কৃষিপ্রধান দেশ ভারত। নদ-নদীতে পরিপূর্ণ হলেও ভারতের কৃষি নির্ভর করে মৌসুমী বায়ুর ওপর। স্পষ্ট করে বললে বর্ষার ওপর। ইতিমধ্যে বর্ষা শুরু হয়ে গিয়েছে। একইসঙ্গে চলে এসেছে রথযাত্রাও। এবছর ১ জুলাই রথযাত্রা। আর, রথযাত্রা হবে, অথচ বৃষ্টি হবে না, এমনটা সাধারণত হয় না। যেন জগন্নাথদেবের সঙ্গে বৃষ্টির একটা আলাদাই সম্পর্ক আছে।
সেটা যে বাস্তবিকই আছে, তার প্রমাণ মেলে উত্তরপ্রদেশের কানপুরে গেলে। কানপুর শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে ভিতরগাঁও বেহাতার ঘতমপুর এলাকা। ওই এলাকায় রয়েছে একটি জগন্নাথ মন্দির। মন্দিরটি প্রায় হাজার বছরের পুরোনা। আজও এখানে জগন্নাথদেবের পুজো হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের বিশ্বাস এই মন্দির মৌর্য সম্রাট অশোকের আমলে তৈরি। রথযাত্রার দিন দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা ভিড় করেন এই মন্দিরে।
এই মন্দিরের একটা বিশেষত্ব রয়েছে। যা দেখে রীতিমতো তাজ্জব হয়ে যান ভক্তরা। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বৃষ্টি শুরু হওয়ার অন্তত দিন সাতেক আগে থেকেই তাঁরা পূর্বাভাস পান। এই পূর্বাভাস পাওয়ার জন্য তাঁদের রেডিও বা টিভিতে আবহাওয়ার খবর দেখতে হয় না। কোনও আবহাওয়াবিদের বিশ্লেষণ শুনতে হয় না। তাঁদের বৃষ্টির আগাম আভাস দেয় এই মন্দির। আর, এই ধারা বছরের পর বছর ধরে চলছে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলছে।
আরও পড়ুন- স্নানযাত্রার উৎসবে তো মেতেছেন, জানেন পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের এইসব রহস্য?
কিন্তু, কীভাবে মেলে এই পূর্বাভাস? স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বৃষ্টি শুরুর দিন সাতেক আগে থেকে মন্দিরের ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ে। তা দেখেই তাঁরা বুঝতে পারেন, বৃষ্টি সপ্তাহখানেক পরেই হবে। শুধু তাই নয়, যদি ভারী বৃষ্টি হয়, তবে মন্দিরের ছাদ চুঁইয়ে বড় ফোঁটা পড়ে। আর, যখন মাঝারি বা ছিটেফোঁটা বৃষ্টি হবে, তখনও তা আগাম বোঝা যায় ফোটার সাইজ দেখে।
যে বছর মুষলধারে বৃষ্টি হয়, সেই বছর সপ্তাহখানেক আগে মন্দিরের ছাদ থেকে মুষলধারে বৃষ্টি পড়া শুরু হয়। আর, যে বছর হালকা বৃষ্টি হবে, সেই বছর সপ্তাহখানেক আগে মন্দিরর ছাদ থেকে নেমে আসা জলের ধারাও হয় ক্ষীণ। মজার ব্যাপার হল, মন্দিরের ছাদে কিন্তু, কোনও ফাটল নেই। যখন বৃষ্টি শুরু হয়, তখন মন্দিরের ছাদ থেকে জল পড়া বন্ধ হয়ে যায়। মন্দিরের ছাদে জলের চিহ্ন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায় না। এই সব কারণে, ওই এলাকার আশপাশের ৩৫টি গ্রামের বাসিন্দারা এই মন্দিরকে ডাকেন, 'বর্ষা মন্দির' বা 'রেইন টেম্পল' নামে।