ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। তাঁর অপার ও অপরিসীম লীলার কথা ভক্তদের মুখে মুখে ফেরে। কিন্তু, খোদ ভগবানের জন্মস্থানের মন্দির ঘিরে রয়েছে বিরাট বিতর্ক। অনেকটা রাম জন্মভূমির মতই সেই বিতর্ক দশকের পর দশক, শতাব্দীর পর শতাব্দী ছেয়ে আছে ভারতীয় রাজনীতিকে। যেখানে বিদেশি আক্রমণ থেকে স্বাধীন ভারতের গতিপ্রকৃতি একাকার হয়ে গেছে।
পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মথুরায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর জন্ম হয়েছিল মহারাজ কংসের কারাগারে। তাঁর জন্মস্থানের পাশেই রয়েছে কেশব দেও মন্দির। কথিত আছে এই মন্দিরে মূল মূর্তিটি স্থাপন করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণের নাতি বজ্রনাভ। ভক্তদের দাবি, এই মন্দিরটি পাঁচ হাজার বছরের পুরোনো। গুপ্ত সাম্রাজ্যের শাসনকালে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত এখানে আরও একটি মন্দির তৈরি করিয়েছিলেন। যা পরবর্তীকালে ১০১৭ সালে গজনির সুলতান মামুদ ধ্বংস করে দিয়েছিলেন।
বিজয়পাল দেবের শাসনকালে ফের মন্দিরটি তৈরি করান জাজ্জা বিক্রম সাম্ভাত। এই মন্দির দর্শন করেন চৈতন্যদেব। কিন্তু, ১২০৭ সালে মন্দিরটি সিকান্দার লোদি ফের ধ্বংস করে দেন। মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গিরের জমানায় ফের তৈরি হয় এই মন্দির। কিন্তু, সেটাও দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ঔরঙ্গজেবের জমানায় ১৬৬৯ সালে ফের মন্দিরটি ধ্বংস করে দেওয়া হয়। মন্দিরের জায়গায় গড়ে ওঠে ইদগাহ।
আরও পড়ুন- কলকাতার কালী মন্দির, যাকে আপন করে নিয়েছেন চিনা নাগরিকরাও
পরে, ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ শাসনকালে জায়গাটি নিলামে তোলা হয়। যা কিনে নেন কাশীর রাজা পান্তিমল। তিনি সেখানে মন্দির তৈরি করতে গিয়ে স্থানীয় মুসলিম বাসিন্দাদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে যান। আদালতে বিতর্ক গড়ায়। আদালত রাজার পক্ষে রায় দেয়। কিন্তু, তিনি মন্দির তৈরি করে যেতে পারেননি। কাশীরাজের উত্তরাধিকারীর থেকে জায়গাটি কিনে নেন পণ্ডিত মদনমোহন মালব্য। কিন্তু, তিনিও মন্দিরটি তৈরি করিয়ে যেতে পারেননি।
শেষ পর্যন্ত বিড়লা গ্রুপ ও ডালমিয়া কোম্পানির হাত ধরে ১৯৬৫ সালে ফের মন্দিরটি তৈরি হয়। মন্দিরের পাশেই শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থানের স্মরণে একটি কারাগারও তৈরি করা হয়েছে। ১৯৮২ সালে তৈরি হয়েছে সেই কারাগার নির্মাণের কাজ। তবুও এই মন্দিরের জমি মুসলিমরা দখল করে আছেন অভিযোগ তুলে আজও শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থান বিতর্ক অব্যাহত।