সময় দেবী নিজে তাঁর মেয়ের রূপ ধরে রামপ্রসাদের হাতে বেড়ার দড়ি তুলে দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন- চান্না থেকে রাজগঞ্জ, বর্ধমানের নানা জায়গায় ছড়িয়ে সাধক কমলাকান্তের লীলাক্ষেত্র
রামপ্রসাদ সেন কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের জমিদারির সেরেস্তায় হিসেবের খাতা লিখতেন। সেই হিসেব লেখার খাতায় রামপ্রসাদ সেন দেবী কালীর নামে বিভিন্ন কবিতা লিখতেন। তা দেখে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রামপ্রসাদকে হালিশহরের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। সঙ্গে, বাড়িতে বসেই যাতে রামপ্রসাদ তাঁর মাসিক বেতন পেয়ে যান, সেই ব্যবস্থাও করেছিলেন। শুধু তাই নয়, রামপ্রসাদকে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র হালিশহরে একশো একর জমিও দান করেছিলেন। সেই জমি পরে পূর্ববঙ্গ থেকে আসা লোকজন দখল করে নেয় বলে অভিযোগ। বর্তমানে শুধু তাঁর বসতভিটের জমিটুকুই রয়েছে।