/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/08/keonjhar-11-2025-10-08-15-21-37.jpg)
Tarini Temple: তারিণী মন্দির।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/08/keonjhar-13-2025-10-08-15-21-52.jpg)
হিন্দু শক্তিপীঠ
Hindu Temple: শক্তির উৎপত্তির প্রতীক ধরা হয় প্রকৃতিকে। প্রকৃতিকে তাই সারা বিশ্বে বন্দনা করা হয় নারী রূপে — সৃষ্টির উৎস হিসেবে। ভারতীয় সংস্কৃতিতে এই শক্তি ও প্রকৃতির মেলবন্ধনকে দেখা যায় নানা দেবীরূপে। বিশেষ করে আদিবাসী সমাজে প্রকৃতি পূজা ও নারীত্বের প্রতি এই শ্রদ্ধা আরও স্পষ্ট। সেরকমই এক শক্তির দেবী হলেন মা তারিণী (Maa Tarini)।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/08/keonjhar-12-2025-10-08-15-22-45.jpg)
সবুজ জঙ্গলের কোলে
ওড়িশার কেওনঝড় জেলার ঘন সবুজ জঙ্গলের কোলে অবস্থিত ঘটগাঁও। এখানেই রয়েছে মা তারিণীর বিখ্যাত মন্দির। মন্দিরের চত্বরটি প্রশস্ত ও সুশৃঙ্খল, প্রবেশদ্বারের পাশে রয়েছে জুতো রাখার জায়গা। কিন্তু, ভিতরে মোবাইল বা ক্যামেরা নিয়ে ঢোকা নিষেধ। মন্দিরে প্রবেশ করলে চোখে পড়বে এক অনন্য দেবীমূর্তি। কোনও মানুষের আদলে নয়, বরং প্রাকৃতিক পাথরের ওপর লাল মাটি এবং সিঁদুর লেপে তৈরি এই দেবীর রূপ। শুধু দু’টি চোখ ও একটি তিলক বসানো। এই সরল অথচ শক্তিশালী উপস্থিতিতেই অনুভূত হয় দেবীর জাগ্রত শক্তি।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/08/keonjhar-11-2025-10-08-15-23-30.jpg)
তারিণী — শক্তি ও তন্ত্রসাধনার দেবী
ওড়িশা ও বাংলার তন্ত্রসাধনায় মা তারিণী গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করেন। বলা হয়, মা কালীর দুটি রূপের একটি হল 'তারা' — ধ্বংসের প্রতীক, আর অপরটি 'তারিণী' — সৃষ্টির প্রতীক। তাই মা তারিণীকে কেবল শক্তির দেবী নয়, সৃষ্টির ধারক হিসেবেও পূজা করা হয়। মায়ের প্রধান প্রসাদ নারকেল। যারা মন্দিরে পৌঁছাতে পারেন না, তারাও নারকেল পাঠিয়ে মায়ের আরাধনা করেন। বলা হয়, মা ভক্তের হৃদয়ে উপস্থিত, দূরত্ব তাঁর কাছে অর্থহীন।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/08/keonjhar-10-2025-10-08-15-23-56.jpg)
পৌরাণিক কাহিনি
রামায়ণ অনুযায়ী, রাম ও লক্ষ্মণ দেবী সীতাকে খুঁজতে গিয়ে এই অঞ্চলে পৌঁছান। তখন দেবী তারিণী স্বপ্নে রামকে দুর্গাপূজার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই থেকেই এই অঞ্চলে দেবী পূজার প্রথা শুরু হয় বলে বিশ্বাস করা হয়।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/08/keonjhar-9-2025-10-08-15-24-40.jpg)
ঐতিহাসিক কাহিনি
ইতিহাস অনুযায়ী, ১৪৭৫ সালে কলিঙ্গরাজ পুরুষোত্তম দেব দক্ষিণ ভারত সফরে গিয়ে কাঞ্চির রাজকুমারী পদ্মাবতীর প্রেমে পড়েন এবং বিবাহের প্রস্তাব দেন। পরে যুদ্ধ ও অপমানের ঘটনার মধ্য দিয়ে তিনি জগন্নাথ দেবের আশীর্বাদ পান। দেবতার স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী, কেওনঝড়ের রাজপুত্র ভঞ্জ-কে সেনাপতি নিযুক্ত করে তিনি যুদ্ধে জয়লাভ করেন। ভঞ্জ যখন পুরী আসেন, তিনি মা তারিণীকে সঙ্গে নিয়ে আসেন। কথিত আছে, ফিরে যাওয়ার সময় দেবী বলেন, 'আমি তোমার পিছু পিছু আসব, কিন্তু তুমি পিছনে ফিরে তাকিও না।' কিন্তু ভঞ্জ দেবীর অলংকারের শব্দ না পাওয়ায় ফিরে তাকান, আর তখনই দেবী সেই জায়গাতেই পাথর রূপে অবস্থান নেন। সেই স্থানই আজকের ঘটগাঁও।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/08/keonjhar-8-2025-10-08-15-25-31.jpg)
