পুরাণে কথিত আছে, সারাবছর নাকি এই মন্দির/ আশ্রম সাগরের নিচেই অবস্থান করত। এইসময় অর্থাৎ মকর সংক্রান্তিতে মানুষের পূণ্য অর্জনের কারণেই নাকি কপিল মুনির এই আশ্রম উঠে আসত গঙ্গার উপরে। একটু বয়স্ক মানুষের মুখে এই কাহিনী শুনে থাকবেন অনেকেই। তবে এর সত্যতা নিয়ে রয়েছে অনেক ধোঁয়াশা। সব তীর্থ বারবার, গঙ্গাসাগর একবার! - সারাজীবনে একবার হলেও গঙ্গাসাগর পৌঁছানো সকলের কাছেই বেশ ভাগ্যের ব্যাপার।
এর পেছনে রয়েছে এক নিদারুণ ইতিহাস! শুনলে গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতো। মা গঙ্গা ভগীরথের শঙ্খধ্বনি অনুসরণ করেই ভগবান মহাদেবের জটা হতে নেমেছিলেন মর্তে। কথিত রয়েছে ভগীরথ যেমন পথ ধরে হেঁটেছিলেন মা গঙ্গাও প্রবাহিত সেই পথেই! কিন্তু এর আড়ালের ইতিহাস সত্যি চমকে দেওয়ার মতো। হঠাৎ কেনই বা মা গঙ্গাকে মর্ত্যে আমন্ত্রণ জানিয়ে এনেছিলেন ভগীরথ?
পুরাণের পাতা বলছে, অযোধ্যার ইক্ষাকু বংশের রাজা সাগরের অশ্বমেধ যজ্ঞের ঘোড়া চুরি করেন স্বয়ং দেবরাজ ইন্দ্র! এবং তিনিই কারসাজি করেই কপিল মুনির আশ্রমের পেছনেই লুকিয়ে রেখেছিলেন ঘোড়াগুলি। কপিল মুনি ভগবান শ্রী বিষ্ণুর অবতার হিসেবেই বিবেচিত হন মর্তে। যথারীতি খোঁজ না পেতেই রাজা সাগর তার ৬০,০০০ ছেলেকে পাঠান তাদেরকে খুঁজে বের করতে। হদিশ মেলে কপিল মুনির আশ্রম থেকেই। রাজা সাগরের ছেলেরা কপিল মুনিকে চোর হিসেবে ইঙ্গিত করতেই রাগে ক্ষোভে মুনিবর তাদের ছাইয়ে রূপান্তরিত করেন এবং আত্মাকে নরকে পাঠিয়ে দেন।
সন্তানদের ফিরে পেতেই রাজা সাগরের নাতি ভগীরথ দিনরাত এক করেই ভগবান শিবের আরাধনা করেন। ব্যক্ত করেন নিজের মনের কথা। এবং কপিল মুনির নির্দেশ মতই শঙ্খ বাজিয়ে মা গঙ্গাকে এই ধরিত্রীর বুকে নিয়ে আসেন তিনি। যেই দিন মহাদেবের জটা হতে মা গঙ্গা সাগরে মিলিত হন, সেইদিন ছিল মকর সংক্রান্তি, স্থানটি ছিল কপিল মুনির আশ্রম। আজও মানুষের মনে এমনও বিশ্বাস এই পুণ্যদিনে গঙ্গা এবং সাগরের সঙ্গমে স্নান করলেই নাকি সমস্ত খারাপ থেকে মুক্তি মেলে।
মকর সংক্রান্তি অর্থাৎ সূর্যদেবের মকর রাশিতে অধিষ্ঠান। স্নান সেরে ভেজা কাপড়েই দান, ধ্যান এবং সূর্যপ্রণাম আসল নীয়মের মধ্যে পড়ে। এদিন শুধু গঙ্গাসাগর নয়- প্রয়াগ রাজে কুম্ভ, অর্থাৎ গঙ্গা যমুনা এবং সরস্বতীর মিলিত সঙ্গম, তথা জগন্নাথের দরবারে পুরীর সমুদ্রে স্নান করলেও পূণ্য বলেই ধরা হয়।
করোনা বিধি মানতেই এবছর তৎপর প্রশাসন। সাধুদের এবং পুন্যারথিদের টেস্ট করেই অনুমতি দেওয়া হয়েছে। মন্দিরেও থাকছে নানান বিধিনিষেধ। একেকবারে ধুকতে দেওয়া হচ্ছে ৫০ জন। মাস্ক ছাড়া আশ্রম চত্বরে ঘুরে বেড়ানো নিষেধ, তারপরেও ফাঁক থাকছে স্বাস্থ্য বিধিতে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন