Breathing Problem Tips and Solution During Short of Breathe: বর্তমানে দূষণের মাত্রা যে রেকর্ড পরিমানে বেড়েছে এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। চিকিৎসকরা বলছেন, নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ হওয়া সত্ত্বেও আবহাওয়ার বিশেষ পরিবর্তন হয়নি এখনও। আশানুরূপ ঠান্ডা পড়েনি বললেই চলে। ন্যাশনাল এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স অনুযায়ী গত সপ্তাহে কলকাতার বাতাসে বস্তুকণার মাত্রা দিল্লিকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। বস্তুত, কলকাতা আপাতত দেশের সবচেয়ে দূষিত শহর হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। অবশ্যই সেই দূষণের মাত্রা প্রভাব ফেলছে মানব শরীরেও।
চিকিৎসকদের মতে, এমন আবাহাওয়াতেই জন্মায় একাধিক ভাইরাস, ব্যাকটিরিয়া, ফাঙ্গাস। বিশেষত ফুসফুসের সংক্রমন বাড়ায় এই ধরনের জীবানু। কম বৃষ্টিপাত এবং দীপাবলির সময় বাজি ফাটানোর ধুম, আলো ইত্যাদি তার অন্যতম কারণ। তাই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে কড়া হাতেই।
কী কী সমস্যা হতে পারে
আবহাওয়ার অনিশ্চয়তায় হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, গলা, নাক, চোখ জ্বালার মতো একাধিক সমস্যা, সাধারণ গলাব্যথা, সর্দি-কাশি বা জ্বর ভাব, ফুসফুসের সংক্রমন, ডাস্ট অ্যালার্জি, ভাইরাল জ্বর, ঠান্ডা লাগা, ইত্যাদির মতো একাধিক সমস্যা হতে পারে এই সময়।
এই দূষণের মোকাবিলায় কী করবেন
১. র্যাপিড চেঞ্জ অফ টেম্পারেচর, অর্থাৎ কড়া রোদ থেকে সঙ্গে সঙ্গে এসিতে বা এসি থেকে সঙ্গে সঙ্গে রোদ - এই ধরনের বদল যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।
২. কড়া রোদে ছাতা ব্যবহার করতে পারেন।
৩. ঠান্ডা পানীয় এড়িয়ে চলুন।
৪. অ্যাজমা-সিওপিডি রোগীরা এই সময় একেবারেই ওষুধের অনিয়ম করবেন না। সঙ্গে সবসময় ইনহেলার রাখুন, যাঁদের ডাস্ট অ্যালার্জি রয়েছে তাঁরা সবসময় মাস্ক ব্যবহার করুন, অন্যরাও প্রয়োজনে মাস্ক ব্যবহার করুন। যতটা সম্ভব ৫. বাড়ির জল সঙ্গে রাখুন
৬. সাধারণ গলাব্যথা, সর্দি-কাশি বা জ্বর ভাব লাগলে প্যারাসিটামল-জাতীয় ওষুধ খেতে পারেন, তবে যাঁদের অ্যাজমা বা ৭. ওই জাতীয় সমস্যা রয়েছে তাঁরা দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৮. যাঁরা বিভিন্ন কারণে মফস্বল থেকে কলকাতায় আসছেন তাঁরা বিশেষত সতর্ক থাকুন। কারণ আবহাওয়ার হঠাৎ পরিবর্তনে অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে
৯. সকালে হালকা ব্যায়াম করুন
১০. যাঁদের ডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যা, ফুসফুসের সমস্যা রয়েছে, তাঁরা নিউমোকক্কাস ভ্যাকসিন নিন চিকিৎসকের পরামর্শে
প্রসঙ্গত, ছোটদের এবং বৃদ্ধদের যেহেতু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, সে কারণে ভাইরাস জ্বর, ঠান্ডা লাগা, বিভিন্ন সংক্রমনের আশঙ্কা বেশি থাকে। কাজেই এই সময়টা ওদের বেশি নজরে রাখা প্রয়োজন।
শেষে
পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর বিশ্বে পাঁচ বছর বয়সের নিচে যত শিশু মারা গিয়েছে, তাদের এক চতুর্থাংশের মৃত্যুর কারণ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে বছরে প্রায় ৬ লক্ষ শিশুর (যাদের বয়স ১৫ বছরের নীচে), মৃত্যুর কারণ বায়ুদূষণ। পাশাপাশি রয়েছেন অন্যান্য বয়সের মানুষও। প্রতিনিয়ত ফুসফুসে বিষ মেশাচ্ছে বায়ু। সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষা বলছে, সারা পৃথিবীতে যত সংখ্যক মানুষ ফুসফুসের সমস্যায় আক্রান্ত হন, তার ৩২ শতাংশই ভারতীয়। এ দেশের মানুষের সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় ইশ্চেমিক হার্ট ডিজিজ (হৃদজনিত রোগ)-এ। কাজেই বায়ু দূষণের এই ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন হোন আজই।
ডাঃ অশোক সেনগুপ্ত
এমডি (কলকাতা), এমারসিপি (ইউকে), পিএসিইএস, কনসালট্যান্ট রেসপিরেটরি মেডিসিন