দিল্লির দূষণ নিয়ে খবরের কাগজ, গণমাধ্যমে শিরোনাম হওয়া প্রতিবারের মতোই জারি থেকেছে চলতি মরশুমেও। শহর কলকাতা নিয়ে হইচই বরং অনেক কম। কেমন আছে কলকাতা? বাতাসের গুণগত মানের সূচক (এয়ার কোয়ালিটি ইন্ডেক্স) বলছে মহানগরের অধিকাংশ অঞ্চলের বাতাস বিপদ সীমার ওপরেই রয়েছে।
বাতাসের গুণগত মান পরিমাপক যন্ত্র কলকাতার সাতটি অঞ্চলে রয়েছে। এগুলি হল, বালিগঞ্জ, বিধাননগর, ফোর্ট উইলিয়াম, যাদবপুর, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র সরোবর এবং ভিক্টোরিয়া। এর মধ্যে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এবং সংলগ্ন অঞ্চলের যন্ত্রে ধরা পড়া সূচক সর্বোচ্চ, ৩৮৮। অর্থাৎ বলা যায় ১৫ জানুয়ারি, দুপুর একটায় কলকাতার এই অঞ্চলের দূষণ ছিল সবচেয়ে বেশি। এর পরেই রয়েছে ফোর্ট উইলিয়াম চত্বর (৩৫৯) এবং বালিগঞ্জ চত্বর (৩৪১)। এই হিসেব কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত।
প্রাত্যহিক দূষণ ছাড়াও শীতকালে বাতাস ভারী থাকায় ভূ-প্ষ্ঠ সংলগ্ন অঞ্চলে দূষণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি থাকে। এই প্রসঙ্গে পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে জানালেন, "মূলত গাড়ি ঘোড়ার থেকেই দূষণ বেশি হয়, রাতে দিনের থেকে আরও বেশি হয়। দূষণজনিত রোগ সবসময় শীতকালেই বেশি হয়। কলকাতার দূষণের ছবিটা কোনও অংশেই দিল্লির থেকে কম নয়। আর দিল্লির দূষণ কিন্তু আশেপাশের রাজ্যের কারণে বেশি হয়। আমাদের শহরে তা নয়। কলকাতার দূষণের জন্য আমরাই দায়ী। এখানে প্রশাসনিক এবং ব্যক্তিগত স্তরে, দু'ই ক্ষেত্রেই অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। পুরোনো গাড়ি বাতিল করা, জঞ্জাল নিয়মিত পরিষ্কার করা, ই-ফুয়েল ব্যবহার করা, নির্মাণ শিল্প থেকে যে দূষণ ঘটছে, তা বন্ধ করা, এগুলোর ওপর রাজ্য প্রশাসনকে জোর দিতে হবে। ব্যক্তিগত স্তরে আমাদের পরিবেশ বান্ধব হয়ে উঠতে হবে। ব্যাক্তিগত যান কম ব্যাবহার করা, অহেতুক শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহার না করা, প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ খরচ না করাও তার মধ্যে পড়ে"।
মহানগরের বায়ু দূষণের কী প্রভাব পড়ছে সাধারণ মানুষের ওপর? প্রশ্ন করা হয়েছিল পালমোনোলজিস্ট (ফুসফুস বিশেষজ্ঞ) ডঃ অশোক সেনগুপ্তকে। তিনি জানালেন, "বায়ু দূষণের ফলে সবচেয়ে বেশি যেটা হয়, কাশি। যাদের সিওপিডি অথবা হাঁপানি রয়েছে, সমস্যা তাঁদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি হয়। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরে দূষণের সরাসরি প্রভাব পড়েছে জাদের ওপর, তাঁদের সার্বিক আয়ু কমেছে। আমাদের শহরে এখনও ডিজেলে চলা যান রয়েছে। এছাড়া নির্মাণ ক্ষেত্র থেকেও মাত্রাতিরিক্ত দূষণ ছড়ায়। আদালতের নির্দেশকেও বুড়ো আঙুল দেখানো হয় এই শহরে। সাধারণ নাগরিক কিছুটা সচেতন হয়ে ব্যক্তিগত স্তরে দূষণ থেকে দূরে থাকতে পারে, তবে মূল উদ্যোগ নিতে হবে প্রশাসনকেই। আমরা নিজেদের আশেপাশে প্রতিনিয়ত দেখছি, সরকারি পদাধিকারীদের গাড়ি, সরকারি হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স থেকে দূষণ ছড়ায় সবচেয়ে বেশি। তাঁদেরকে আটকাবে কে"?