"ছেলে হয়েছে, ছেলে হয়েছে", শোনামাত্রই আনন্দে সরগরম হয়ে উঠল লক্ষ্মীর সংসার। সে কী আনন্দ! এ তো নতুন বছরে নতুন অতিথি ঘরে এল। তাও আবার অমন ফুটফুটে ছেলে। ছোট্ট চারখানা পায়ে এখনও সে ঠিকমতো দাঁড়াতে শেখেনি। মায়ের আদর খেতেই ব্যস্ত সে। লক্ষ্মীর যাঁরা দেখভাল করেন, তাঁরা তো আনন্দে আত্মহারা। বর্ষবরণের মরসুমে তাঁদের উপরি পাওনা। আনন্দ তো হওয়ারই কথা। কারণ বছর শেষের দিনে নতুন জিরাফ ছানা পেল আলিপুর চিড়িয়াখানা।
বর্ষশেষের দুপুরে জনজোয়ারে ভাসছে চিড়িয়াখানা। তেমন সময়েই এল সুখবর। সাড়ে বারোটা নাগাদ জিরাফ পরিবারে জন্মাল ফুটফুটে পুত্রসন্তান। এ প্রসঙ্গে আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিস কুমার সামন্ত ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, ''৩১ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ লক্ষ্মী বলে একটি জিরাফের ছেলে হয়েছে। আপাতত ভাল রয়েছে মা ও ছেলে। এর আগে মেয়ের জন্ম দিয়েছিল লক্ষ্মী।'' উল্লেখ্য, গত বছরই তৃণা নামের আরেকটি জিরাফ এক কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছিল, যার নাম মুনিয়া।
নতুন বছরে নতুন অতিথি! একথা বলতেই হেসে ফেললেন অধিকর্তা। উচ্ছ্বসিত গলায় বললেন, "শুধু আমি নই, আমরা সকলে খুশি। আমাদের যেসব কর্মীরা এতদিন লক্ষ্মীর দেখভাল করেছেন, রাত জেগেছেন, তাঁরা সবথেকে বেশি খুশি।" লক্ষ্মীর ছেলের নাম কী রাখলেন? জবাবে অধিকর্তা বললেন, "এখনও নাম ঠিক হয়নি। সকলে আলোচনা করে ঠিক করব।" লক্ষ্মীর ছেলে হওয়ায় এই মুহূর্তে আলিপুরে জিরাফ পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা ১১, যার মধ্যে পুরুষ সদস্য পাঁচ ও মহিলা ছয়।
আরও পড়ুন: মুনিয়ার দৌড় আর শিম্পাঞ্জিদের খেলা, জমজমাট চিড়িয়াখানা
লক্ষ্মীর ডেলিভারি নিয়ে অবশ্য খানিকটা উদ্বেগেই ছিলেন আলিপুর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। ৩১ ডিসেম্বরের দুপুরে পুত্রসন্তানের জন্ম দেয় লক্ষ্মী। তখন চিড়িয়াখানায় হাজার হাজার মানুষের ভিড়। এত মানুষের ভিড় আগলে কীভাবে লক্ষ্মীর প্রসব করানো হবে, সে নিয়ে চিন্তায় পড়েছিলেন সকলেই। শেষ পর্যন্ত পাশে দাঁড়ান দর্শনার্থীরাই। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের জিরাফ প্রদর্শন বন্ধের অনুরোধে সায় দেন তাঁরা।
এ প্রসঙ্গে আশিসবাবু বলেন, ''দর্শনার্থীদের কাছে আমরা সত্যিই কৃতজ্ঞ। সকাল ১১টা নাগাদ খবর পাই যে লক্ষ্মীর প্রসব করানো হবে। তারপর আমরা দর্শনার্থীদের অনুরোধ করি, এখন জিরাফ প্রদর্শন করা যাবে না। অনেকে আশপাশে খাবার নিয়ে বসেছিলেন। আমাদের অনুরোধে ওঁরা খাঁচার চত্বর থেকে সরে যান। দু'তিন ঘণ্টা জিরাফ প্রদর্শন করাইনি আমরা। চাইলে ওঁরা বলতেই পারতেন, টিকিট কেটে ঢুকেছি, কেন দেখব না? কিন্তু যেভাবে সহযোগিতা করলেন, খুব ভাল লাগল।"
পর্যটকের মরসুমে চিড়িয়াখানার নতুন অতিথিকে দেখার সুযোগ মিলবে কি এখনই? আশিসবাবু বললেন, "কয়েকদিন পর ওকে ছাড়ব, তখনই দর্শনার্থীরা দেখতে পারবেন। আপাতত ও মায়ের কাছেই রয়েছে।"
অন্যদিকে, বড়দিনের থেকে পয়লা জানুয়ারি বেশি ভিড় টানল আলিপুর চিড়িয়াখানা। এ বছর নববর্ষের প্রথম দিনে চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের সংখ্যা ৮৩ হাজার। এমনটাই জানিয়েছেন অধিকর্তা। তবে এই সংখ্যা গতবছরের নিরিখে কম। আশিসবাবুর কথায়, "গত বছর এইদিনে ভিড় ৯০ হাজারের উপর ছিল।" উল্লেখ্য, গত ২৫ ডিসেম্বর চিড়িয়াখানায় ভিড় হয়েছিল ৬৮ হাজার, যেখানে গত বছর ক্রিসমাসে চিড়িয়াখানায় ৯৩ হাজার দর্শনার্থী ভিড় জমিয়েছিলেন।