লোকাল ট্রেনে আরও উন্নত পরিষেবা দেওয়ার লক্ষ্যে এক অভিনব উদ্যোগ নিলেন রেল কর্তৃপক্ষ। শিল্পকর্মের সাহায্যে ট্রেনের কামরা সাজিয়ে তোলার উদ্যোগ নিচ্ছেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই বনগাঁ শাখা ও মেন লাইন শাখাতে আপ ডাউন করা লোকাল ট্রেনের দুটি বগিতে এই প্রয়াসের প্রতিফলন দেখা গেছে। তবে শিল্পী কারা? জেনে হয়ত অবাক হবেন, ট্রেনের কামরায় এই ছবি এঁকেছেন বারাসত কারশেড, লিলুয়া কারশেডের EMU কর্মচারীরাই।
এই উদ্যোগের নেপথ্যে কারণ হলো, ট্রেনে যে বিভিন্ন ধরণের পোস্টার সাঁটা হয়, এবং তাতে যে দৃশ্যদূষণ হয়, তাতে রেলযাত্রীদের মনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তার চেয়ে কামরাগুলোকে যদি সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা যায়, তবে মানুষের রোজকার যাতায়াতের পথে মন ভালো হয়ে যাবে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, সুন্দর সাজানো গোছানো পরিবেশে মন ভালো থাকে।
বেশীরভাগ সময় দেখা যায় যৌনতা সম্পর্কিত এবং কুসংস্কারকে প্রশ্রয় দেওয়া বিজ্ঞাপনে ভরা থাকে ট্রেনের কামরা। অনেক যাত্রী এই নিয়ে অনেক অভিযোগ জানালেও আজ পর্যন্ত কোনোরকম পদক্ষেপ নেয় নি রেল। কিন্তু এখন থেকে যৌনতামূলক বিজ্ঞাপন অথবা পোস্টার লাগালে তার জন্যে জরিমানা করা হবে। প্রয়োজনে গ্রেফতার করা হতে পারে।
ট্রেনের কামরায় লুকিয়ে এই ধরণের পোস্টার সাঁটা হলে যে সংস্থার তরফ থেকে এই কাজ করা হবে সেই সংস্থার বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে আরপিএফ অথবা জিআরপিএফ সেই সংস্থার মালিককে গ্রেফতারও করবে।
আপাতত বনগাঁ শাখা এবং মেইন লাইন শাখার দুটি ট্রেনের মহিলা কামরায় এই ধরণের ছবি আঁকা হয়েছে। রেলযাত্রীরা অবশ্যই এই ধরণের উদ্যোগকে ইতিবাচক নজরেই দেখছেন। সারাদিনের কর্মব্যস্ততার পর এমন রঙচঙে দৃশ্য ভালই লাগছে। জানানো হয়েছে আরও বেশ কিছু ট্রেনে এই ধরণের ছবি আঁকা হবে। প্রয়োজনে ট্রেনের কিছু বগির বাইরেও এই ছবি আঁকা হবে।
রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ছবিগুলি যাতে নোংরা বা নষ্ট না হয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় নজরদারি চালাবেন তাঁরা।
মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্রর কথায়, "এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো সৌন্দর্য্য বর্ধন, এবং তার মাধ্যমে চোখের আরাম। রেলকে পরিষ্কার পরিছন্ন রাখার দায়িত্ব রেলযাত্রীদেরই। কাজেই তাঁরা যাতে সুন্দর পরিবহন ব্যবস্থা উপভোগ করতে পারেন, সেকথা মাথায় রেখেই এই ব্যবস্থা। আপাতত দুটো কোচে এই পাইলট প্ৰজেক্ট করা হয়েছে।"
ইতিমধ্যে হাওড়া, বোলপুর, রামপুরহাট সহ বেশ কিছু স্টেশনেও এই ধরণের ছবি আঁকা হয়েছে। ভবিষ্যতে এই উদ্যোগ সফলতা পেলে রেলের রেভিনিউ বাড়াতে বাইরের স্পন্সরশিপ নিয়ে আসা হবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
রেলের এই অভিনব এই প্রচেষ্টাকে সকলেই বাহবা দিচ্ছেন। এই পাইলট প্ৰজেক্ট সফলতা পাক, এমনটা বহু রেলযাত্রী আশা করছেন। রেল কর্তৃপক্ষ যদি এই প্রচেষ্টাকে সঠিকভাবে চালিয়ে নিয়ে যেতে পারেন, আপনার রেলযাত্রা সত্যিই সুন্দর হবে।