বাংলার প্রাচীন কালী তীর্থগুলো নদীর পাশ বরাবরই গড়ে উঠেছে। গঙ্গাতীরেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তাতে নতুন করে জোয়ার এসেছিল সিপাহি বিদ্রোহের বছর দশেক আগে থেকে। এই সময় একে একে বেশ কয়েকটি কালীমন্দির গড়ে ওঠে গঙ্গাতীর সংলগ্ন এলাকায়। যেমন, ১৮৫৫ সালে তৈরি হয়েছিল দক্ষিণেশ্বর মন্দির। তার বছর পাঁচেক আগে ১৮৫০ সালে তৈরি বরানগর কুঠিঘাটের কৃপাময়ী কালী মন্দির। সময়টা ছিল ১২৫৭ বঙ্গাব্দ। চৈত্র সংক্রান্তির দিন তৈরি হয়েছিল এই মন্দির।
এর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শোভাবাজারের বাবু রামচন্দ্র মিত্রের ছেলে জয়নারায়ণ মিত্র। এই মন্দিরে দেবী দক্ষিণাকালীর মূর্তিটি কষ্টিপাথরের। যা তৈরি করেছিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়ার দাঁইহাটের শিল্পী নবীন ভাস্কর। শ্রীরামকৃষ্ণ বেশ কয়েকবার এই মন্দিরে এসেছেন। কথিত আছে তিনি দেবী কৃপাময়ীকে 'মাসি' বলে ডাকতেন। আগে এই মন্দিরে পশুবলি হত। কিন্তু, ১৯০০ সালে (১৩০৭ বঙ্গাব্দে) বালানন্দ ব্রহ্মচারীর নির্দেশে সেই বলি বন্ধ হয়ে যায়।
এই মন্দিরটি প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। পশ্চিমে গঙ্গার পাশেই রাস্তা। তার ঠিক পরেই মন্দিরে প্রবেশের প্রধান ফটক। যার দু'দিকের স্তম্ভের মাথায় মাঝারি আকারের দুটি সিংহ মূর্তি। প্রধান ফটক দিয়ে মন্দির চত্বরে প্রবেশের পর দু'ধারে ছ'টি করে মোট ১২টি আটচালা শিব মন্দির দেখা যাবে। তার মধ্যে বাম দিকের মন্দিরগুলোতে রয়েছে পশুপতিনাথ, বিশ্বনাথ, বৈদ্যনাথ, চন্দ্রনাথ, অমরনাথ ও ভুবনেশ্বর শিবলিঙ্গ। আর, ডান দিকের মন্দিরগুলোতে রয়েছে রামেশ্বর, উমানন্দ, কেদারনাথ, সোমনাথ, তারকনাথ ও আদিনাথ শিবলিঙ্গ। এই শিবমন্দিরের প্রাঙ্গণে রয়েছে সারি সারি তুলসীমঞ্চ।
আরও পড়ুন- আজও রাজা চন্দ্রকেতুর ভবানী মূর্তির পুজো করে পানিহাটি, দেবী জাগ্রত, দাবি ভক্তদের
কৃপাময়ী কালীর মন্দিরটি উঁচু বেদির ওপর তৈরি। দক্ষিণমুখী এই মন্দিরে ওঠার সিঁড়ি আছে। এই মন্দিরের সঙ্গে মূলাজোড়ের ব্রহ্মময়ী কালী মন্দিরের অনেকে মিল খুঁজে পান। এখানে গর্ভগৃহে প্রবেশের একটিই দরজা। আরও একাধিক দরজা আছে, তবে সেগুলো নকল। গর্ভগৃহে দেবী কৃপাময়ীর নিত্যপুজো হয়। মন্দিরের সামনে আছে নাটমন্দির। তা জীর্ণ হয়ে পড়েছিল বলে সংস্কার করা হয়েছে।