চৈত্র অবসান হল বসন্তকালের শেষ আমেজ। ব্যস্ত শহুরে জীবনযাত্রায় আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়লেও বাঙালির চলতে থাকে বারো মাসে তেরো পার্বণ। আবার এই যে এখন লকডাউনে প্রত্যেকেই নিজের নিজের বাড়িতে বন্দি, তা সত্ত্বেও উৎসবের আঁচ এতটুকু গায়ে লাগবে না তা তো হয় না। আজ সংক্রান্তি, গ্রামাঞ্চলে এখনও সংক্রান্তির দিন সকালবেলায় গ্রীষ্মের ফল ও জল দিয়ে ঠাকুরকে নিবেদন করা হয়। এইদিন ছাতু-দুধ-কলা দিয়ে মেখে খাওয়ার রেওয়াজ আছে।
আবার এই উপকরণগুলি দিয়েই বানিয়ে ফেলা যায় মুখরোচক জলখাবার। লকডাউনে সবাই যে সব সময় সব ধরনের খাবার পাচ্ছেন তা তো নয়। মোটামুটি অনেকেই হয়তো বাড়িতে ছাতু স্টক করেছেন কারণ ছাতু খুবই পুষ্টিকর, সহজলভ্য এবং দামও কম। এই দিয়েই যাতে পয়লার সকালে একটু স্পেশাল ব্রেকফাস্ট করে খাওয়াতে পারেন বাড়ির সবাইকে, তার জন্য রইল ছাতু দিয়েই ৩টি রেসিপি।
আরও পড়ুন: মিষ্টিমুখ নয়, মাস্ক মুখেই বাঙালির বর্ষবরণ
ছাতুর কচুরি
উপকরণ:
কচুরির জন্য লাগবে
ময়দা-- ১ কাপ
আটা-- ১ কাপ
ঘি-- ৪ টেবিলচামচ
কালো জিরে-- ১ চা-চামচ
নুন-- ১/২ চা-চামচ
প্রয়োজনমতো জল
হিং-- ১ চিমটি
পুরের জন্য লাগবে
ছাতু-- ২৫০ গ্রাম
নুন-- ১ চা-চামচ
চিনি-- ১ চা-চামচ
কাঁচালঙ্কা কুচি-- ২ চা-চামচ
ভাজা জিরে গুঁড়ো-- ২ চা-চামচ
শুকনো খোলায় ভাজা শুকনো লঙ্কা গুঁড়ো-- ২ চা-চামচ
লেবুর রস-- ১ টেবিলচামচ
জোয়ান-- ১ চা-চামচ
যে কোনও তেল-আচারের মশলা-- ২ চা-চামচ
ভাজবার জন্য তেল
প্রণালী: কচুরির ময়দা ভাল করে মেখে নিয়ে ৩০ মিনিট ঢেকে রাখুন। পুরের সব উপকরণ দিয়ে ছাতু ভাল করে মেখে নিন। ২-৩ টেবিলচামচ মতো জল দিয়ে একটা মণ্ড তৈরি করুন। মাখা ময়দা আবার ভাল করে ঠেসে নিয়ে ছোট ছোট লেচি কাটুন। প্রতিটা লেচির মধ্যে ছাতুর পুর ভরে দিয়ে বেলে নিন কচুরির মতো। কড়াইতে তেল গরম করুন ও একটা করে কচুরি ভাল করে ভেজে তুলে নিন। পুর ভালভাবে দেবেন নয়তো ছাতুর স্বাদ পাওয়া যাবে না। এই কচুরি খেতে দারুণ লাগে লঙ্কার আচার ও শুকনো শুকনো আলুর তরকারি দিয়ে।
ছাতু খোয়ার লাড্ডু
উপকরণ:
ছোলার ছাতু-- ২৫০ গ্রাম
গুঁড়ো চিনি-- ২০০ গ্রাম
খোয়া ক্ষীর-- ১০০ গ্রাম (গ্রেট করা)
ছোট এলাচ গুঁড়ো-- ২ চা-চামচ
পেস্তা কুচি-- ২ টেবিলচামচ
কাজুবাদাম কুচি-- ২৫ গ্রাম
কাঠবাদাম কুচি-- ২ টেবিলচামচ
প্রণালী: একটা নন স্টিক প্যানে ছাতু ও ২০০ গ্রাম ঘি দিয়ে মাঝারি আঁচে ভাল করে ভেজে নিন। যখন দেখবেন ছাতু আর ঘি ভালভাবে মিশে গিয়ে একটা পাক ধরেছে, তখন খোয়া দিয়ে আরও ২ মিনিট নাড়াচাড়া করে একটা থালায় ঢেলে দেবেন ঠান্ডা হতে। ছাতুর মিশ্রণ যখন একদম ঠান্ডা হয়ে যাবে তখন তাতে চিনি গুঁড়ো, ছোট এলাচ গুঁড়ো, বাকি ঘি ও বাদামকুচি দিয়ে ভাল করে আবার মেখে নিতে হবে। ছাতু একদম ঠান্ডা হলে চিনির গুঁড়ো দিতে হবে কারণ গরম অবস্থায় দিলে জল কাটতে পারে। এবার তৈরি মণ্ড থেকে গোল গোল পাকিয়ে নিয়ে লাড্ডু তৈরি করুন। গার্নিশ করুন পেস্তা কুচি দিয়ে। ছাতু খোয়ার লাড্ডু খেতে খুব ভাল লাগে।
ছাতুর শরবৎ
উপকরণ:
ছোলার ছাতু-- ১/২ কাপ
ঠান্ডা জল-- ২ গ্রাম
বিটনুন-- ১/২ চা-চামচ
গুঁড়ো চিনি-- ২ চা-চামচ
ভাজা জিরের গুঁড়ো-- ২ চা-চামচ
পুদিনা কুচি-- ২ টেবিলচামচ
লেবুর রস-- ১টা লেবু
বীজ বার করে নিয়ে কুচোনো কাঁচালঙ্কা-- ২ চা-চামচ
প্রণালী: প্রথমে ছাতু আর জল ভাল করে ডাল ঘুটনি দিয়ে ঘেঁটে নিন। তার পর একে একে সব উপকরণ দিন ও ভালভাবে মিশিয়ে নিন। প্রয়োজনে নুন বা চিনির মাত্রা বাড়াতে পারেন নিজস্ব স্বাদ অনুযায়ী। ভালভাবে সব মিশে গেলে বরফকুচি দিয়ে লম্বা গ্লাসে সার্ভ করুন। এই শরবত যেমন উপকারী তেমনই খেতেও ভাল। গরমকালে ছাতুর শরবত শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।