মেহতাব হোসেন, ভারতীয় ফুটবলের একটা ব্র্যান্ড নেম। এই প্রজন্মের অন্যতম সেরা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন ব্রিটিশ কোচ ট্রেভর জেমস মর্গ্যান তাঁকে ‘ডাবল সিলিন্ডার’ বলে ডাকতেন। সবুজ গালিচায় অফুরান প্রাণশক্তিতে ভরপুর ফুটবলারকে এভাবেই ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন তিনি।
সেই ২০০১ সালে টালিগঞ্জ অগ্রগামীর জার্সিতে কলকাতা ময়দানে যাত্রা শুরু করেছিলেন মেহতাব। তারপর মোহনবাগান, ওএনজিসি, ইস্টবেঙ্গল, কেরালা ব্লাস্টার্স ও জামশেদপুরে খেলে ফের মোহনবাগানে। সেরা বাঙালি ফুটবলারদের এলিট ক্লাবেই জ্বলজ্বল করবে মেহতাবের নাম। এখন কেরিয়ারের সায়াহ্ণে দাঁড়িয়ে তিনি। চলতি বছর আই-লিগের পরেই তুলে রাখবেন বুট জোড়া। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন।
ফুটবলার মেহতাবের কাছেও আর পাঁচটা বাঙালির মতোই শারদীয়ার আলাদা একটা জায়গা আছে হৃদয়। এখনও পুজোর গন্ধে মন ভাল হয়ে যায় তাঁর। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে মেহতাব জানালেন, তাঁর কাছে পুজোর মাহাত্ম্য।
দুর্গা পুজোর কথা বলতেই নস্ট্যালজিক হয়ে ওঠেন মেহতাব। ছোটবেলা কাটিয়েছেন বারুইপুরের মল্লিকপুরে। ওখানে প্রচুর পুজো হলেও কলকাতার পুজো দেখতে আসতেন বন্ধুদের সঙ্গে। পুরনো দিনের স্মৃতিচারণা করে মেহতাব বললেন, “তখন পুজোয় আলাদা আনন্দ ছিল। বন্ধুরা মিলে লেবুতলা পার্ক আর বাবুবাগানের পুজো দেখতে আসতাম। তখন এই দু’টো পুজোর খুব নাম ছিল। এখনও মনে আছে পায়ে হেঁটে কিম্বা বাসে করেই ঠাকুর দেখতে বেরোতাম আমরা।”
মেহতাবের কাছে পুজোর স্মৃতি বলতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বন্ধুরা মিলে টাকা তুলে ঠাণ্ডা পানীয় কেনার আনন্দ। ময়দানের প্রিয় ভিকি (মেহতাবের ডাক নাম) জানালেন, “তখন ১০-১২ বছর বয়স আমাদের। কারোর কাছে দেড় টাকা তো কারোর কাছে তিন টাকা থাকত। এখনও মনে আছে সবাই মিলে টাকা জমিয়ে এক বোতল কোল্ড ড্রিংক কিনতাম। তখন এক বোতলের দাম ছিল পাঁচ টাকা। টাকা ছিল না। কিন্তু আনন্দ ছিল। আজ টাকা আছে। কিন্তু সেই আনন্দটা যেন কোথাও হারিয়ে গিয়েছে।"
মেহতাব জানালেন, গত তিন-চার বছর আইএসএল-এর জন্য দুর্গাপুজো তিনি মিস করেছেন। কিন্তু এবার পরিবারের সঙ্গে কলকাতায় আছেন। ফলে পুজোয় শহরেই থাকছেন। আলাদা করে ঠাকুর দেখতে যাওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই তাঁর। তবে প্রতিবারের মতো এবারও ঈদ আর দুর্গাপুজোর জন্য নতুন জামাকাপড় কিনেছেন মেহতাব। কেনাকাটার দায়িত্বে থাকেন স্ত্রী মৌমিতা। মা দুর্গার কাছে একটাই প্রার্থনা মেহতাবের। বললেন, "পুজো এলে আজও ভালো লাগে। মায়ের কাছে এটাই চাইব, সবাই যেন মিলেমিশে একসঙ্গে থাকতে পারি।"