মহাপীঠ তারাপীঠ। বাংলার অন্যতম সাধন ক্ষেত্র। যার টানে হাজার হাজার ভক্ত প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে এই মন্দিরে ছুটে আসেন। রাঢ় বাংলার অন্যান্য সাধনভূমির চেয়ে তারাপীঠের আকর্ষণ বাঙালির কাছে বরাবরই বেশি। ভক্তদের বিশ্বাস এই মন্দির অত্যন্ত জাগ্রত। সতীপীঠ না-হলেও ভক্তকূলের কাছে সতীপীঠের মর্যাদাই পায় তারাপীঠ। যেখানে দেবী উগ্রতারা শিলারূপে অধিষ্ঠিতা।
কথিত আছে মহামুনি বশিষ্ঠ এই তারাপীঠেই সাধনা করেছিলেন। দ্বারকা নদীর পূর্ব দিকের শ্মশানে পঞ্চমুণ্ডির আসনে বসে তিনি তপস্যা করেছিলেন। হয়েছিলেন সিদ্ধ। সেই পঞ্চমুণ্ডির আসনে বসেই কালে কালে সিদ্ধ হয়েছেন একের পর এক সাধক। ভক্তকূল পেয়েছে বামাক্ষ্যাপার মত সিদ্ধপুরুষকেও।
আটচালা গৌড়ীয় স্থাপত্যে তৈরি তারাপীঠের আটচালা মন্দিরটি উত্তরমুখী, লাল ইটে নির্মিত। মন্দিরের উপরের অংশে উঠেছে একাধিক ধনুকের আকৃতির খিলান। আর, ভিতরের দেওয়ালটা বেশ মোটা। মন্দিরের প্রবেশপথে খিলানের ওপর রয়েছে দুর্গার প্রতিকৃতি। এছাড়াও আছে ভীষ্মের শরশয্যা, কৃষ্ণলীলা, সীতাহরণ, অকালবোধন, রাম-রাবণের যুদ্ধের মত মহাভারত ও রামায়ণের বিভিন্ন দৃশ্য। তারই মধ্যে ১২ বাই ৬ ফুটের গর্ভগৃহে রয়েছে দেবী তারার মূর্তি।
আরও পড়ুন- বছরভর ভক্তদের ভিড়ে পরিপূর্ণ মন্দির, কিন্তু অনেকেই যে বিষয়গুলোর খোঁজও নেন না
যেখানে দেবী ভীষণা, চতুর্ভুজা, মুণ্ডমালাধারিণী। তাঁর জিহ্বা বের করা রয়েছে। মাথায় রুপোর মুকুট। দেবীর পরনে থাকে শাড়ি। সঙ্গে জড়ানো থাকে ফুলের মালা। মূর্তির মাথায় রয়েছে রুপোর ছাতা। কপালে সিঁদুর। সেই সিঁদুরই ভক্তদের পরিয়ে দেন পান্ডারা। বিগ্রহের নীচে আছে দুটি রুপোর পা। ভক্তরা দেবীকে নারকেল, কলা, শাড়ি দিয়ে পুজো দেন।
এখানে শিবকে চন্দ্রচূড় রূপে পুজো করা হয়। তারাপীঠের মন্দিরের লাগোয়া জীবিতকুণ্ড নামে এক জলাশয় রয়েছে। ভক্তদের বিশ্বাস, জীবিতকুণ্ডের জলে আরোগ্যক্ষমতা রয়েছে। প্রতিবছর আশ্বিন মাসে কোজাগরী শুক্লা চতুর্দশীতে মন্দির থেকে দেবী তারার শিলামূর্তি পশ্চিমের দিকে মুখ করে বিরাম মঞ্চে রাখা হয়। প্রকাশ্যেই সেদিন দেবীকে স্নান করানো হয়। এর কাছাকাছিই রয়েছে তারাপীঠ মহাশ্মশান। অনেক সাধু সেই শ্মশানে পাকাপাকিভাবে বাস করেন।