হাজার তারার আলোর ছটা ওদের চোখে এসে পড়লেও ওরা সেই রোশনাইয়ের ভাগীদার হতে পারে না। আবার ওদের কেউ কেউ মারণ রোগকে কাঁধে নিয়ে দিন গুজরান করছে হাসপাতালের বেডে। সেই তাদের দিকেই এবার হাত বাড়ালো শহরের দুই কালীপুজো। উত্তর কলকাতার আহিরীটোলা সর্বজনীন কালীপুজো ও শোভাবাজার ইয়ং স্টার অ্যাসোসিয়েশন, এই দুই পুজো কমিটিই এবারের কালীপুজোয় দৃষ্টিহীন, বিশেষ ভাবে সক্ষম ও দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত শিশুদের মুখে হাসি ফোটানোর উদ্যোগ নিল।
এবার ৮৩ বছরে পা দিচ্ছে আহিরীটোলা সর্বজনীন কালীপুজো। প্রতিবছরই পুজোয় কিছু না কিছু করে থাকেন উদ্যোক্তারা। এবার যেমন প্রায় ৪০ জন মারণ রোগে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে আতসবাজি পোড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন তাঁরা। এ ব্যাপারে পুজো কমিটির সম্পাদক শুভজিৎ রায় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে জানালেন, "এনআরএস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রায় ৪০ জন শিশুকে আমরা আমাদের পুজোয় নিয়ে আসছি। ওদের মধ্যে কেউ ক্যান্সারে আক্রান্ত তো কেউ থ্যালাসেমিয়ার শিকার। ওদের সঙ্গে নিয়ে আতসবাজি পোড়াব। কিছুক্ষণ ওদের সঙ্গে কাটাব।"
কেন এমন ভাবনা? জবাবে শুভজিৎবাবু বললেন, "হাসপাতালে বাজি পোড়ানোর সুযোগ নেই। কোথাও হলেও ওদের মধ্যে একটা মন খারাপ কাজ করে। আর হতাশা কাটিয়ে ওঠার জন্য়ই তো কালীপুজো, অন্ধকার দূর করার জন্য়ই তো পুজো করি। তাই এমন উদ্য়োগ নিলাম, যাতে ওদের মুখে একটু হাসি ফোটে।''
আজ সন্ধে ছ'টার পর আহিরীটোলা সর্বজনীন কালীপুজো প্রাঙ্গণে ওই শিশুদের নিয়ে আতসবাজি পোড়ানো হবে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনেই বাজি পোড়ানোর কথাও জানালেন ওই পুজো কমিটির সম্পাদক।
আরও পড়ুন: ভাইফোঁটা নয়, এবার রূপান্তরকামীদের জন্য ‘বোনফোঁটা’
এদিকে উত্তর কলকাতার আরেক পুজো কমিটিও এবার কালীপুজোয় অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে। সংবেদন নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তিন দৃষ্টিহীন ও ছ'জন বিশেষ ভাবে সক্ষমদের নিয়ে কালীপুজোর উদ্বোধন করালো শোভাবাজার ইয়ং স্টার অ্যাসোসিয়েশন। শনিবার প্রদীপ জ্বালিয়ে ওই পুজোর উদ্বোধন করেন দৃষ্টিহীন ও বিশেষ ভাবে সক্ষমরা। যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। এমন ভাবনা কেন? জবাবে ওই সংগঠনের সমিত সাহা বললেন, "সবাই সেলিব্রিটিদের দিয়ে পুজো উদ্বোধন করান। এঁরা তো সমাজের চোখে তথাকথিত পিছিয়ে পড়া, তাই এঁদের সামনে আনতে, এদের খুশি করতেই এই ভাবনা। এঁরা যে ব্রাত্য নন সেটা বোঝাতে, এবং এঁদের সমাজের মূলস্রোতে ফেরানোর জন্যই এই উদ্যোগ।"
পুজো উদ্বোধন করে খুব খুশি তিন দৃষ্টিহীন স্বপন মালি, তনুশ্রী দত্ত ও মাম্পি দে। একইরকম আনন্দে অনাবিল বিশেষ ভাবে সক্ষম তীর্থরাথ পাল, সৌমিক বসু, মলয় চক্রবর্তী, ইন্দ্রাণী ঘোষ, রোহিত দত্ত, সুরজিৎ।