ভারতের এক রহস্যময় মন্দির উত্তরাখণ্ডের আলমোড়ার কাছে কাসারগড়ের দুর্গামন্দির। সমুদ্রস্পৃষ্ঠ থেকে ৮,৬০০ ফুট উচ্চতায় পাইন ও দেবদারু গাছে ঘেরা এই মন্দির। কুমায়ুন পাহাড়ের জাগ্রত দেবী কাসার দুর্গা। দেবীর গর্ভগৃহ আছে একটি গুহা। এই গুহাতেই রয়েছে অষ্টভুজা সিংহবাহিনী দেবী দুর্গার মূর্তি। গর্ভগৃহে জ্বলছে 'অখণ্ড জ্যোতি'। যা কখনও নেভে না। এছাড়াও কাসার দেবীর মন্দিরে আছে পবিত্র হোমকুণ্ড। এই কুণ্ডে ২৪ ঘণ্টা কাঠ জ্বলে। এই কুণ্ডের ছাইতেই নাকি সেরে যায় যে কোনওপ্রকার মানসিক রোগ। এমনটাই বিশ্বাস এখানকার ভক্তদের।
মন্দিরটি পাইন ও দেবদারু গাছে ঘেরা। যেতে গেলে বিমানে পন্থনগর। সেখান থেকে গাড়িতে আলমোড়া এসে ধরতে হবে বাগেশ্বর হাইওয়ে। অথবা কাঠগোদাম রেল স্টেশন থেকে গাড়িতে আসতে হবে আলমোড়া। সেখান থেকে ধরতে হবে আলমোড়া-বাগেশ্বর হাইওয়ে হয়ে কাসার দেবী গ্রাম। হাইওয়ে ছেড়ে গিরিশিরা ধরে এগিয়ে যেতে হবে চূড়ার দিকে। পাহাড়টির নাম কাশ্যপ। তবে বেশি পরিচিত ক্রাম্কস হিল অথবা হিপি হিল নামে। কারণ, ১৯৬০ থেকে প্রায় দেড় দশক, দলে দলে হিপি এসে এই পাহাড়ে তাঁবু ফেলে থাকতেন।
কার্তিক পূর্ণিমার সময় এখানে কাসার দেবীর বড় মেলা বসে। স্কন্দ পুরাণ অনুযায়ী, এখানকার গুহা মন্দির তৈরি করেছিলেন যক্ষ আর গন্ধর্বরা। আবার, দেবী ভাগবত পুরাণ মতে এখানেই দেবী কৌশিকী শুম্ভ আর নিশুম্ভকে বধ করেছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের বিশ্বাস, দেবী দুর্গা অর্থাৎ দেবী কাসারের লীলায় তাঁদের মনকে কোনও বিষণ্ণতা স্পর্শ করতে পারে না। প্রত্যেক কার্তিক পূর্ণিমায় দেবী গ্রামের রাস্তায় নুপুর পরে ঘুরে বেড়ান বলেও বিশ্বাস করেন গ্রামবাসীরা। দেবী কাসারের মন্দির থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যেই রয়েছে শক্তিপীঠ কালীমাঠ। ওই শক্তিপীঠে দেবী কালীর সঙ্গেই পূজিতা হন লক্ষ্মী ও সরস্বতী।
আরও পড়ুন- বাস করেন পবনপুত্র, যে মন্দির ভাঙতে এসে ভয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন স্বয়ং ঔরঙ্গজেব
১৮৯০ সালে স্বামী বিবেকানন্দ কাসার দুর্গা মন্দিরে এসে ধ্যান করেছিলেন। তিনি নিজের বইয়ে এই অঞ্চলকে গোটা বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছেন। পরবর্তীতে কাসার এলাকায় এসেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, উদয়শংকর, জর্জ হ্যারিসন, আনন্দময়ী মা, ডিএইচ লরেন্স, রবিশংকর, ক্যাট স্টিভেন্স-সহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি। ২০১৩ সালে এখানে আসেন মার্কিন গবেষণা সংস্থা নাসার বিজ্ঞানীরাও। কারণ, এই জায়গাটি ভ্যান অ্যালেন রেডিয়েশন বেল্টের অন্তর্গত। কাসার অঞ্চল ছাড়া পেরুর মাচু পিচু ও ইংল্যান্ডের স্টোনহেঞ্জে রয়েছে এমন রেডিয়েশন বেল্টের প্রভাব। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই রেডিয়েশন বেল্টের জন্যই ভুচৌম্বকীয় ও মহাজাগতিক রশ্মির মিলিত প্রভাবে গোটা কাসার এলাকায় কাজ করে। যার জেরে ওই এলাকায় পজিটিভ এনার্জির পরিমাণ বেশি থাকে।