/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/04/kurumbera-fort-1-2025-10-04-18-26-15.jpg)
Kurumbera Fort: কুরুম্বেরা দুর্গ।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/04/kurumbera-fort-2-2025-10-04-18-26-25.jpg)
দিঘার পথেই দুর্গ
Kurumbera Fort: দিঘা বা খড়গপুরের পথে যদি কখনও ভ্রমণে বের হন, তবে অবশ্যই একবার ঘুরে আসুন কুরুম্বেরা ফোর্ট। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশিয়াড়ি ব্লকের গগনেশ্বর গ্রামে অবস্থিত এই প্রাচীন দুর্গটি ইতিহাসপ্রেমী এবং স্থাপত্যরসিকদের জন্য এক অমূল্য সম্পদ। প্রায় ৬০০ বছরের পুরনো এই দুর্গ আজও দাঁড়িয়ে আছে সময়ের সাক্ষী হয়ে।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/04/kurumbera-fort-3-2025-10-04-18-27-02.jpg)
কলিঙ্গরাজের আমলে তৈরি
ইতিহাসবিদদের মতে, কুরুম্বেরা ফোর্টের নির্মাণকাল ১৫শ শতকের মাঝামাঝি (১৪৩৮–১৪৬৯ খ্রিস্টাব্দ)। এই সময়ে উড়িষ্যার বিখ্যাত রাজা গজপতি কপিলেন্দ্র দেব (Kapilendra Deva) এই অঞ্চলের শাসক ছিলেন। তাঁর রাজত্বকালে পশ্চিম মেদিনীপুরের একটি বড় অংশ ছিল উড়িষ্যার অন্তর্গত। প্রশাসনিক ও ধর্মীয় কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে কপিলেন্দ্র দেব বিভিন্ন স্থাপত্য নির্মাণ করেন — যার মধ্যে অন্যতম ছিল এই কুরুম্বেরা ফোর্ট।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/04/kurumbera-fort-4-2025-10-04-18-27-36.jpg)
মুঘল আমলের প্রভাব
সম্ভবত ১৬৯১ খ্রিস্টাব্দে, মুঘল শাসনামলে এখানে মোহাম্মদ তাহির নামে এক ব্যক্তি তিন গম্বুজ বিশিষ্ট একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। এই মসজিদটি আজও দুর্গের ভেতরে অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। পাথরের বেদির ওপর তৈরি গম্বুজযুক্ত এই স্থাপনাটি হিন্দু ও মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর এক অসাধারণ সংমিশ্রণ।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/04/kurumbera-fort-5-2025-10-04-18-28-02.jpg)
স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য
পুরো দুর্গটি তৈরি হয়েছে লেটারাইট (লাল পাথর) দিয়ে। চারপাশে প্রায় ১০ ফুট উঁচু প্রাচীর ঘেরা। ভিতরে রয়েছে প্রশস্ত আঙিনা এবং খিলানযুক্ত করিডর, যা একসময় ধর্মীয় কার্যকলাপের কেন্দ্র ছিল। দুর্গের ভিতরে একসময় একটি শিবমন্দির ছিল, যা এখন ধ্বংসপ্রাপ্ত। এই মন্দিরের স্থাপত্যরীতি ছিল ওড়িশার 'রেখা দেউল' ধাঁচের, অর্থাৎ উড়িষ্যা-শৈলীর গম্বুজ আকৃতির মন্দির নির্মাণ পদ্ধতি।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/04/kurumbera-fort-6-2025-10-04-18-28-30.jpg)
নামের উৎস
'কুরুম্বেরা' শব্দটি এসেছে স্থানীয় ভাষা থেকে— ‘কুরুম’ অর্থ পাথর, এবং ‘বেরা’ অর্থ ঘেরা জায়গা বা প্রাচীর। অর্থাৎ 'পাথরে ঘেরা স্থান'— নামের মধ্যেই যেন লুকিয়ে আছে দুর্গের আসল পরিচয়।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/04/kurumbera-fort-7-2025-10-04-18-28-56.jpg)
বর্তমান অবস্থা
বর্তমানে কুরুম্বেরা ফোর্টটি ভারতের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ (ASI)-এর অধীনে সংরক্ষিত। যদিও কিছু অংশ ভগ্নপ্রায়, তবুও মূল স্থাপনাটি এখনও দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। স্থানীয় মানুষ ও পর্যটকদের কাছে এটি এক ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গর্বের স্থান।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/04/kurumbera-fort-8-2025-10-04-18-29-22.jpg)
কীভাবে পৌঁছবেন?
কুরুম্বেরা ফোর্ট অবস্থিত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশিয়াড়ি ব্লকের গগনেশ্বর গ্রামে। খড়গপুর শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার, আর বেলদা থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার। খড়গপুর–দিঘা রুটে ভ্রমণ করলে রাস্তায় অল্প ডিট্যুর নিয়েই এই ঐতিহাসিক স্থাপত্যটি ঘুরে দেখা যায়। এই ফোর্ট কেবল একটি পুরনো স্থাপত্য নয়, এটি ইতিহাসের জীবন্ত দলিল। কলিঙ্গ রাজত্ব, মুঘল প্রভাব এবং বাঙালি সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটেছে এখানে। যদি আপনি ইতিহাস, স্থাপত্য বা পুরোনো কাহিনির অনুরাগী হন, তবে একবার এই দুর্গ ঘুরে আসা অবশ্যই দরকার।