scorecardresearch

সাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ, শ্মশানের দেবী কালীকে যিনি বাঙালির ঘরের মেয়ে বানিয়েছেন

আজও ‘আগমেশ্বরী মাতা’র পুজো প্রচলিত আছে।

KRISHNANANDA_AGAMBAGEESH
আগমেশ্বরী পুজোর প্রতিমার সঙ্গে সাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ।

একটা সময় বাংলায় সেভাবে কালীমূর্তি পুজোর প্রচলন ছিল না। ইতিহাসবিদদের সমর্থিত প্রচলিত মত অনুযায়ী, তার প্রচলন ঘটিয়েছিলেন সাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ। তিনি স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে দক্ষিণাকালীর রূপ কল্পনা করেছিলেন। দেবী কালীর সেই রূপই বর্তমানে বাঙালির ঘরে ঘরে পূজিতা।

কৃষ্ণানন্দের আসল নাম ছিল কৃষ্ণানন্দ ভট্টাচার্য। তাঁর জন্ম হয়েছিল নদিয়ার নবদ্বীপে। তাঁর বাবা মহেশ্বরও ছিলেন পণ্ডিত। তিনি গৌড়াচার্য উপাধি পেয়েছিলেন। তাঁর নাম হয়েছিল মহেশ্বর গৌড়াচার্য। বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ ১৬০০ থেকে ১৬১০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

নবদ্বীপ প্রাচীন কাল থেকেই তন্ত্রের সাধনক্ষেত্র হিসেবে প্রচলিত ছিল। কথিত আছে, এই তন্ত্রসাধনা ক্রমেই সাধারণ মানুষের কাছে বিভীষিকাময় হয়ে উঠেছিল। যা দেখে পণ্ডিত সাধক কৃষ্ণানন্দ, শুদ্ধাচারে তন্ত্রসাধনা এবং ঘরে ঘরে শক্তি আরাধনা চালু করার সংকল্প করেছিলেন। কথিত আছে, কৃষ্ণানন্দ দেবীর কাছে তাঁর রূপ কল্পনার প্রার্থনা করেছিলেন।

দেবী স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন, পরদিন সকালে কৃষ্ণানন্দ প্রথমে যে নারীমূর্তি দেখবেন, সেই মূর্তিই হবে দেবী কালীর প্রকৃত রূপ। পরদিন ভোরে কৃষ্ণানন্দ গঙ্গাস্নানে বেরিয়ে এক গ্রাম্য বধূকে দেখতে পান। তাঁর ছবি মনের মধ্যে রেখে গঙ্গামাটি দিয়ে মূর্তি গড়েন তিনি। দীপান্বিতা অমাবস্যায় একই দিনে ছোট আকারের কালীমূর্তি বানিয়ে পূজা শেষে ভোরে তিনি বিসর্জন দিতেন। যাকে লোক বলত, ‘আগমবাগীশি কাণ্ড’। সেই থেকে তাঁর নাম হয়ে যায় কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ। তাঁর শুরু করা সেই পুজো পরবর্তীতে ‘আগমেশ্বরী মাতা’ নামে আজও নবদ্বীপে প্রচলিত আছে।

আরও পড়ুন- অতিজাগ্রত কূলেশ্বরী কালীমন্দির, পুজোর রাতে দূর-দূরান্ত থেকে ভিড় করেন অগণিত ভক্ত

সাধক কৃষ্ণানন্দ সম্পর্কে নানা কাহিনি প্রচলিত আছে। কথিত আছে, তিনি এক ধনীর বাড়িতে দুর্গাপূজা করতে গিয়েছিলেন। সেখানে পূজা শেষে বাড়ির কর্তা অহংকার করে অভিযোগ করেছিলেন, কৃষ্ণানন্দ দেবীর মূর্তিতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেননি। ক্ষুব্ধ কৃষ্ণানন্দ পালটা বলেছিলেন যে তিনি প্রাণপ্রতিষ্ঠা না-করে থাকলে তৎক্ষণাৎ তার প্রমাণ দেবেন। কিন্তু, প্রমাণ পাওয়ার পর ওই ধনীর বাড়ির কেউ আর জীবিত থাকবে না। গৃহকর্তা সেই প্রস্তাবে রাজি হওয়ার পর কৃষ্ণানন্দ একটি কুশি দেবী প্রতিমার উরুতে ছুড়ে মেরেছিলেন। তাতে নাকি প্রতিমার উরু ফেটে রক্তপাত শুরু হয়েছিল। আর, তারপরে ওই বাড়ির প্রত্যেকে মুখে রক্ত উঠে মারা গিয়েছিলেন।

কৃষ্ণানন্দ শৈব, গাণপত্য, শাক্ত, বৈষ্ণব ও সৌর সম্প্রদায়ের তন্ত্রগ্রন্থগুলোর সার সংগ্রহ করেছিলেন। মোট ১৭০টি গ্রন্থ থেকে নির্যাস গ্রহণ করে তিনি বিখ্যাত ‘তন্ত্রসার’ গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন। গোটা দেশে এই গ্রন্থ তান্ত্রিক সাধকদের কাছে বিশেষ খ্যাতি পেয়েছিল। তাঁর বিখ্যাত শিষ্যদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সাধক রামপ্রসাদ সেন।

Stay updated with the latest news headlines and all the latest Lifestyle news download Indian Express Bengali App.

Web Title: Kali pratima puja in bengal and krishnananda agambageesh