বাঙালির কাছে একটা সময় কাশী ছিল দ্বিতীয় ঘর। এখন সময় বদলালেও কাশীর প্রতি বাঙালির আকর্ষণ বিন্দুমাত্র কমেনি। এখানকার প্রধান তীর্থস্থান বিশ্বনাথ মন্দির। যে জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শনের জন্য বছর বছর দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পুণ্যার্থীরা কাশীতে আসেন। ঠিক কবে, এই মন্দির তৈরি হয়েছে, তা আজও অজানা।
তবে, বিদেশি আক্রমণকারীদের দ্বারা বারবার এই মন্দির আক্রান্ত হয়েছে। আর, বারবারই তা নতুন করে গড়ে উঠেছে। ১৯৮৩ সাল থেকে উত্তরপ্রদেশ সরকার এই মন্দিরের দেখভালের দায়িত্বে। সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকার ও বারাণসীর সাংসদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্যোগে কাশীর বিশ্বনাথ মন্দির চত্বর নতুন করে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই এই মন্দিরের চূড়াটি (১৫.৫ মিটার) সোনায় মোড়া।
১৮৩৫ সালে পঞ্জাবের রাজা রঞ্জিৎ সিং মন্দিরের চূড়াটি ১,০০০ কিলোগ্রাম সোনা দিয়ে মুড়ে দিয়েছিলেন। সেই কারণে এই মন্দিরকে হিন্দুদের স্বর্ণমন্দিরও বলা হয়। প্রত্যেক জ্যোতির্লিঙ্গের আলাদা নাম রয়েছে। কাশীর মন্দিরের নামকরণ করা হয়েছে বিশ্বনাথের নামে। স্কন্দ পুরাণে এই বিশ্বনাথ মন্দিরের উল্লেখ পাওয়া গিয়েছে। কথিত আছে, সতীর দেহত্যাগের পর মণিকর্ণিকা ঘাট দিয়েই শিব বিশ্বনাথ মন্দিরে এসেছিলেন।
আরও পড়ুন- দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম, যেখানে অবতার রূপে ধরা দিয়েছিলেন শিব
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ ভারতের এক ব্যক্তি ৬০ কেজি সোনা দান করেন। তাতে মন্দিরের গর্ভগৃহটি সোনার প্রলেপ দেওয়া হয়েছে। পুণ্যার্থীদের বিশ্বাস গঙ্গায় একটি ডুব দিয়ে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের দর্শন করলে মোক্ষলাভ করা সম্ভব। আদি শংকরাচার্য থেকে গুরু নানক, তুলসীদাস থেকে শ্রীরামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দ থেকে দয়ানন্দ সরস্বতী সব ধর্মনেতারা এই মন্দির কোনও না-কোনও সময় দর্শন করেছেন।
কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের প্রধান মন্দিরে ৬০ সেন্টিমিটার উঁচু ও ৯০ সেন্টিমিটার চওড়া রুপোর বেদি রয়েছে। এখানে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত বিশ্বনাথের পুজোপাঠ চলে। বহু সন্ন্যাসী এই জ্যোতির্লিঙ্গের জন্য বিশ্বনাথ মন্দিরের আশপাশে এসে ধ্যান করে থাকেন। সন্ন্যাসীদের মধ্যে মহাযোগী তৈলঙ্গস্বামীর লীলাক্ষেত্র হিসেবেও এই তীর্থক্ষেত্র পরিচিত।