ম্যাগি নিয়ে উদ্বিগ্ন দেশ, বিক্রি কমল কলকাতায়

ম্যাগি নুডলসে মাত্রাতিরিক্ত সীসা থাকার অভিযোগে দেশের খাদ্য সুরক্ষা নিয়ামক সংস্থা ফুড সেফটি ‌অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া ২০১৫ সালের জুন মাসে ম্যাগি নুডলস বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

ম্যাগি নুডলসে মাত্রাতিরিক্ত সীসা থাকার অভিযোগে দেশের খাদ্য সুরক্ষা নিয়ামক সংস্থা ফুড সেফটি ‌অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া ২০১৫ সালের জুন মাসে ম্যাগি নুডলস বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

২০১৫ সালে নেসলে ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা ক্ষতিপূরণের মামলায় ন্যাশনাল কনজ্যুমার ডিসপিউটস রিডরেসাল কমিশনকে (এনসিডিআরসি) এগিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিল সুপ্রিম কোর্ট। নেসলের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ, তাদের তৈরি ম্যাগি নুডলসের গুণগত মান সম্পর্কে ক্রেতাদের ইচ্ছাকৃত বিভ্রান্ত করেছে তারা। বিচারক ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এবং হেমন্ত গুপ্তার একটি বেঞ্চ এনসিডিআরসি-কে নির্দেশ দিয়েছে যাতে মাইসোরের সেন্ট্রাল ফুড টেকনোলজিক্যাল রিসার্চ ইন্সটিটিউট (সিটিসিআরআই) দ্বারা পরীক্ষিত নমুনার রিপোর্টের ভিত্তিতেই বিষয়টির নিষ্পত্তি করা হয়। এই নির্দেশের মূলে রয়েছে এনসিডিআরসি-র নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে দাখিল করা নেসলের আবেদন, কারণ সিটিসিআরআই-এর পরীক্ষার পরও এনসিডিআরসি নেসলেকে আদেশ দিয়েছিল, যাতে নমুনাগুলি চেন্নাই এবং মুম্বইয়ের ল্যাবেও পাঠানো হয়।

Advertisment

সিটিসিআরআই ২০১৬ সালে ২৯ টি ম্যাগির নমুনা পরীক্ষা করে দেখেছিল, ম্যাগিতে কিছু পরিমাণ সীসা রয়েছে, তবে তা অনুমোদিত সীমার মধ্যে। নেসলে ইন্ডিয়া এই রিপোর্টকে স্বাগত জানিয়েছে, তবে সুপ্রিম কোর্টের রায় না বেরোলে এখনও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে সংস্থা। ইতিমধ্যে ম্যাগি খেলে মারণ রোগ হতে পারে, সেই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে নাগরিকদের মধ্যে।

নীলরতন সরকার হাসপাতালের হেমাটোলজিস্ট ডাঃ রাজীব দে বলেন, "অতিরিক্ত সীসা শরীরে গেলে 'লেড টক্সিসিটি' দেখা দেয়, যার ফলে রক্তাল্পতা  এবং অ্যানিমিয়া হতে পারে। একইসঙ্গে স্নায়ুরোগ দেখা দিতে পারে। বলা হচ্ছে ম্যাগি নুডলসে মাত্রাতিরিক্ত সীসা নেই। তবে এখন অবধি উল্লেখ করা হয়নি, সীসার পরিমান কত।" তিনি আরও বলেন, "খাবারের মধ্যে আদৌ সীসা থাকার কথা নয়, যেকোনো খাদ্যে সীসার পরিমাণ অবশ্যই শূন্য হওয়া উচিত। কারণ সিসা একটি ভারী ধাতু।"

আরও পড়ুন: দু’হাজার টাকার নোট ছাপার হার কমাচ্ছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক

