হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী শিবের দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম কেদারনাথ। পাশাপাশি, উত্তরাখণ্ডের অভ্যন্তরে চার পুণ্যতীর্থের অন্যতম এই ধাম। গাড়োয়াল শহরের কাছে হিমালয়ের কোলে এই তীর্থভূমির পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে মন্দাকিনী নদী। আগে নাম কেদারখণ্ড হলেও ভগবান শিব কেদারখণ্ডের অধিপতি হওয়ায় শিবের নামে এই জায়গার নাম হয়েছে কেদারনাথ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩, ৫৮৩ মিটার উঁচুতে এই মন্দির। উচ্চতা ৮৫ ফুট। চওড়া ১৮৭ ফুট। ছয় ফুট উঁচু ভিতের ওপর তৈরি।
বছরের একটা বিস্তীর্ণ সময় মন্দিরের আশপাশ বরফে ঢাকা থাকে। সেই জন্য সারাবছর কেদারনাথ মন্দির খোলা থাকে না। এপ্রিলের শেষের দিকে অক্ষয় তৃতীয়ার দিন মন্দির খোলে। বন্ধ হয় নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে, কার্তিক পূর্ণিমায়। মন্দির বন্ধের পর কেদারনাথ মন্দিরের কিছু মূর্তি ডোলায় চাপিয়ে ছয় মাসের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় রুদ্রপ্রয়াগের উখিমঠে। স্থানীয় বাসিন্দারা একে বলেন ‘ডোলিযাত্রা’।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, প্রাকৃতিক দুর্যোগে বহুবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কেদারনাথ মন্দির। এলাকায় ধস নেমেছে। অথচ, অলৌকিক ভাবে রক্ষা পেয়েছে এখানকার নন্দী মূর্তি। এই মন্দির কবেকার, তা-ই নিয়ে নানা মত। মহাভারত অনুযায়ী, পাণ্ডবরা খবর পেয়েছিলেন যে মহাদেব এখানে ষাঁড়ের ছদ্মবেশে লুকিয়ে আছে। মহর্ষি ব্যাসদেবের নির্দেশে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পাপ ধুয়ে ফেলতে পাণ্ডবরা এখানে এসে তপস্যার দ্বারা মহাদেবকে তুষ্ট করেছিলেন। কেদারনাথে ষাঁড়ের পিঠের কুঁজকেই জ্যোতির্লিঙ্গ হিসেবে পুজো করা হয়। এই জ্যোতির্লিঙ্গ দেখতে ত্রিভুজাকৃতি। আদি শংকরাচার্যও এই মন্দির সংস্কারের কাজ করিয়েছেন।
আরও পড়ুন- মধ্যপ্রদেশের ওঙ্কারেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা পৌরাণিক কাহিনি
আবার, কথিত আছে ভগবান বিষ্ণুর অবতার নর-নারায়ণ তাঁদের তপস্যায় ভগবান শিবকে সন্তুষ্ট করেছিলেন। তাঁদের প্রার্থনা অনুযায়ী ভক্তদের আশীর্বাদ দিতে ভগবান শিব এখানে জ্যোতির্লিঙ্গ হিসেবে বসবাস শুরু করেন। এখানকার প্রধান পুরোহিতকে বলা হয় রাওয়াল। তিনি বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের। রাওয়াল মন্দিরের ভিতরে কোনও আচার-অনুষ্ঠান করেন না। তাঁর নির্দেশ যাবতীয় কাজ করেন সহকারীরা। শ্রাবণ মাসে রাখিপূর্ণিমার ঠিক আগে এখানে হয় অন্নকূট মেলা। আবার, বিনায়ক চতুর্থী এবং দিওয়ালিও খুব জাঁকজমক করে পালন হয়।