Advertisment

কালীপুজোয় ঠনঠনিয়ার ভক্তদের জুতো আগলে রোজগার ওঁদের

আলোর রোশনাই, বাজি ফাটার শব্দ, সঙ্গে ঢাকের আওয়াজে যখন তিলোত্তমা শক্তির আরাধনায় ব্যস্ত, তখন কল্পনা, আরতিরা ছেঁড়া শাড়ি পরে মায়ের ভক্তদের জুতো আগলে কালীপুজো উদযাপন করেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
thanthania, ঠনঠনিয়া

ঠনঠনিয়া মন্দিরের বাইরে জুতো আগলাচ্ছেন ওঁরা। ছবি: শশী ঘোষ।

"আমায় একটু জায়গা দাও মায়ের মন্দিরে বসি।" মায়ের মন্দিরেই ওঁরা জায়গা করে নিয়েছেন। মায়ের মন্দিরকে ঘিরেই ওঁদের দু'বেলা হাঁড়ি চড়ে। বছরের দুটি দিন ওদের কাছে স্পেশাল। এক পয়লা বৈশাখ, আর এক কালীপুজো। মোটা টাকা আঁচলে বেঁধে ঘরে ঢুকবেন, এই আশাতেই প্রতিবছর কালীপুজোয় সক্কাল থেকে রাত অব্দি ঠায় বসে থাকেন ঠনঠনিয়া মন্দির প্রাঙ্গণে। শুধু তো বসে থাকা নয়, মায়ের ভক্তদের দায়িত্বও নেন কল্পনা, আরতি, অঞ্জু, জবা, মোমেনারা। কালীপুজোয় ঠনঠনিয়ায় পুজো দিতে আসা দর্শনার্থীদের জুতো আগলান ওঁরা। যার বিনিময়ে যে টাকা জোটে, তাই দিয়েই চলে ওঁদের একার সংসার।

Advertisment

কালীপুজোর রাতে ঠনঠনিয়া মন্দিরের বাইরে দল বেঁধে বসে কল্পনা, আরতিরা। ওঁদের সামনে রাখা নানা রকমের জুতো। যে জুতো ওঁদের ভরসায় রেখে মায়ের পুজো দিতে ঠনঠনিয়া মন্দিরে ঢুকেছেন দর্শনার্থীরা। তবে এমন দৃশ্য শুধুমাত্র কালীপুজো ও পয়লা বৈশাখেই দেখা যায় ঠনঠনিয়া মন্দির চত্বরে।

কালীপুজোর দিন এখানে বসেন কেন? জবাবে কল্পনা দাস বললেন, "আমরা তো সারাবছরই এখানে থাকি। মন্দিরে বসে থাকি। যাঁরা আসেন এখানে, ওঁদের থেকে কিছু না কিছু পাই। এভাবেই চলছে। কালীপুজায় আমরা সকাল থেকে এখানে বসি, জুতো পাহারা দিই, একটু রোজগার বাড়ে।" মোমেনা নামের আরেক মহিলা, যিনি মন্দিরের বাইরে বসে জুতো পাহারা দিচ্ছিলেন, বললেন, "অনেকদিন ধরে বসি এখানে। কালীপুজোয় যদি একটু বাড়তি টাকা জোটে, এই আর কী।"

আরও পড়ুন: ভাইফোঁটা নয়, এবার রূপান্তরকামীদের জন্য ‘বোনফোঁটা’

বাড়তি টাকা মানে কিন্তু ৩০-৪০ টাকা বা ভাগ্য ভাল হলে, ১০০-২০০ টাকা। জুতো রাখার জন্য ওঁরা অবশ্য কোনও নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দাবি করেন না। ওঁদের কাছে জুতো রেখে মন্দিরে ঢোকার জন্য, যে যেমন দেন, তাই-ই হাতে নেন। এ ব্যাপারে কল্পনা বললেন, "আমরা গরিব লোক, কী আর চাইব? ওঁরা খুশি হয়ে যা দেন, তাই-ই নিই। আশা করছি ২০০-২৫০ টাকা রোজগার হবে আজ।"

কল্পনার কথা শুনতে শুনতেই এক দৃশ্য চোখে পড়ল। মোমেনার কাছে জুতো রেখে মন্দিরে পুজো দিতে ঢুকেছিলেন এক ব্যক্তি। পুজো দিয়ে ফেরার পর জুতোয় পা গলিয়ে ক'টা খুচরো পয়সা মোমেনার হাতে দিলেন তিনি। একেবারেই যৎসামান্য মূল্য দেখে কিঞ্চিৎ বিরক্ত হয়ে মোমেনা ওই ব্যক্তির উদ্দেশে বললেন, "এতে তো চা খাওয়ার টাকাও উঠবে না।" শুনে মায়ের ওই ভক্ত আরও কিছু টাকা দিলেন তাঁকে।

শুধু কল্পনা, মোমেনাই নয়, কালীপুজোয় জুতো পাহারা দিয়ে একটু বেশি রোজগারের আশায় ঠনঠনিয়া মন্দিরের বাইরে ভিড় জমিয়েছেন জবা, অঞ্জু, আরতিরাও। তাঁরাও বললেন, "অন্যসময় তো মন্দিরে যা পাই তাই নিয়ে যাই ঘরে। খাবার দাবার পাই, সেসব নিয়ে যাই। কালীপুজা আর পয়লা বৈশাখে আমরা এখানে বসি।"

kolkata news Diwali
Advertisment