Advertisment

মদারাটের জাগ্রত দেবী রক্ষাকালী, হোমের কলা খেলে নিশ্চিত সন্তান লাভ, বিশ্বাস ভক্তদের

শনিবার (৮ এপ্রিল) এবছরের বাৎসরিক পুজো।

author-image
Chinmoy Bhattacharjee
New Update
madaratsritirakkhakalimandir 2

সেজে উঠেছে গোটা মন্দির চত্বর। রাত পোহালেই শনিবার জাগ্রত রক্ষাকালী দেবীর পুজো। উৎসাহে টগবগ করে ফুটছে বারুইপুরের মদারাট কালীতলা। জাগ্রত দেবীর বাৎসরিক উৎসব যেন প্রাণে জল নিয়ে আসে। কারণ, যে কোনও বিপদে-আপদে দেবী দু'হাত দিয়ে আগলান অগণিত ভক্তকে। ১৫০ বছর ধরেই এমনটা চলছে। স্থানীয় এক বৃদ্ধা স্বপ্নে এখানে দেবীর পুজোর আদেশ পেয়েছিলেন। তারপর থেকে প্রতিবছর এক নির্দিষ্ট সময়ে মদারাট নিয়ম করে দেবী রক্ষাকালীর পুজো করে চলেছে।

Advertisment
publive-image

জাগ্রত দেবীর কৃপায় মনস্কামনা পূরণ হয়েছে অগণিত ভক্তের। মানসিক পূরণের পর এই পুজোয় কেউ দণ্ডী কাটেন, কেউ বুক চিরে রক্ত দেন, কেউ দেবীকে চুল দান করেন। কেউ দান করেন পাঁঠা। কেউ আবার কাপড় দান করেন। অনেকে আবার দেন সোনার গয়নাও। প্রতিবছরই পুজোর সময় মদারাটে এলে এমন দৃশ্য দেখা যায়। ভক্তদের বিশ্বাস, যে দম্পতির সন্তান লাভ হয়নি, এই পুজোর হোমের কলা খেলে তাঁদের নিশ্চিতরূপে সন্তানলাভ হয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, সারে দুরারোগ্য ব্যাধিও। বেকারদের কর্মসংস্থান হয়। অবিবাহিতদের বিবাহ হয়। এমন আরও কত কী যে মানসিক পূরণ হয় এই মন্দিরে এলে। সরাসরি না-এলে বোঝা দায়। এমনটাই দাবি ভক্তদের। আর, এসব কারণেই প্রতিবছর অন্তত ১০ থেকে ১৫ হাজার ভক্ত সমাগম হয় এখানকার বাৎসরিক পুজোয়।

publive-image

আজ যেখানে দেবীর স্থান ঘিরে সুদৃশ্য মন্দির তৈরি হয়েছে, একটা সময় সেখানে ছিল তেঁতুল গাছ। সেখানেই খোলা জায়গায় শুরু হয়েছিল পুজো। ভক্তদের চেষ্টায় ধীরে সেখানে মন্দির গড়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়। আগের সেই পুরনো মন্দিরের বদলে ১৯৯৭ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি দেবীর স্থান ঘিরে তৈরি হয়েছে বর্তমান মন্দির। তারপরও কেটে গিয়েছে অনেকগুলো বছর। এবার নতুন মন্দির তৈরির পর পুজোর ২৫ বছর।

publive-image

এখানকার প্রথা হল পুজোর সন্ধেবেলার মধ্যে ঠাকুরের চক্ষুদান করা হয়। তারপর সোনার গয়না পরিয়ে দেবীকে শোভাযাত্রা করে নিয়ে আসা হয় মন্দিরে। রাত থাকতেই মন্দিরের দরজা বন্ধ করে, গয়না খুলে নিয়ে সূর্য ওঠার আগে হয় প্রতিমা নিরঞ্জন। পুজোর দিন এলাকার প্রতিটি বাড়িতে নিরামিষ রান্না করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের বেশিরভাগই এই পুজোয় উপোস থাকেন। পুজোর দিন এলাকার আমিষ বিক্রির দোকানপাটও বন্ধ থাকে।

আরও পড়ুন- মনস্কামনা পূরণে সিদ্ধহস্ত জাগ্রত দেবী মুক্তকেশী, ভক্তরা বলেন দেবী ভবতারিণীর বোন

এবার এই পুজোয় বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ছ'দিন ধরে চলছে উৎসব। প্রথম দিন সোমবার হয়েছে কীর্তন। মঙ্গলবার ছিল বসে আঁকো, নাচ-গান-আবৃত্তি প্রতিযোগিতা। বুধবার সন্ধ্যায় বসেছিল বাউল সংগীতের আসর। বৃহস্পতিবার বাংলা ও মুম্বইয়ের বিশিষ্ট শিল্পীদের নিয়ে বিচিত্রানুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে। আজ (শুক্রবার) সন্ধ্যায় রয়েছে আতসবাজি প্রদর্শনী। শনিবার পুজোর পর রবিবার প্রসাদ বিতরণ হবে ভক্তদের মধ্যে। এখানে বাৎসরিক পুজোয় ভোগের হাঁড়ির সংখ্যাই থাকে অন্ততপক্ষে ২,৫০০।

publive-image

তবে এতকিছুর আয়োজন থাকলেও এবারও এই পুজোয় প্রতিবারের মতই স্থানীয় বিক্রেতাদের থেকে কোনও অর্থসাহায্য নেওয়া হয়নি। এখানে পুজো দিতে গেলে যোগাযোগ করতে পারেন পুজো কমিটির সম্পাদক মোহন মারিক (পুকাই)-এর সঙ্গে (৮২৪০৪২১০২২)। ফোন পে নম্বরে দক্ষিণা দিয়েও এখানে পুজো দেওয়া যায়। অথবা সরাসরি পুজোর সামগ্রী নিয়ে মন্দিরে গিয়েও দেওয়া যায় পুজো। কীভাবে যাবেন এই মন্দিরে? শিয়ালদহ স্টেশনের দক্ষিণ শাখা থেকে ট্রেনে চেপে যেতে হবে বারুইপুর। সেখানে ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মের কাছেই অটোওয়ালাকে বলবেন মদারাট কালীতলার রক্ষাকালী মন্দিরে যাব। পুজোর সন্ধ্যায় অবশ্য ভিড়ের কারণে ৬টার পর থেকে অটো চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তাই গেলে, আগে যেতে হবে।

Kali Puja Kali Temple pujo
Advertisment