Advertisment

ম্যাগি নুডলসে মাত্রাতিরিক্ত সীসা থাকার অভিযোগে দেশের খাদ্য সুরক্ষা নিয়ামক সংস্থা ফুড সেফটি ‌অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া ২০১৫ সালের জুন মাসে ম্যাগি নুডলস বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কাজেই ম্যাগি নুডলস বাজার থেকে তুলে নিতে বাধ্য হয় নেসলে। তারপর ২০১৬ সালে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে কেন্দ্রীয় সরকারের দায়ের করা মামলার শুনানির উপর স্থগিতাদেশ জারি করা হয়।

কলকাতার বৌবাজার অঞ্চলের দোকানদার স্বপ্নদীপ বসু (৩৮) বলেন, "ইদানীং বাজার খারাপ ম্যাগির। টপ র‍্যামেন ও য়িপপির দিকে ঝুঁকেছেন ক্রেতারা। সুপ্রিম কোর্টে আবার মামলা হওয়ার  আগেই আঁচ পেয়েছিলাম, কারণ বেশ কয়েক সপ্তাহ হয়ে গেছে ম্যাগি আসে নি দোকানে।" অন্যদিকে ব্যবসায়ী জ্ঞানেন্দ্র বর্ধন (৭০) বলেন, "গোটা মাসের ম্যাগি একেবারে তুলে রাখি, কারণ হামেশাই বন্ধ হয়ে যায়, ২০১৫ সালে ম্যাগি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর দামও বেড়ে যায়। যার ফলে ম্যাগি বিক্রিতে একটু হলেও ধাক্কা লেগেছে।"

আরও পড়ুন: বিদ্যুতের বকেয়া বিল ৫৩ লক্ষ, নতুন বছরেও দোকান পেলেন না দক্ষিণেশ্বরের ব্যবসায়ীরা

অন্যদিকে ম্যাগি অন্ত প্রাণ নতুন প্রজন্মের। দু মিনিটে রান্না করে ফেলার সুবিধা ছাড়তে চান না তাঁরা। যে কারণে তাঁদের একাংশে মনে করেন, "পুরো ব্যাপারটাই ম্যাগির জনপ্রিয়তা কমাতে প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থার চাল। দু মিনিটের তৈরি হওয়া নুডলস যে ভাল না তা আমরা সবাই জানি, তবে সেই একই দোষে দোষী বাকি সংস্থারাও। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে একইভাবে তৈরি হয়ে থাকে এই ধরণের নুডলস।" তাহলে কাঠগড়ায় কেন শুধু ম্যাগি? তাঁদের বক্তব্য, "আজিনোমোতো থাকে ম্যাগির মশলায়, যা একেবারেই শরীরের পক্ষে ভালো নয়। বাকি সংস্থার প্রডোক্ট নিয়ে কারোর মাথাব্যথা নেই কারণ ম্যাগির জনপ্রিয়তা অন্যদের থেকে বেশি।"

পুণেতে চাকুরিরতা অন্তরা চক্রবর্তী বলেন, "আমার কাছে ম্যাগির প্রয়োজনীয়তা অসীম। বাবা মায়ের থেকে দূরে থাকি, রান্না করার সময় হয় না, হোস্টেলে জীবন কাটাই, সেক্ষেত্রে ম্যাগিই একমাত্র ভরসা। আমার মতো অনেকেই এখানে রয়েছে, যাদেরও দেখি অধিকাংশ ক্ষেত্রে ম্যাগি খেয়েই দিন কাটে।"

বেলুড় হাই স্কুলের শিক্ষিকা বিচিত্রা বাগচী বলেন, "ম্যাগিতে সত্যিই সীসা থাকলে তা খাওয়ার প্রয়োজন নেই। এমনিতেও পুষ্টিকর একেবারেই নয়। কোনোরকম তাৎক্ষনিক খাবারই যে তা হয় না, সে তো বিলক্ষণ জানা। যে কোনো খাবার বানাতে গেলে আদৌ সীসার প্রয়োজন পড়বে কেন? ম্যাগি বানানোর উপকরণ যদি বদলে ফেলা যায়, সেটাই মঙ্গল।"

supreme court