Advertisment

পেঙ্গুইন দেখা নয়, দেশের প্রতিনিধিত্ব করাটা বড় ব্যাপার: মাধবীলতা

শুটিংয়ের ফাঁকেই ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সামনে খোলামেলা মেজাজে পাওয়া গেল মাধবীলতাকে। শুধু আসন্ন অভিযান নিয়েই কথা বললেন না, শেয়ার করলেন নিজের ভাললাগা থেকে মন্দলাগা। জীবনদর্শন নিয়েও অকপট মাধবীলতা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Madhabilota Interview Express Photo Shashi Ghosh

পেঙ্গুইন বা স্লেজ দর্শন নয়, দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করাটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার: মাধবীলতা (ছবি: শশী ঘোষ)

মাধবীলতা মিত্র, মডেলিং ইন্ডাস্ট্রিতে নামটা আজ প্রতিষ্ঠানের মতো। ২০০৬ সালে সানন্দা তিলোত্তমা হওয়ার পর থেকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয় নি তাঁকে। ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ থেকে শহরের বিরাট বিরাট হোর্ডিং, স্বচ্ছন্দে বিরাজ করেন এই বঙ্গললনা।

Advertisment

মডেল মাধবীলতার আরও একটা পরিচয় রয়েছে। যেটা অনেকেরই এখনও অজানা। তিনি একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পর্বতারোহী। রক ক্লাইম্বিং এবং বেসিক মাউন্টেনিয়ারিংটা শিখেছেন রীতিমতো। হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউে অতিথি প্রশিক্ষকের দায়িত্বও সামলেছেন মাধবীলতা। সম্প্রতি আবার রেসকিউয়ের কোর্স করেছেন তিনি। স্বামী ভূপেশ গুপ্তাকে নিয়ে মাধবীলতা করেছেন ট্রাভেল কোম্পানিও। সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়েন ট্রেকিংয়েও। মাধবীলতার সামনে এখন বিরাট চ্যালেঞ্জ। আসন্ন শীতের মরসুমে বরফ সাম্রাজ্যে পা রাখতে চলেছেন তিনি। যাচ্ছেন আন্টার্কটিকায়। মিশন দক্ষিণ মেরু।

আরও পড়ুন: ব্রিটেনের বিশ্বজয়ীর নেতৃত্বে বরফ সাম্রাজ্য অভিযানে দুই ভারতীয় কন্যা

বিশ্বের শীতলতম ও শুষ্কতম মহাদেশে মাধবীলতা ছাড়াও যাচ্ছেন আরও পাঁচ মহিলা। তৈরি হয়েছে টিম ‘পোলার মেডেনস’। থাকছেন জ্যানিস মিক, এলিন ক্রিন, ক্যারোলাইন জেরার্টস, ডেনিস মার্টিন ও তনভি বুচ। এই দলের ক্যাপ্টেন জ্যানিস নিজে চারবারের বিশ্বরেকর্ডধারী। দু’বার উত্তর মেরু অভিযান (ম্যাগনেটিক ২০০৭, জিওগ্রাফিক ২০০৮) সেরে এসেছেন বছর ৭৪-এর ‘তরুণী’। ভারত থেকে মাধবীলতা ছাড়াও রয়েছেন মুম্বইয়ের বছর ২৪-এর তনভি।

জ্যানিস নিজের ‘অল উইমেন সাউথ পোল এক্সপেডিশনে’র জন্য দলগঠন করছিলেন। তিনিই অনলাইনে ইন্টারভিউ নিয়ে বেছে নেন মাধবীলতাকে। বৃহস্পতিবারের বৃষ্টিভেজা দুপুরে মাধবী শুটিং করছিলেন ভিআইপি-র এক স্টুডিওতে। শুটিংয়ের ফাঁকেই ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সামনে খোলামেলা মেজাজে পাওয়া গেল মাধবীলতাকে। শুধু আসন্ন অভিযান নিয়েই কথা বললেন না, শেয়ার করলেন নিজের ভাললাগা থেকে মন্দলাগা। জীবনদর্শন নিয়েও অকপট তিনি।

মেরু অভিযানের শুরুর গল্পটা যদি বলেন...

মাধবীলতা: কোল ইভেন্ট আমাকে ফোন করেছিল। অঙ্কিতা মিত্রর মাধ্যমে রাজীব দালালের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। এরপর জ্যানিস মিক আমাকে অলনলাইন ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে বেছে নেন।

এই সুযোগটাকে কেমন ভাবে দেখছেন?

মাধবীলতা: এটা আমার কাছে একইসঙ্গে লাইফ চেঞ্জিং ও লাইফ চ্যালেঞ্জিং। মনে হচ্ছে সাক্ষাৎ ভগবান সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন। যদি বেঁচে ফিরি তাহলে লাইফ চেঞ্জিং। আর না-পারলেও লাইফ চ্যালেঞ্জিং।

মডেলিংয়ের সঙ্গে অ্যাডভেঞ্চারে যোগসূত্রটা কোথায়?

মাধবীলতা: আমাদের পেশাটাও অ্যাডভেঞ্চারই। এখানে কোনও স্থিতিশীলতা নেই। আর যেটাই স্থিতিশীল নয়, সেটাই অ্যাডভেঞ্চার। কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে এসে কোনও কিছু করাটাই চ্যালেঞ্জিং। আর কঠিন পরিস্থিতিই আপনাকে প্রকৃত শক্তিশালী করে তোলে।

কবে থেকে আপনার এই ট্রেকিংয়ের নেশা?

