বৃহস্পতিবার মানে যে লক্ষ্মীবার, একথা কে না-জানে। সেই অনুযায়ী, প্রতি বৃহস্পতিবার বিভিন্ন বাড়িতে লক্ষ্মীপুজোর চল আছে। কিন্তু, এই পশ্চিম বাংলাতেই আছে এমন এক মন্দির, যেখানে পৌষের বৃহস্পতিবার পুজো দিলে ভক্তের বাড়িতে লক্ষ্মী অচলা হয়ে অবস্থান করেন। সেই ভক্তের বাড়িতে তিনি ধনবর্ষণও করেন।
আর এই মন্দির রয়েছে, বীরভূমের রামপুরহাট থানার ঘোষগ্রামে। যাকে বাসিন্দারা গ্রামের লক্ষ্মী মন্দিরের জন্য নাম দিয়েছেন লক্ষ্মীগ্রাম। শুধু গ্রামবাসীরাই বা কেন? আশপাশের সব অঞ্চলের বাসিন্দারাই এই গ্রামকে লক্ষ্মীগ্রাম নামেই ডাকেন। এই গ্রামে দেবী লক্ষ্মীই আরাধ্যা। তবে, গ্রামের কোনও বাড়িতে আর, আলাদা করে লক্ষ্মীপুজো হয় না। পুজো হয় একমাত্র গ্রামের মন্দিরেই। সন্ধ্যার পর থেকেই গ্রামবাসীরা চলে আসেন এলাকার লক্ষ্মী মন্দিরে। সেখানে প্রসাদ গ্রহণ করে উপবাস ভাঙেন।
কথিত আছে, হর্ষবর্ধনের জমানায় দেবী লক্ষ্মীর সাধনা করতে এই গ্রামে এসেছিলেন কামদেব নামে এক ব্রহ্মচারী। রাঢ়ভূমি বীরভূমের নানা জায়গা ঘুরে তিনি এসে পৌঁছেছিলেন ময়ূরেশ্বর এক নম্বর ব্লকের একচক্রধামের বীরচন্দ্রপুরে। সেখান থেকে ভরা বর্ষায় উত্তাল নদী সাঁতরে ঘোষগ্রামে প্রবেশ করেন কামদেব ব্রহ্মচারী। রাত হয়ে যাওয়ায় নিমগাছে তলায় তিনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। পরে সেই নিম গাছের তলাতেই শুরু করেছিলেন সাধনা। দীর্ঘদিন কঠোর সাধনার পর তিনি দেবী লক্ষ্মীর স্বপ্নাদেশ পান। সেই মত সেই নিমগাছের তলাতেই শুরু করেন দেবী মূর্তির আরাধনা। ব্রহ্মচারীকে এই কাজে সাহায্য করেছিলেন গ্রামেরই বাসিন্দা সজল ঘোষ।
আরও পড়ুন- বাংলার মন্দির, যেখানে চিঠি দিলেই পূরণ হয় মনস্কামনা
ক্রমে মনস্কামনা পূরণ হওয়ায় এই মন্দিরের পরিচিতি বাড়তে থাকে। দূরদূরান্তের মানুষ এই মন্দিরে ভিড় করতে থাকেন। দেবীর কাছে মনস্কামনা পূরণের জন্য যাতায়াত শুরু করেন। বিশেষ করে বৃহস্পতিবার পুজো দেওয়ার জন্য ভিড় জমে যায় মন্দির চত্বরে। কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর রাতে ৯টি ঘট ভরে এখানে নবঘটের পুজো করা হয়। দেবীকে ১০৮টি ক্ষীরের নৈবেদ্য দেওয়া হয়। ভক্তদের অনেকের দাবি, এই মন্দিরে পুজোপাঠের পর দেবী লক্ষ্মীর কৃপায় তাঁদের দারিদ্র ঘুচে গিয়েছে।