এই মহাবিশ্বের কোথায় কোথায় কী রোগ ছড়িয়ে আছে সেই সম্পর্কে জানা একবারে সম্ভব নয়। প্লেগ, জলবসন্ত পেরিয়ে মানুষ কোনওদিন করোনা ভাইরাসের কবলে পড়বে সেই ধারণাও ছিল না। লাসা ফিভার সেরকমই একটি রোগ যেটি ইউনাইটেড কিংডম জুড়ে বেশ কিছু মানুষের শরীরে দেখা গিয়েছে। বিশেষ করে যারা আফ্রিকা মহাদেশের সংস্পর্শে গিয়েছেন তাদের মধ্যে এই রোগের লক্ষণ মেলে।
তবে স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং কর্মকর্তাদের মতে তীব্র প্রাণঘাতী এই জুনোটিক ভাইরাস মানবদেহে কিন্তু সেইভাবে সমস্যা ঘটায় না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, লাসা জ্বরের সবথেকে শীর্ষ সময় শুষ্ক মরশুমে। অর্থাৎ ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল এই সময়ের মধ্যেই যা বাড়বাড়ন্ত দেখা যায়। শুষ্ক মরশুম শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই রোগের মাত্রা কমে না।
আসলে এটি কী?
আসলে লাসা ভাইরাস দ্বারা সৃষ্টি রক্তক্ষরণ সম্পর্কিত একটি অসুখ। একক স্ত্র্যান্ড যুক্ত আরএনএ ভাইরাস, যেটি অ্যারেনা ভিরিডি পরিবারের অন্তর্গত। ১৯৬৯ সালে নাইজেরিয়ার লাসাতে প্রথম এটি স্বীকৃত হয়। মাসিনা হাসপাতালের পরামর্শক ইনটেনসিভিস্ট ডাঃ মনীশ ওয়াধওয়ানি বলেছেন কম করে সারা বছরে ৫০০০ জন এই রোগে মারা যান। কি থেকে সৃষ্টি হয় এটি? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সূত্রে মাস্টোমিস প্রজাতির একটি ইঁদুর, যা সাধারণত মাল্টিমামমেট ইঁদুর নামে পরিচিত। লাসা ভাইরাসে আক্রান্ত মাস্টোমিস ইঁদুররা শুধুই অসুস্থ হয় না, তবে তারা তাদের প্রস্রাব এবং মলের মধ্যে ভাইরাসটি ছড়াতে পারে।
কোন ধরনের উপসর্গ দেখা যায়?
চিকিৎসকরা বলছেন মানবদেহ অনুযায়ী এর ভিন্নতা দেখা যায়। তবে লক্ষণ নজরে আসার আগে ব্যক্তিকে সংক্রমিত বলে ধরা যায়না। বেশিরভাগ এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অল্প মাত্রায় জ্বর, মাথাব্যথা, অস্বস্তি এগুলি দেখা যায়। আরও গুরুতর লক্ষণ এবং উপসর্গগুলোর মধ্যে, ফ্যারিঞ্জাইটিস, কাশি, বমি বমি ভাব, বমি, ডায়রিয়া, পেশী ব্যথা, বুকে-পিঠে ব্যথা এবং পেটে ব্যথা হতে পারে। অত্যধিক মাত্রায় সংক্রমিত হলে মুখের ফোলাভাব, শ্বাসযন্ত্রের ব্যর্থতা, কোমা, রক্তপাত (মুখ, নাক, এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্ট থেকে) এবং রক্তচাপ কমে যেতে পারে। একের পর এক অত্যাবশ্যক অঙ্গ ব্যর্থতার কারণে এটি মাল্টি-সিস্টেম জড়িত হয়ে যেতে পারে। লাসা জ্বরের সবচেয়ে সাধারণ জটিলতা হল শ্রবণশক্তি হ্রাস, যা এক-তৃতীয়াংশ রোগীর মধ্যে ঘটে এবং হালকা বা গুরুতর অসুস্থতার ক্ষেত্রে এটি দেখা যেতে পারে।
এর চিকিৎসা ঠিক কেমন?
লাসা রোগের চিকিৎসায় রিভারবিন নামক একটি অ্যান্টি ভাইরাল ড্রাগ দেওয়া হয়। জ্বর শুরু হওয়ার প্রথম ছয় দিনের মধ্যে এটিকে রোগীকে দিতে হয়। এছাড়াও চিকিৎসার অন্যতম ধাপ হিসেবে পর্যাপ্ত তরল দিয়ে রক্তচাপ বজায় রাখা, বাহ্যিক অক্সিজেনের মাধ্যমে শরীরে সেটির মাত্রা বজায় রাখা এগুলি করতে হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, আজ পর্যন্ত এর কোনও ভ্যাকসিন নেই যেটি মানবদেহকে রক্ষা করতে পারে।
সুরক্ষিত কীভাবে থাকবেন?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে জানানো হয়েছে, যে ইঁদুর বাড়ির আশেপাশে থাকলেও সেটিকে তাড়ানোর বন্দোবস্ত করতে হবে। ইঁদুর যাতে খাবারে কিংবা আহারে মুখ না দেয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাড়ি থেকে দূরে আবর্জনা ফেলা, পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা। অসুস্থ ব্যক্তিদের সেবা করার সময় রক্ত এবং শরীরের তরল সংস্পর্শ এড়িয়ে যেতে হবে। লক্ষণ দেখলেই ল্যাবে পরীক্ষা করান এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।