বীরভূম জেলার মল্লারপুরে অবস্থিত মল্লারপুর বা সিদ্ধেশ্বর শিবমন্দির। এখানে বিরাজ করছে গুপ্ত অনাদি অখণ্ড শিবলিঙ্গ। প্রায় ৯৩০ বছর আগে ১২০২ খ্রিস্টাব্দে মল্লারপুরের রাজা ছিলেন মল্লেশ্বর। তিনি এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মন্দিরের গায়ে খোদিত আছে, এই মল্লেশ্বর শিবই নাকি আসলে ঋষি। তিনি তারাপীঠের দেবী তারার ভৈরব।
এখানকার শিবলিঙ্গ গুপ্ত। আর, তার ওপরে রয়েছে ওঁ চিহ্ন। মল্লেশ্বর শিবমন্দিরের পাশের মন্দিরেই রয়েছেন দেবী মল্লেশ্বরী বা সিদ্ধেশ্বরী। এই মল্লেশ্বর শিব মন্দিরের পিছনে তান্ত্রিকাচার্য শ্রীকৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের জীবন্ত সমাধি বা ইচ্ছাসমাধির বেদী রয়েছে। এই কৃষ্ণানন্দই ছিলেন কালীসাধক রামপ্রসাদের গুরুদেব।
আধ্যাত্মিকতার দেশ বীরভূম। যা আসলে ঈশ্বরের লীলাভূমি। কথিত আছে, মহাভারতের পাণ্ডবজননী কুন্তী এখানেই মহাদেবের পূজা করেছেন। মহালিঙ্গেশ্বর তন্ত্র, যেখানে স্বয়ম্ভূ শিবমন্দিরের তালিকা আছে, সেখানেও সিদ্ধিনাথ নামে এখানকার ওঁ আকৃতির মহাদেবের উল্লেখ আছে। এই মন্দির এমন এক তীর্থ, যেখানে পুরাণ ও ইতিহাস মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে।
এই মন্দির চত্বরে রয়েছে চারচালা রীতি মেনে স্থাপিত আরও কিছু মন্দির। এই মন্দিরের কারুকাজ এবং সৌন্দর্য, বীরভূমের অন্যান্য শিবমন্দিরে বিরল। ভক্তদের বিশ্বাস এখানকার শিবলিঙ্গে সাধকদের সাধনার মাধ্যমে ওঁ চিহ্ন তৈরি হয়েছে। যে চিহ্নে রয়েছে মহাদেবের তিন নয়নও।
আরও পড়ুন- ভক্তদের ভরসা ৪০০ বছরের মন্দিরের জাগ্রত দেবতা ও রহস্যময় বেলগাছ
এই মন্দির তৈরির পর থেকে সেবাইতরা বংশ পরস্পরায় এখানে পুজো করে আসছেন। অন্যান্য শিবলিঙ্গ মাটির ওপরে থাকে। এখানে শিবলিঙ্গের বেশিটাই রয়েছে মাটির নীচে। তাই একে গুপ্ত শিবলিঙ্গ বলা হয়। ভক্তদের দাবি, এখানে শিবকে মাটি খুঁড়ে পাওয়া গিয়েছে। শিবলিঙ্গ আলাদা করে এনে প্রতিষ্ঠা করা হয়নি।
ভক্তদের দাবি, এখানকার শিবলিঙ্গকে ঘিরে যে জল, তা আসলে গঙ্গা। তা শিবের জটাজালে বিরাজ করছে বলেই দাবি ভক্তদের। শুধু তাই নয়, তাঁদের দাবি, এই শিবলিঙ্গকে ঘিরে থাকা জলের তলায় রয়েছে চন্দ্রবোড়া সাপ। আর, সেই জন্যই শিবলিঙ্গকে ঘিরে থাকা জলের মধ্যে মাঝেমধ্যে বুদবুদ ওঠে।