/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/06/lakshmi-puja-history-1-2025-10-06-22-34-31.jpg)
Lakshmi Puja History: বাঙালির লক্ষ্মীপুজোর ইতিহাস অনেক লম্বা।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/06/lakshmi-puja-history-2-2025-10-06-22-36-23.jpg)
বাঙালির জীবনে লক্ষ্মীর বিশেষ স্থান
Laxmi Puja 2025: বাঙালি হিন্দুসমাজে দেবী লক্ষ্মী একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছেন। সারাবছর হিন্দু বাঙালি এই দেবীর আরাধনা করেন। প্রতিটি বাঙালির ঘরে দেবীর আসন পাতা আছে। সঙ্গে আছে ঘট, সিঁদুরকৌটো, কাঠের পেঁচা বা রূপোর পেঁচা, কড়ি এবং দেবীর ছবি। প্রতি বৃহস্পতিবার ধর্মপ্রাণ বধূরা দেবী লক্ষ্মীর পাঁচালি পড়েন। পুজোর আগে আল্পনা, শেষে বিতরণ করা হয় প্রসাদ।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/06/lakshmi-puja-history-4-2025-10-06-22-37-01.jpg)
কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো প্রাচীন উৎসব
ভাদ্র-আশ্বিন মাসের কোজাগরী পূর্ণিমা কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিন। এটি পূর্ববঙ্গের প্রাচীন উৎসব, যা আগে থেকেই সমাজের সর্বস্তরের মানুষ পালন করতেন। কুলদানন্দ ব্রহ্মচারীর বর্ণনা অনুযায়ী, কোজাগরী পূর্ণিমায় বিভিন্ন ঘরে আনন্দ ও উৎসাহ দেখা যেত। মেয়েরা নতুন ধান ও লক্ষ্মীর সরা ব্যবহার করে পুজো করতেন। কারও বা পুজো হত গাছা দিয়ে। সেই সময় লক্ষ্মীপুজোয় মূর্তি বানিয়ে পুজোরও তেমন প্রচলন ছিল না। আর, তখন আজকের মত দুর্গাপুজোরও এত চল হয়নি।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/06/lakshmi-puja-history-5-2025-10-06-22-37-38.jpg)
প্রতিমাসে লক্ষ্মীপুজো
সেই সময় বহু বাঙালি বাড়িতেই লক্ষ্মীপুজো হত প্রতিমাসে। যেমন- ভাদ্রমাসের শুক্লপক্ষের বৃহস্পতিবার ভাদ্রলক্ষ্মী পুজো, আশ্বিন মাসের পূর্ণিমায় কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো, কার্তিকের দীপান্বিতা অমাবস্যায় মহালক্ষ্মী পুজো, অঘ্রাণ সংক্রান্তিতে ক্ষেত্রলক্ষ্মী পুজো, পৌষ মাসের শুক্লপক্ষে পৌষলক্ষ্মী পুজো, মকরসংক্রান্তিতে অরুণালক্ষ্মী পুজো, মাঘ মাসের প্রথম দিনে উঠোনলক্ষ্মী পুজো, চৈত্রমাসের শুক্লপক্ষের বৃহস্পতিবারে চৈতেলক্ষ্মী পুজো। তবে, পূর্ববঙ্গীয়দের মধ্যে আশ্বিনমাসের শারদপূর্ণিমার কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোই ছিল সেরা।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/06/lakshmi-puja-history-6-2025-10-06-22-38-19.jpg)
প্রামাণ্য গ্রন্থ
পূর্ববঙ্গে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর বিবরণ মেলে কুলদানন্দ ব্রহ্মচারীর সঙ্গে বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর কথোপকথনে। কুলদানন্দের দেশ ছিল ঢাকার বিক্রমপুর অঞ্চলে। একবার বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, 'তোমাদের ওদিকের লোকের ধর্মভাব এখন কেমন?' জবাবে কুলদানন্দ বলেন, 'কোজাগর পূর্ণিমার দিনে আমাদের দেশে ঘরে ঘরে বড়ই আনন্দ। এই পূর্ণিমাতে মেয়েরা ঢালের মত বড়, লক্ষ্মীর সরা আনাইয়া, পূজা করেন। খুব বড় লোক হইতে নিতান্ত গরীব পর্য্যন্ত এই লক্ষ্মীপূজা করেন।' সদগুরু সঙ্গ–এর তৃতীয় খণ্ডে এই কথোপকথন আছে।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/06/lakshmi-puja-history-7-2025-10-06-22-39-05.jpg)
গজলক্ষ্মী পুজো
পূর্ববঙ্গের যখন এমন পরিস্থিতি, তখন হুগলি, বাঁকুড়া, মেদিনীপুরের বেশ কিছু জায়গায় জোর দেওয়া হত গজলক্ষ্মী পুজোয়। বাংলার অঞ্চলভেদে লক্ষ্মীঠাকুরের এই নানাভাবে অর্চ্চনার কথা ইন্দুমতি দেবীর বই 'বঙ্গনারীর ব্রতকথা'তেও রয়েছে। পূর্ববঙ্গে সেই সময় বাণিজ্যের চল বেশি ছিল। লক্ষ্মীপুজোতেও তার ইঙ্গিত রয়েছে। পুজোর শেষে নৌকা বা ডিঙা ভাসানো, ধনী পরিবারে সোনা বা রূপোর মুদ্রা পুজোর মুদ্রা হিসেবে জমিয়ে রাখার চল ছিল। রাত্রি জাগরণ এবং রাতভর ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখার চলও ছিল সর্বত্র। বিভিন্ন বাড়িতে প্রসাদ খেতেই রাত কাবার হয়ে যেত বহু মানুষের।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/06/lakshmi-puja-history-8-2025-10-06-22-40-00.jpg)
কৃষিতে জোর
পাশাপাশি, পূর্ববঙ্গে কৃষিতেও যে বিশেষ জোর দেওয়ার চল ছিল, তারও প্রমাণ মেলে এই কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোয়। পুজোতে ব্যবহার করা হত নবপত্রিকা, কলার বেড়/বেরি, কলাবউ, ধানের শীষ। কলাবউ বানাতে কলাগাছ, কচু, হলুদ, মানকচু, তুলসী, আখের মত অনেককিছুর সাহায্য নেওয়া হত।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/06/lakshmi-puja-history-9-2025-10-06-22-40-47.jpg)
অঞ্চলভেদে পুজোর রীতি
বাংলার কিছু অঞ্চলে লক্ষ্মীপুজোয় আবার ধানের গোলা, আল্পনা, পায়ের ছাপসহ স্থানীয় লৌকিক শিল্প লক্ষ্য করা যেত। কিছু অঞ্চলে আবার জয়া-বিজয়ার সঙ্গে দেবী লক্ষ্মীর পুজো হত। ফলে, বাংলার লক্ষ্মী আরাধনা সর্বত্র মোটেও একইরকম ছিল না। দুর্গাপুজোকে প্রাধান্য দিয়ে তার রেশ হিসেবে লক্ষ্মীপুজোও করা হত না। বরং, লক্ষ্মীপুজোই ছিল হিন্দু বাঙালির সেরা উৎসব।