বাঙালি মানেই খাবার, আর খাবার মানেই কলকাতার আনাচ-কানাচ। শহর কলকাতার অলি-গলিতে খাবারের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইতিহাসের নানান অধ্যায়। শুধু তাই নয়। এই শহরে কত যে নতুন খাবার জন্ম নিয়েছিল তাঁর কোনও হিসেব নেই। বাঙালির স্বাদ নিয়ে সারা বিশ্ব সবসময় গর্ব করে। দেশের এবং বিশ্বের যেকোনও প্রান্তের খাবার নিজের স্বাদ অনুযায়ী বানিয়ে নিতে পারে বাঙালি। এমনই কিছু বিখ্যাত খাবার যা কলকাতাকে পৌঁছে দিয়েছ আন্তর্জাতিক স্তরে।
ঝালে-ঝোলে-অম্বলে বাঙালি। বাঙালি রান্নাও বোঝে আবার টেস্টও। তথাকথিত বাঙাল-ঘটির ঝগড়া বিশেষ করে রান্না নিয়ে, বাংলার রান্নাঘরকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। কিন্তু বেশকিছু খাবার রয়েছে যে কারণেই কলকাতার প্রতি দেশের মানুষের মুগ্ধতা রয়েছে সাংঘাতিক। ফুচকা থেকে পিঠে তথা মিষ্টি বিশ্বের অন্যতম ফুড ডেস্টিনেশন হিসেবে বাংলাকে ভুলে গেলে চলবে না। শুধু যে মাছে-ভাতে বাঙালি এমন নয় কিন্তু, বরং আফগানি খাবার থেকে তন্দুর এখানে সবই পাবেন মনমত। কোন কোন খাবার কলকাতায় এসে ট্রাই না করলে আপনি নিজেই ঠকবেন?
রোল এবং কাটি রোল: কলকাতার বিখ্যাত এগরোল দারুণ বিখ্যাত। ভীষণ সাধারণ কিন্তু স্বাদে অসাধারণ এই খাবারটি কলকাতায় এসে না খেলে মিস করবেন আপনিই। বিশেষ করে নিজামের কাটি রোল, অর্থাৎ চিকেন টিক্কা অথবা মাটন পিস দিয়ে বানানো এই রোল দারুণ সুস্বাদু।
ফুচকা: এর থেকে দূরে থাকা একেবারেই সম্ভব নয়। ফুচকা প্রত্যেকেই নিজের স্বাদমত পছন্দ করেন। কেউ ঝাল বেশি তো কেউ টক। কিন্তু কলকাতায় এসে কেউ ফুচকা খাবেন না এ একেবারেই সম্ভব নয়। গোলগাপ্পাও নয়, আবার পানিপুরিও নয়, বরং ফুচকার সঙ্গে বাঙালির যে ভালবাসা তা অনন্তকাল ধরে।
রসগোল্লা এবং মিষ্টি দই: কলকাতায় এসে মিষ্টি না খেলে খুব মুশকিল। রসগোল্লা হোক বা ভাপা সন্দেশ এর জনপ্রিয়তা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। মিষ্টি দইও কিন্তু সেই তালিকায় পরে। নবীন দাসের রসগোল্লা, ভীমনাগের মিষ্টি দই, নকুড়ের সন্দেশ- মিষ্টি না খেয়ে কিন্তু কলকাতা ছেড়ে যাওয়া যাবে না।
আরও পড়ুন ঠেলাগাড়িতে স্বপ্ন বোনা, অদম্য জেদেই লক্ষ্যভেদ, ‘Momo চিত্তে’র মালকিন মৌমিতার কাহিনী চমকে দেবে
বিরিয়ানি: কলকাতার বিরিয়ানি মানেই তাতে আলু এবং হালকা মশলা। বিরিয়ানির সৃষ্টি আফগানে হলেও এই শহর তাঁকে এক অন্যমাত্রা দিয়েছে। যদিও ব্যাপ্তি নবাবের শহর লখনউ থেকে। কিন্তু বিরিয়ানিতে আলু-ডিম মানেই কলকাতার বিরিয়ানি।
স্ট্রিট চাইনিজ এবং মোমো: রাস্তার ধারে চাইনিজ মানেই হলুদ চাউমিন এবং তাঁর সঙ্গে চিলি চিকেন। চায়না টাউন বিখ্যাতই অথেনটিক চাইনিজের জন্য। ১৭০০ শতাব্দির শেষের দিকেই কলকাতায় চাইনিজ খাবারের ব্যাপ্তি ছড়িয়ে পড়ে। তবে, বর্তমানে তাঁর সঙ্গে বেড়েছে মোমো খাওয়ার ধুম। ভিন্ন ধরনের মোমো এখন সকলের খুব পছন্দের। টিবেটিয়ান খাবারের চল এখন দারুণ।
চপ-ফুলুরি (তেলেভাজা): ভিন্ন ধরনের চপ, কাটলেট অর্থাৎ তেলেভাজা ছাড়া বাঙালির সন্ধে গড়ায় না। আলু থেকে মোচা, পেঁয়াজি- শহরের নানান জায়গায় মিলবে এর খোঁজ। লক্ষ্মী নারায়ণ সাঊ তাঁর মধ্যে অন্যতম। নেতাজি সুভাষ এই দোকান থেকেই খেতেন তেলেভাজা। এছাড়া ফিস পকোড়া থেকে চিকেন পকোড়া সবই হার মানাবে অন্য স্বাদকে।
ঝালমুড়ি-কচুরি: পুঁটিরামের কচুরি মানেই সে স্বাদের ভাগ হবে না। কিংবা ঠনঠনিয়া কালীবাড়ির সামনেই মিনি কচুরি, বাগবাজারের মাছের কচুরি- কলকাতায় এসে এই স্বাদ না পেলে নিজেদের অনেক বড় লস। এদিকে, ঝালমুড়ি সে তো বাঙালির প্রতিদিনের পছন্দের খাবার। সব জায়গাতেই এর খোঁজ মিললেও স্বাদ আলাদা হবেই। কাগজের ঠোঙায় আজও নজর কাড়বে এই খাবার।