মহাঘাট মহাপীঠ। অনেকে বলেন মরাগ্রাম কালীবাড়ি। কাটোয়া থেকে বাসে কেতুগ্রাম বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে টোটোয় চেপে যাওয়া যাবে মরাগ্রাম মহাপীঠে। পীঠনির্ণয় তন্ত্রমতে এখানে দেবী সতীর বাম বাহু পড়েছিল। শাস্ত্রে আছে, 'বহুলায়াং বামবাহু বহুলাখ্যাচ দেবতা, ভীরুকঃ ভৈরবস্তোত্র সর্বসিদ্ধি প্রদায়ক।' যার অর্থ, দেবী বহুলার ভৈরবের নাম ভীরুক। আর, দেবী বহুলা সর্বসিদ্ধিপ্রদায়িকা। আর তিনি, ভক্তদের কামনা-বাসনা পূরণ করেন।
কথিত আছে সাধক বামাক্ষ্যাপা একসময় এই মহাপীঠে এসে সাধনা করেছেন। আজও এই মন্দির বেশ নির্জন। গাছপালা এবং চাষের জমিতে ঘেরা শান্ত এবং নিরিবিলি। যেন সাধকের আদর্শ স্থান। এককথায় বলতে গেলে বাহুল্যহীন। এখানে গেলে দেখা যাবে, গাছের নীচে রয়েছে পঞ্চমুণ্ডির আসন। বামাক্ষ্যাপা ছাড়াও অন্যান্য বহু সাধক এই পঞ্চমুণ্ডির আসনে বসেই সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেছেন। এমনটাই দাবি ভক্তদের।
এই মরাঘাট মহাপীঠই দেবী বহুলাক্ষী বা বাহুলক্ষ্মীর আদি পীঠ। আগে এখানে শ্মশান ছিল। এর কাছ দিয়ে বয়ে গিয়েছে ঈশানী নদী। বছরের অন্যান্য সময় এই নদীর বিভিন্ন জায়গায় জল প্রায় থাকে না বললেই চলে। বহু জায়গায় নদীখাত বলতেও আলাদা প্রায় কিছুই নেই। সবটাই আশপাশের মাটির সঙ্গে মিশে প্রায় সমতল হয়ে গিয়েছে। কিন্তু, বর্ষাকালে নদী জলে ভরা থাকে। নৌকো ছাড়া পারাপার করা যায় না।
শুধু তাই নয়, নদী ঈশানী তখন দু-কূল ছাপিয়ে প্রবাহিত হয়। ভক্তরা সেই সময় পুজো করার জন্য এই পুরোনো মন্দিরে আর আসতে পারেন না। তাই দেবী বহুলাক্ষীর আলাদা মন্দির করা হয়েছে গ্রামের ভিতরে। সেই নতুন মন্দিরেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে দেবী বহুলার মূর্তি। নতুন মন্দিরেই চলে পূজাপাঠ।
আরও পড়ুন- সতী মায়ের মন্দির, যেখানে পুকুরে স্নান আর ঢিল বাঁধলেই ঘটে রোগমুক্তি
তবে, পুরোনো মন্দির মরাঘাটের মহাপীঠে আজও পূজার্চ্চনা চলে আগের মতই। এখানেও দেবী বহুলার পুজো হয়। ভোরবেলা হয় মঙ্গলআরতি। সকাল ১০টায় ফলভোগ। বেলা ১২টায় অন্নভোগ। তারপর চলে শীতলভোগ-সহ অন্যান্য ভোগ নিবেদন। দুর্গাপুজোর ১৫দিন আগে এখানে বেশ বড় আকারে পুজো হয়। সঙ্গে শিবরাত্রিও পালন করা হয় বেশ বড় আকারেই।