কালীঘাটের কালীমন্দির মানে ভক্তদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ। সতীপীঠ এবং অত্যন্ত জাগ্রত তীর্থস্থান বলে কালীঘাটের কালীমন্দিরের খ্যাতি বরাবরই। সেই কারণে বছরভর দেশ-বিদেশ থেকে ভক্তরা এই মন্দিরে এসে ভিড় জমান। বিশেষ তিথি বা উৎসবে ভিড় অত্যন্ত বেশি থাকে। বিশেষ করে পয়লা বৈশাখ, দুর্গাপুজো, দীপান্বিতা কালীপুজো, শিবরাত্রি ও নীলষষ্ঠীদতেও মন্দিরে ব্যাপক ভিড় হয়। এই সময় ভক্তদের মন্দিরে প্রবেশের লাইন সাপের মতো এঁকেবেঁকে বহু দূর পর্যন্ত চলে যায়। ভক্তদের বিশ্বাস এই মন্দিরে এসে দেবীর কাছে প্রার্থনা করলে, তিনি তা পূরণ করেন।
পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, সতীর দেহত্যাগের পর তাঁর দেহ বিষ্ণুর চক্রে খণ্ডিত হয়েছিল। সেই খণ্ডিত দেহের মধ্যে ডান পায়ের চারটি আঙুল কালীঘাটে পড়েছিল। অনেকে আবার বলেন, চারটে নয়। সতীর ডান পায়ের একটি আঙুল এই তীর্থ পড়েছিল। বিপদে-আপদে এই সতীপীঠেই তাই দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন ভক্তরা। এখানে দেবীর মূর্তিটি কষ্টিপাথরে তৈরি। মূর্তির জিভ, দাঁত, মুকুট, হাত ও মুণ্ডমালা সোনার। মন্দিরের মধ্যে একটি সিন্দুকে সতীর পাথর হয়ে যাওয়া অঙ্গটি রাখা আছে। সেটা কারও সামনে বের করা হয় না।
আরও পড়ুন- মন্দির তৈরি করেছে ভূতেরা, জাগ্রত এই শিবমন্দির ঘিরে আজও জড়িয়ে রহস্য
বিভিন্ন নথি বলছে কালীঘাটের কালীমন্দিরটি ২০০ বছরেরও বেশি পুরোনো। হাটখোলার দত্ত পরিবারের কালীপ্রসাদ দত্ত ও বড়িশার সাবর্ণ রায়চৌধুরী বাড়ির সন্তোষ রায়চৌধুরী এই মন্দির নির্মাণ করান। দেবীর বর্তমান মূর্তিটি দান করেছিলেন ব্রহ্মানন্দ গিরি ও আত্মারাম গিরি নামে দুই সন্ন্যাসী। কালীঘাট মন্দিরের সংলগ্ন একটি পুকুর রয়েছে। কথিত আছে, এই পুকুরেই নাকি পাওয়া গিয়েছিল সতীর অঙ্গ। পুকুরটির নাম কুণ্ড পুকুর বলা হয়। কথিত আছে, এর জল গঙ্গাজলের মতই নাকি পবিত্র। কালীঘাটের কালী মন্দিরের দেবীর ভৈরব হলেন নকুলেশ্বর মহাদেব। কালীমন্দিরের কাছেই রয়েছে নকুলেশ্বর মহাদেবের মন্দির। ব্রিটিশ আমলে ইংরেজ কর্মচারীরাও পর্যন্ত এই মন্দিরে আসতেন। আর, নিজেরা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের হলেও নিয়মিত এই মন্দিরে পুজোও দিতেন।