দুর্গাপূজার মহাসপ্তমীর সকালে প্রথম এবং প্রধান কাজ হল নবপত্রিকা প্রতিষ্ঠা। স্থানীয় ভাষায় যাকে বলে কলাবউ-এর স্নান। 'নবপত্রিকা হল নয়টি পাতা। অর্থাৎ, নয়টি গাছ বা নয়টি উদ্ভিদ। অনেকে বলেন, তিনি গণেশের স্ত্রী। কিন্তু, তা মোটেও সত্যি নয়। তিনি আসলে ভগবতী দুর্গা। নদী-পুষ্করিণীর বাংলায় উদ্ভিদ দিয়ে তৈরি করা হয় ভগবতী দুর্গার অবয়ব। তিনি এই কলাবউ। এই সব উদ্ভিদগুলো সাধারণ ভাবে মানুষ খেয়ে থাকেন। সেগুলোকেই পুজো করা হয়। যা হল, শস্য পুজো। আর, এর মাধ্যমেই যেন দেবী দুর্গা আক্ষরিক অর্থে অন্নপূর্ণ হয়ে ওঠেন। তিনি শুধু অন্ন বা ভাতই নন। তিনি অন্নের সঙ্গে অন্যান্য ফসলেরও দেবী।
Advertisment
নবপত্রিকায় যা থাকে নবপত্রিকার প্রধান হল কলাগাছ। তার সঙ্গে থাকে কচু, মানকচু, বেল, ডালিম, জয়ন্তী এবং অশোক গাছ, হলুদ আর অবশ্যই ধান। এইগুলো নিয়েই তৈরি হয় নবপত্রিকা। এই কলাবউ পুরোপুরি বাঙালির ধারণা থেকে তৈরি। হিন্দিবলয়ে যে নবরাত্রি উৎসব চলছে, সেখানে কিন্তু কলাবউয়ের কোনও অস্তিত্ব নেই। নবপত্রিকায় কলাগাছের সঙ্গে এই সব বিভিন্ন উদ্ভিদকে শ্বেত অপরাজিতার লতা এবং নয়টি গাছা হলুদ সুতো দিয়ে জড়িয়ে রাখা হয়। পরানো থাকে লালপেড়ে শাড়ি আর টিপ। যেন কোনও বাংলার বধূ।
কলাবউ আরাধনা বাঙালিকেন্দ্রিক বাঙালি বরাবরই নারীর আরাধনায় বিশেষ জোর দিয়ে এসেছে। হিন্দু বাঙালির বেশিরভাগ জনপ্রিয় পুজো নারীকেন্দ্রিক। কার্তিকের মত পুরুষ যুদ্ধের দেবতার পুজো এখান দু'এক জায়গায় জনপ্রিয় হলেও সব জায়গায় তেমন জনপ্রিয়তা লাভ করেনি। পাশাপাশি, বাঙালির সংসারও নারীকেন্দ্রিক। যেখানে ঘরের বধূরাই গোটা পরিবারকে সামলান। তিনি যে শস্যও সামলান, সেটাই যেন উঠে এসেছে কলাবউয়ের আরাধনার মধ্যে দিয়ে। এমনটাই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বাঙালির স্বাস্থ্যভাবনা এই কলাবউয়ের প্রতিটি উদ্ভিদের আবার আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। যার মধ্যে কলাগাছ হল উর্বরতার প্রতীক। কচু শরীরে রক্ত পরিষ্কার করে। মানকচুও একইরকম কাজ করে পাশাপাশি সুস্বাদু। বেল খেলে পেট পরিষ্কার থাকে। ডালিমে রক্ত বাড়ে। অশোক আর জয়ন্তীর ব্যবহারে বহু রোগ সারে বলেই দাবি করেন আয়ুর্বেদের চিকিৎসকরা। হলুদ শরীরে রোগ প্রতিরোধ করে থাকে বলেই আয়ুর্বেদের দাবি। যার ফলে কলাবউয়ের আরাধনার মাধ্যমে বাঙালির স্বাস্থ্য ভাবনাও উঠে এসেছে বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।