লকডাউন শেষের পথে। আস্তে আস্তে ছন্দে ফিরছে জীবন, তবে একটু অন্যভাবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেই দিয়েছে কোভিড আসলে যাবে না, বরং এই ভাইরাসের সঙ্গেই আমাদের থাকতে হবে। বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় টাকার ব্যাগ, মোবাইলের আগেও যা সবচেয়ে বেশি দরকার এখন থেকে, তা হল মাস্ক। আড়াই মাস গৃহবন্দি জীবন কাটিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছি আমি-আপনি। ঘরের বাইরে বেরিয়ে একটু অক্সিজেন এবার নিতেই হবে। আর মাস্ক না হয় সঙ্গী হল, ৩৬৫ দিনের, তা বলে শুধু সাদা কালো মাস্ক পরে হাসপাতালের ভাবখানা সঙ্গে এঁটে ঘোরা যায় কাঁহাতক? তার ওপর মাস চারেক পরেই পুজো। হেয়ারব্যান্ড, ব্যান্ডানা, নেল পলিশের মতোই এ বছরের ফ্যাশন স্টেটমেন্ট হয়ে উঠতে চলেছে মুখের মাস্ক।
জীবাণু থেকে আড়াল দেবে, আবার বাহারি ফ্যাশনও দেবে মুখের মাস্ক। লকডাউনের মাঝামাঝি থেকেই অনলাইনে নানা সংস্থা অর্ডার নিতে শুরু করেছে রকমারি মাস্কের। একঘেয়ে রঙ ছেড়ে মানুষ ঝুঁকছে রঙ বেরঙের আঁকিবুঁকি করা সুতির কাপড়ের মাস্কের ওপর। ভরা জ্যৈষ্ঠের দুপুরে ফেরিওয়ালাও ১০-২০-, ৫০ টাকায় ফেরি করে যাচ্ছেন নানা মাপের, নানা রঙের মাস্ক। গড়ানো বিকেলের সঙ্গে গলির শেষ প্রান্ত দিয়ে একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছে ফেরিওয়ালার সুর, "মাস্ক চাই মাস্ক?, লাল- নীল -বেগুনী-কমলা মাস্ক''।
পাড়ার ওষুধের দোকানে গেলে যেন ফিরে ফিরে আসছে দু-দশক আগের চেনা ছবি। খদ্দের আর দোকানদারের সেই হেসে কুশল বিনিময়, দোকানে আসতে বলা। "ভালো শাড়ি এসেছে দিদি এবার'' যদিও বলছেন না কেউই। তার বদলে, "এই লটে ভালো মাস্ক এল, নিয়ে যান, হট কেকের মতো সেল হচ্ছে"।
যারা আবার মাস্ককে করে তুলতে চান ফ্যাশন স্টেটমেন্ট, তাদেরকেও খালি হাতে ফেরাচ্ছে না তিলোত্তমা। রবিমাস সবে গেল। বাটিকের কাপড়ের মাস্ক পরে বিকেলের ছাদভ্রমণে যাচ্ছেন অনেকেই। অনলাইন রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করলে, মাস্কে একটু রবি ঠাকুর থাকবেন না, তা হয়? নাকের কাছে তাই কালো তুলিতে লেখা 'বিপদে আমি না যেন করি ভয়'।