/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/05/sara-laxmi-puja-1-2025-10-05-23-13-04.jpg)
Laxmi Puja: লক্ষ্মী পূজা।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/05/sara-laxmi-puja-2-2025-10-05-23-14-33.jpg)
সরা-তে লক্ষ্মী আরাধনা
Kojagori Lakshmi Puja: কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো বাঙালির এক অতি প্রাচীন এবং আধ্যাত্মিক উৎসব। দেবী লক্ষ্মী ধন, সৌভাগ্য এবং সমৃদ্ধির প্রতীক। কিন্তু জানেন কি, অনেক পরিবারে আজও মূর্তি নয়, 'সরা' বা মাটির সরায় আঁকা লক্ষ্মীচিত্রকেই পূজা করা হয়? সেটা এক বা দু'জন নয়। এভাবে সরায় দেবী লক্ষ্মীর পূজা বহুল প্রচলিত। আর, এটা বাঙালির সংস্কৃতির এক জীবন্ত ঐতিহ্য।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/05/sara-laxmi-puja-3-2025-10-05-23-15-53.jpg)
লক্ষ্মীর সরাকে পুজো করার কারণ
বাংলায় লক্ষ্মীপুজোর সময় সরা ব্যবহার করার উদ্দেশ্য শুধুমাত্র আচার নয়, এটি এক গভীর প্রতীকী ভাবনা বহন করে। এই সরা দেবী লক্ষ্মীর প্রতীক, যিনি ঘরে ধন-সম্পদ ও শান্তি আনেন। মাটির তৈরি হওয়ায় সরা পৃথিবীর উর্বরতার প্রতীক। অনেক স্থানে সরাকে গর্ভবতী নারী রূপেও কল্পনা করা হয়— যা জীবন ও সৃষ্টির প্রতীক। তবে বিভিন্ন অঞ্চলে সরা তৈরির নিজস্ব ধারা ও শৈলী রয়েছে।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/05/sara-laxmi-puja-4-2025-10-05-23-16-29.jpg)
সুরেশ্বরী সরা
সুরেশ্বর, অবিভক্ত বাংলার ফরিদপুর জেলার এক ঐতিহাসিক স্থান, এই সরার জন্মভূমি। চিত্র তিন ভাগে বিভক্ত— ওপরে শিব, মাঝে দুর্গা ও তাঁর পরিবার, নীচে দেবী লক্ষ্মী। এই সরা সূক্ষ্ম অঙ্কনশৈলীর জন্য বিখ্যাত। বর্তমানে বাংলাদেশের চন্দ্রমুখডোবা অঞ্চলে এটি তৈরি হয়।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/05/sara-laxmi-puja-5-2025-10-05-23-17-11.jpg)
গণকি সরা
‘গণকি’ শব্দটি এসেছে ‘গণক ঠাকুর’ থেকে, যাঁরা একসময় জন্মকুণ্ডলী ও প্রতিমা অঙ্কনে পারদর্শী ছিলেন। সরার পটভূমি প্রায় সবসময় লাল রঙের হয়। ওপরে মা দুর্গা সপরিবারে, নীচে দেবী লক্ষ্মী। ছবিতে অস্ত্রধারী দুর্গা ও শান্ত মুখের লক্ষ্মীর বিপরীত সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা হয়। এই সরা এখনও তৈরি হয় শরিয়তপুর জেলার কৈলারা গ্রামে।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/05/sara-laxmi-puja-6-2025-10-05-23-26-19.jpg)
ফরিদপুরী সরা
এই সরাও দু’ভাগে বিভক্ত— ওপরের অংশে থাকে মা দুর্গা বা রাধা-কৃষ্ণ। নীচের অংশে মা লক্ষ্মী। রঙে ও রেখায় এর নিজস্বতা আছে। এটি ফরিদপুর অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ মৃৎশিল্প।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/05/sara-laxmi-puja-7-2025-10-05-23-27-26.jpg)
ঢাকাই সরা
ঢাকাই সরায় দেবী লক্ষ্মীকে দেখা যায় নৌকায় বসা অবস্থায়, যা ধন-সম্পদের প্রতীক। অতীতে এই নৌকাকে বলা হতো 'ময়ূরপঙ্খী নৌকা'। অনেক ঢাকাই পরিবার আজও কলা পাতার ক্ষুদ্র নৌকা তৈরি করে পুজোর সময় নিবেদন করে। এগুলো এখন তৈরি হয় বাংলাদেশের বিক্রমপুর, বাসাইল ও আবিরপাড়া অঞ্চলে।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/05/sara-laxmi-puja-8-2025-10-05-23-28-42.jpg)
কৃষ্ণনগর ও কুমোরটুলির সরা
সময়ের সঙ্গে চাহিদা বাড়ায়, পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগর ও কুমোরটুলির শিল্পীরা নিজস্ব আঁকার ধারা তৈরি করেছেন। এখানে সরায় বেশি রঙের ব্যবহার, আধুনিক মোটিফ ও সূক্ষ্ম মুখাবয়বের কাজ দেখা যায়। সরা শুধু পূজার উপকরণ নয়, এটি গ্রামীণ শিল্প, বিশ্বাস ও নারীত্বের এক মেলবন্ধন। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সরা তৈরি করে চলেছেন মৃৎশিল্পীরা, যা আজও বাঙালির ঘরে ঐতিহ্যের আলো জ্বালিয়ে রাখে। সেই সূত্রে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো আমাদের শেখায়—সৌন্দর্য, বিশ্বাস ও শিল্প একসঙ্গে চলতে পারে। একটি মাটির সরায় যেমন লুকিয়ে থাকে দেবীর উপস্থিতি, তেমনি মাটির গন্ধে মিশে থাকে আমাদের শিকড়ের গল্প।