যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে খুদে হৃদয়। ফ্যাকাশে কচিমুখগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিনযাপন করছেন বাবা-মায়েরা। ছোট্ট ফুটফুটে ছেলেমেয়েগুলোর হৃদয়ে থাবা বসিয়েছে রোগ। যে রোগ সারাতে গুনতে হবে কয়েক লাখ টাকা। অত টাকা পাবেন কোথায় বাবা-মায়েরা? ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয়’ অবস্থা যাঁদের, তাঁদের ছেলেমেয়েদের চিকিৎসার খরচ বইতে লাখ লাখ টাকা কে দেবে? মুশকিল আসান হিসেবে হাজির ‘রোটারি ক্লাব অফ ক্যালকাটা ওল্ড সিটি’। হৃদরোগে আক্রান্ত দুঃস্থ পরিবারের শিশুদের নিখরচায় চিকিৎসার জন্য যেন দেবদূত ওই ক্লাবের প্রজেক্ট ‘হৃদয়া’।
গত বছরের মতো এবছরও হৃদরোগে আক্রান্ত দুঃস্থ শিশুদের চিকিৎসার তহবিলের জন্য এ শহরে ছুটবে ২০০টি গাড়ি। আগামী রবিবার বিশেষ কার র্যালির আয়োজন করেছেন ক্লাব কর্তৃপক্ষ। যার নাম ‘ট্রেজার হান্ট কার র্যালি’। কার র্যালি থেকে যে টাকা উঠবে, তা হৃদরোগে আক্রান্ত ৫০ জন শিশুর চিকিৎসার জন্য দান করা হবে। এ প্রসঙ্গে ক্লাবের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট তথা ‘হৃদয়া’-র চেয়ারম্যান সুরজিৎ কালা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, "যেসব দুঃস্থ শিশুরা হৃদরোগে আক্রান্ত, তাদের চিকিৎসার জন্য আমরা এগিয়ে এসেছি। কারও অস্ত্রোপচার করা হয়েছে, কারও শুধুই চিকিৎসা করা হয়েছে। গত দু'বছরে প্রায় ৩৫ জন শিশুর চিকিৎসা করিয়েছি আমরা। ২০১৭ সাল থেকে আমরা এটা শুরু করেছি।"
আরও পড়ুন: শিল্প, গল্প দিয়ে ক্যান্সার জয় কলকাতার তৃণার
হৃদরোগে আক্রান্ত দুঃস্থ শিশুদের চিকিৎসার জন্য কার র্যালির ভাবনা কীভাবে এল? জবাবে সুরজিৎ বললেন, "মানুষকে আনন্দ দিয়েই কাজ করতে হয়। সকলেই আনন্দ করার একটা প্ল্যাটফর্ম চান। ট্রেজার হান্ট কার র্যালি সকলে করেন না। সেটাকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। গত বছর ২০০টি গাড়িকে নিয়ে করেছিলাম। এবারও তাই করছি।" এ প্রসঙ্গে হৃদয়ার চেয়ারম্যান আরও বললেন, "অনেকেই জানেন না, ট্রেজার হান্ট কার র্যালি কী। গত বছর যখন আমরা করি, তখন মানুষকে বোঝাতে খুব অসুবিধে হয়েছিল। এই কনসেপ্টটা ছিলই আগে। তবে একসঙ্গে এত গাড়ি নিয়ে এ শহরে র্যালি করার চ্যালেঞ্জটা নিয়েছি আমরা।"
হৃদয়ার চেয়ারম্যান সুরজিৎ কালা
আগামী রবিবার সকাল সাড়ে নটায় স্প্রিং ক্লাব থেকে শুরু হবে কার র্যালি। এই মুহূর্তে চলছে রেজিস্ট্রেশন। কার র্যালিতে অংশ নেওয়ার নিয়ম কী? সুরজিৎ জানালেন, "গাড়ি পিছু ১,৫০০ টাকা লাগবে। একটি গাড়িতে চালক-সহ তিনজন থাকতে পারবেন। অর্থাৎ পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া যাবে। তবে তিনজনের বেশি কাউকে নিতে গেলে অতিরিক্ত ৫০০ টাকা লাগবে।" কার র্যালিতে অংশ নিলে ধাঁধার উত্তরও খুঁজতে হবে অংশগ্রহণকারীদের। এ প্রসঙ্গে তিনি বললেন, "কোথায় যেতে হবে, সেই জায়গার নাম সরাসরি বলা থাকবে না। ধাঁধা হিসেবে দেওয়া থাকবে। তা বুঝেই সেখানে যেতে হবে। বিভিন্ন রাস্তায় ধাঁধার ক্লু দেওয়ার জন্য থাকবেন মার্শালরা।" উল্লেখ্য, ট্রাফিক আইন মেনেই কার র্যালি করা হবে বলে জানানো হয়েছে উদ্যোক্তাদের তরফে।
আরও পড়ুন, হিউম্যান লাইব্রেরি: শহরে এই প্রথম বই-মানুষের বৈঠক
শুধু কার র্যালিই নয়, অত্যাধুনিক গাড়ির প্রদর্শনীরও স্বাদ মিলবে এই র্যালিতে। এ প্রসঙ্গে সুরজিৎ বললেন, "'কলকাতা ড্রাইভস' আমাদের এই র্যালিকে সমর্থন জানিয়েছে। ওদের হাতে বিভিন্ন দামী গাড়ি রয়েছে। যেগুলি র্যালিতে অংশ নেবে না। তবে ওই গাড়িগুলি একটা জায়গায় রাখা থাকবে। এসব গাড়ি কলকাতায় খুব কমই রয়েছে। অত্যাধুনিক গাড়ির সঙ্গে সেলফি তোলারও সুযোগ পাবেন সাধারণ মানুষ।"
গত বছরের কার র্যালির ঝলক। ছবি সৌজন্যে: হৃদয়া
হৃদরোগে আক্রান্ত দুঃস্থ শিশুদের জন্য কার র্যালির পাশে থাকছেন পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ও। তাঁর আগামী ছবি ‘মুখোমুখি’-র অভিনেতারাও এই উদ্যোগের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। যদিও রবিবারের র্যালিতে থাকছেন না পরিচালক। এই উদ্যোগ প্রসঙ্গে কমলেশ্বর বলেছেন, "ভাল উদ্যোগ এটা। বাচ্চাদের খুব উপকারে লাগবে। বাচ্চাদের এই চিকিৎসার খুব দরকার। অনেকেই পারেন না এসব চিকিৎসা করাতে।" কার র্যালিতে অংশ নেওয়ার কথা ওই ছবিরই আরেক অভিনেত্রী পায়েল সরকারের। পায়েল বললেন, "অনেক বাচ্চাই হৃদরোগের সমস্যায় ভোগে। চিকিৎসা হয় না বলে অনেকে মারাও যায়। আর এসব চিকিৎসার জন্য খরচও প্রচুর। অনেক বাবা-মা-ই তাঁদের বাচ্চাদের এই চিকিৎসা করাতে পারেন না। ফলে আমার মনে হয়, এটা দারুণ উদ্যোগ।"
হৃদয়ার সঙ্গে প্রথম থেকেই রয়েছেন কোরিওগ্রাফার সুদর্শন চক্রবর্তী, যিনি এবারও কার র্যালিতে অংশ নিচ্ছেন। তিনি বললেন, "যেসব বাচ্চারা হৃদরোগের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের কীভাবে নিখরচায় চিকিৎসা করাতে পারি, সেটা নিয়ে আমরা কাজ শুরু করি। গত বছর থেকে এই কার র্যালি শুরু হয় এজন্য। এই উদ্যোগের শুরু থেকেই আমি রয়েছি।"