শিল্প ও স্থাপত্য
মন্দির চত্বরে আরও একটি প্রাচীন মন্দির রয়েছে যেখানে দেখা যায় অসাধারণ শিল্পকলার নিদর্শন। যেখানে রয়েছে দেবদেবী, নৃত্যরত নারী ও মৈথুনরত যুগলের ভাস্কর্য। এই শিল্পশৈলী মধ্যযুগীয় ওড়িশার মন্দির সংস্কৃতির প্রতিফলন বহন করে। ঘটগাঁওয়ের কাছের শহর কেওনঝড় (৪৭ কিমি), ভদ্রক (৮২ কিমি), ভুবনেশ্বর (১৭০ কিমি)। নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন হরিচন্দনপুর (১৭ কিমি দূরে)। যোগাযোগ- ভুবনেশ্বর, ভদ্রক, কেওনঝড় থেকে সরাসরি সড়কপথে বাস ও গাড়ি পাওয়া যায়।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/08/keonjhar-7-2025-10-08-15-25-56.jpg)
দর্শনার্থীদের জন্য কিছু পরামর্শ
মন্দিরে প্রবেশের আগে জুতো খুলে রাখুন। মোবাইল বা ক্যামেরা ভিতরে নেওয়া নিষেধ। নারকেল ভোগ হিসেবে নিবেদন করতে পারেন। মন্দির সকাল ও বিকেলে খোলা থাকে। ওড়িশার কেওনঝড়ের ঘটগাঁওয়ের মা তারিণী মন্দির (Maa Tarini Temple) কেবল একটি পূজাস্থান নয়। এটি প্রকৃতির শক্তি, সৃষ্টির প্রতীক এবং ভক্তির এক চিরন্তন প্রতিমূর্তি। দেবী তারিণীর এই রূপ মনে করিয়ে দেয় যে, প্রকৃতিই সব শক্তির উৎস এবং স্নেহের আধার।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/08/keonjhar-6-2025-10-08-15-26-35.jpg)
কলকাতা থেকে কীভাবে যাবেন?
অনেক বাঙালি পর্যটকই কলকাতা থেকে এই মন্দিরে যেতে চান, কিন্তু জানেন না সবচেয়ে সহজ রুট কোনটি? কলকাতা থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৪৫০–৪৮০ কিলোমিটার। সময় লাগে প্রায় ৯–১০ ঘণ্টা (নিজস্ব গাড়ি বা ক্যাবে)। পথ বলতে কলকাতা→ কল্যাণেশ্বর→ কলিনগর→ বালাসোর → ভদ্রক → আনন্দপুর → ঘটগাঁও (মা তারিণী মন্দির)। এই পথে NH-16 এবং NH-20 ধরে যেতে হবে। রাস্তা ভালো এবং সুন্দর গ্রামীণ দৃশ্য দেখত পাবেন। সড়কপথে গেলে বালাসোর বা ভদ্রকে লাঞ্চ ব্রেক নিতে পারেন।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/08/keonjhar-5-2025-10-08-15-27-23.jpg)
ট্রেনে কীভাবে যাবেন?
কলকাতা (Howrah Station) থেকে ভদ্রক (Bhadrak) বা হরিচন্দনপুর (Harichandanpur) পর্যন্ত ট্রেন ধরুন। অথবা Howrah → Bhadrak, প্রতিদিন বহু ট্রেন চলে (যেমন East Coast Express, Dhauli Express ইত্যাদি)। ভদ্রক স্টেশন থেকে মা তারিণী মন্দির প্রায় ৮২ কিমি দূরে। সেখান থেকে ট্যাক্সি, লোকাল বাস বা প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে যেতে পারবেন। হরিচন্দনপুর এই মন্দিরের সবচেয়ে কাছের স্টেশন। মন্দির এখান থেকে মাত্র ১৭ কিমি দূরে। তবে সরাসরি সব ট্রেন হরিচন্দনপুরে থামে না। তাই ট্রেনের টাইমিং দেখে বুক করুন।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/08/keonjhar-4-2025-10-08-15-28-05.jpg)
বাসে কীভাবে যাবেন?
বাসে কলকাতা থেকে ভদ্রক বা কেওনঝড় পর্যন্ত সরাসরি AC/Non-AC Volvo বাসও পাওয়া যায় (বিশেষ করে ধূলাগড় বা ডোমজুড় থেকে ছাড়ে)। ভদ্রক বা কেওনঝড় পৌঁছে স্থানীয় বাস বা ট্যাক্সিতে ঘটগাঁও যেতে পারবেন।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/08/keonjhar-3-2025-10-08-15-28-41.jpg)
স্থানীয় দর্শনীয় স্থান
এই সফরে ঘটগাঁও মন্দির ছাড়াও ঘুরে দেখতে পারেন কেওনঝড় রাজবাড়ি ও জাদুঘর, সানাঘাঘরা ও বাদাঘাঘরা জলপ্রপাত, গোপালপুর প্রকৃতি উদ্যান।