শেষ কবে এমন বন্দিজীবন কাটিয়েছেন, মনে পড়ে? আপিস-কাছারি বন্ধ। ছোটদের স্কুল-কলেজে তালা ঝুলেছে সেই কবেই। ছুটি ভরপুর, তবে কিনা ছুটির আমেজটুকু নেই। নেই বিকেল হলেই মাঠে হুটোপুটি। সন্ধে গড়িয়ে গেলেও সাইকেলে টইটই নেই, পাড়ায় দাদাগিরি নেই। সিনেমা-আড্ডা-গান-গল্প নেই। এমন কী ঘ্যানঘ্যানে সহকর্মীর মুখ দেখা পর্যন্ত নেই। এতদিন সবাই খোপ কাটা, ছক বাঁধা জীবনেই বাঁচছিলাম, কিন্তু করোনা যেন কেমন করে হাজার প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিল!
শুধু মুখোমুখি বসে থেকে ভালো থাকবেন কীভাবে? বিনোদনের সব রাস্তা বন্ধ। টিভি চালালেই নিজের হাত অজান্তেই চলে যাচ্ছে রিমোট কন্ট্রোলে। চ্যানেল ঘুরছে খবরে। মৃত্যুমিছিল জারি! উফফ... কী ভয়ঙ্কর! কিন্তু এভাবে কতদিন থাকা যায়! ঘরবন্দি মুখগুলো সব হাসতে ভুলে যাবে? শহরে লকডাউন জারি হয়েছে ২৪ ঘণ্টা আগে। এই অবস্থাতেও কীভাবে জুড়ে থাকা যায়, সেই ভেবেই রেডিও কোয়ারেন্টাইন এর উদ্যোগ নিয়েছেন একদল তরুণ-তরুণী।
আরও পড়ুন, করোনার দিনগুলো আসলে কাছে আনছে আমাদের, বলছে গবেষণা
অন্ধকার সময়ে মানুষের পাশে পাশে থাকবে এই অনলাইন রেডিও, জানালেন চলচ্চিত্র পরিচালক কস্তুরী বসু। বললেন, "এরকম কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে আমরা আগে কখনও যাইনি। মানুষকে একটু বেঁধে বেঁধে রাখার কথা ভাবছি তাই। অনেকে মিলে এই রেডিও কোয়ারেন্টাইনের উদ্যোগ নিয়েছি। দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ তাঁদের ইচ্ছেমতো গল্প, কবিতা, গান রেকর্ড করে পাঠাতে পারবেন। ২৪ মার্চ বিকেল ৪টে থেকে শুরু হবে রেডিও-র লাইভ স্ট্রিমিং। থাকবে করোনার সচেতনতামূলক আলোচনাও"।
ছোটদের ছুটির মেজাজ অটুট রাখতে বিকেলের দিকে শুধু কচিকাঁচাদের জন্যেও আলাদা অনুষ্ঠান করার ভাবছে রেডিও কোয়ারেন্টাইন। নিজেদের যাবতীয় রেকর্ডিং পাঠিয়ে রাখতে হবে radioquarantinekolkata@gmail.com এই ঠিকানায়। রাতারাতি এক অজানা আতঙ্কের সমার্থক হয়ে উঠেছে এই শব্দ, 'কোয়ারেন্টাইন'। এবার হয়তো সেই ভয় কমার পালা। মানুষ জানবে, সংকটের দিনগুলোতেও ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকা যায়। হ্যাঁ, দুরে দূরে থেকেও।