মাধবীলতা: আমার বয়স তখন ১২। ক্লাস সেভেনে পড়ি। এনসিসি-র ক্যাডেট ছিলাম আমি। সেই প্রথম বাড়ির সুখ স্বাচ্ছন্দ্য ছেড়ে গিয়েছিলাম নীলগিরির দোতাবেতাতে। আর এর সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব অামার মায়ের। হাত ধরে আমাকে শিয়ালদহতে নিয়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেসে তুলে দিয়ে এসেছিলেন। খুব কম মা এরকম সাহস দেখাতে পারবেন।

Madhabilata Mitra ট্রেকিংয়ে মাধবীলতা (ছবি: ফেসুবক/মাধবীলতা মিত্র)

দোতাবেতা আর নীলগিরি কী শিখিয়েছিল ছোট্ট মাধবীলতাকে ?

মাধবীলতা: নিজে নিজের ব্যাগ গোছানো থেকে, জামাকাপড় কাচা, থালা বাসন ধোওয়া। সবটা, তখন নেশা বা পেশা বুঝতাম না। জানতাম কোনটা ভাললাগে, কোনটা লাগে না। ওখান থেকেই শুরু। অনেকটা ম্যাচিওর্ড করে দিয়েছিল।

বাঙালিদের জীবনে ‘চাঁদের পাহাড়’-এর একটা ভূমিকা থাকে। আপনার ক্ষেত্রেও কি সেরকম হয়েছিল?

মাধবীলতা: অবশ্যই। কতবার যে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'চাঁদের পাহাড়' পড়েছি, তা গুনে বলতে পারব না। আফ্রিকা দেখব, কিলিমাঞ্জারো, সোনার খনি। এসবই ঘুরত মাথার মধ্যে। এবছরই ভেবেছিলাম ভূপেশের সঙ্গে কিলিমাঞ্জারোতে যাব। কিন্তু তখনই মেরু অভিযানের প্রস্তাবটা এল। তখন ভূপেশই বলে মহিলা শঙ্কর পরে আবার হতে পারবে। এই সুযোগ বারবার আসবে না।

টিমের ক্যাপ্টেন জ্যানিস মিক কীভাবে অনুপ্রাণিত করেছেন আপনাকে?

মাধবীলতা: সত্যি বলতে, আমাদের পরিবারে ৭৪ বছরের কোনও সদস্যর কথা একবার ভাবুন। হাঁটুর ব্যাথা বা অনান্য সমস্যার জন্য তাঁরা নড়ে রান্নাঘর পর্যন্ত যেতে পারেন না। সেখানে জ্যানিস ৭৪ বছরেও এরকম ফিট। কী মনের জোর! অসম্ভব একটা এনার্জি। অভাবনীয়। আমি যখন ওঁর বয়সে পৌঁছব, আমিও যেন জ্যানিসের মতো হতে পারি। এটাই চাইব।

স্লেজ গাড়ি, পেঙ্গুইনের দেশ দেখা ছাড়া আর কোন ফ্যাক্টরটা আপনাকে আকৃষ্ট করছে?

মাধবীলতা: সবাই বলছে, আমি পেঙ্গুইন দেখব, স্লেজ গাড়ি চড়ব। সবই ঠিক আছে। কিন্তু এটা মাথায় রাখতে হবে যে, আমি দেশের পতাকা বহন করব আন্টার্কটিকায়। ১৩৫ কোটি দেশবাসীর প্রতিনিধিত্ব করব। এটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার। দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে যাচ্ছি। এই গুরুদায়িত্ব বিরাট আমার কাছে।

Madhabilata Mitra কথার ফাঁকে মাধবীলতা (ছবি: শশী ঘোষ)

আপনার ইন্ডাস্ট্রির মানুষজনের প্রতিক্রিয়া কী পেয়েছেন?

মাধবীলতা: দেখুন যারা আমায় ভালবাসেন বলে জানি, বা যাঁদের আমি ভালবাসি, তাঁদের শুভেচ্ছায় ভরে গিয়েছি। সবার কাছে তো একজন ভাল হতে পারে না। তাই সবারটা বলতে পারব না। যা পেয়েছি তা অনেক।

বাকিদের অনুপ্রাণিত করতে কী বার্তা দেবেন?

মাধবীলতা: একটা কথাই বলব, নির্ভীক পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা কেউ জানি না কাল কী হতে চলেছে! সুতরাং মনের ভয় দূরে সরিয়ে এগিয়ে যেতে হবেই। সমগ্র মানবজাতি তবেই এগিয়ে যেতে পারবে।

আরেক বাঙালি মহিলা সুদীপ্তা সেনগুপ্তও পা রেখেছিলেন আন্টার্কটিকায়। ওঁর সঙ্গে কথা হয়েছে?

মাধবীলতা: আমি তখন অনেকটা ছোট, এখনও মনে আছে মা’র কথাগুলো। মা বলত তোমাকে সুদীপ্তার মতো হতে হবে। আমি চাইব ওঁর সঙ্গে দেখা করে কথা বলে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে। ওঁর থেকে টিপস নিয়েই আন্টার্কটিকায় যেতে চাই।

kolkata news Antarctica expedition south pole
Advertisment