খানাকুলের চক্রপুর সিদ্ধেশ্বরী কালীমাতা। বিশাল আকারের ভয়ংকর রূপিণী এই দেবী ভীষণ জাগ্রত। এমনটাই মনে করেন চক্রপুরের বাসিন্দারা। প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের এই পুজো, 'কাঞ্চন ডাকাতের পুজো' বলেও খ্যাত।
ইতিহাস বলে, তৎকালীন সময়ে এই এলাকা ছিল ঘন জঙ্গলে ভরা। কুখ্যাত ডাকাত সর্দার কাঞ্চন মাজির ডেরা ছিল এখানেই। জমিদারদের কাছে মূর্তিমান ত্রাস ছিল এই কাঞ্চন। তার স্বভাব ছিল শেরউড বনের রবিনহুড-এর মত। কাঞ্চন জমিদার আর বড়লোকদের থেকে ধনসম্পদ লুঠ করে গরিবদের সাহায্য করত।
এই কাঞ্চনই স্বপ্নাদেশ পেয়ে চক্রপুর এলাকায় মাকে প্রতিষ্ঠা করেন। ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে নিয়ম করে এই মন্দিরে দেবীকে পুজো দিয়ে বের হতেন। কাঞ্চনের উত্তরসূরিরা এখনও এই মন্দিরে নিত্যপুজো করেন। বাইরের কোনও পুরোহিত আসেন না।
কাঞ্চনের উত্তরসূরিদের মধ্যে অন্যতম হলেন অনিমেষ পণ্ডিত। তিনি বলেন, 'আমাদের এই পুজোর কিছু আলাদা রীতি আছে। যা অন্যান্য কালী পূজার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। প্রথমত, আমাদের পুজোর জন্য আলাদা কোন ব্রাহ্মণ আসেন না। আমরা নিম্ন সম্প্রদায়ের হলেও আমাদের মধ্যে থেকেই একজন পুজো করেন। ৯টি শববেদির ওপর দেবী অধিষ্ঠান করেন। পঞ্চমুন্ডির আসনে মায়ের আরাধনা করা হয়। অনেকে এখানে মানত করতে আসেন। মূলত পাঁঠা উৎসর্গ করে মানুষজন মায়ের কাছে মানত করেন। অনেকেরই মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয়।'
আরও পড়ুন- কার্তিকী অমাবস্যায় কালীপুজোর রাত আলোয় আলো, কেন এই রেওয়াজ?
কথিত আছে মন্দির সংলগ্ন পুকুর থেকে স্নান করে এসে দেবীর কাছ থেকে নেওয়া একটি বালা হাতে পড়লে বহু দুরারোগ্য ব্যাধি সেরে যায়। বিশেষত মানসিক ব্যাধি। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই হাজার হাজার ভক্ত আসেন দেবীর এই মন্দিরে। শুধু চক্রপুরই নয়। হুগলি জেলার বিভিন্ন জায়গা, পার্শ্ববর্তী অন্যান্য জেলা এমনকী বাংলাদেশ থেকেও অনেক মানসিক রোগী এই মন্দিরে মানত করে সুস্থ হয়ে গেছেন। সেই সময় কাঞ্চন ডাকাত পুজো করতেন চুরি করে পাঁঠা এনে দেবীকে উৎসর্গ করে। সেই রেওয়াজ এখনও অবধি চলে আসছে বলে জানান অনিমেষের বৃদ্ধা মা গীতারানি পণ্ডিত। তবে এখন পাঁঠা নয়। না-জানিয়ে পাড়ার কোনও গাছ থেকে ফল পেড়ে তা উৎসর্গ করে এই জাগ্রত দেবীর পুজো সম্পন্ন হয়।