কোনও কোনও বিকেলের গায়ে একটা রং লেগে যায়। সেই রং দিয়ে চিনে নেওয়া যায় ওই বিকেলের আশেপাশে লেগে থাকা দিন, রাত, বছর, সময়কে। ২০০২ সালের ২৯ জুন সেরকম এক বিকেল। দেখতে দেখতে দু'দশক পার হতে চলল। একটা গোটা প্রজন্ম এখনও হাপিত্যেশ করে বসে থাকে সেরকম একটা বিকেলের জন্য। ২০০২-এর ফুটবল বিশ্বকাপ। ভারতীয় সময় অনুযায়ী ২৯-এর বিকেলে পড়েছে ম্যাচ টাইম।
Advertisment
ফাইনালে ব্রাজিলের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল জার্মানি। ম্যাচ শেষে ফলাফল ছিল জার্মানি ০-ব্রাজিল ২। হলুদ সবুজের তৈরি ইতিহাসে সেদিন ছেয়ে গেছিল সারা দুনিয়া। কিন্তু সেটা আলোচ্য নয়। হলুদ সবুজের জয় দিয়ে একটা গোধূলি, একটা বিকেলকে বেঁধে ফেলা যায় না।
মনে রাখতে হবে, শূন্য দশক সবে পেরিয়েছে তখন। ফুটবল তখনও আনস্মার্ট, মফঃস্বল থেকে শহরে পড়তে আসা তরুণের মতো। তবে সময় বদলাচ্ছে। প্রযুক্তি এগোচ্ছে। নয়ের দশকে জন্মানো কুচোরা তখন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের গুঁড়িয়ে যাওয়া দেখে ফেলেছে। মাস কয়েক আগে হয়ে যাওয়া গুজরাট দাঙ্গার রেশ তখনও আছে। গোটা পৃথিবী জুড়েই সময় বাঁক নিচ্ছে। সেই বাঁক নেওয়া সময়ের শেষ নায়ক রোনাল্ডো। স্বপ্নের নায়ক।
পাড়ায় পাড়ায় সেলুনগুলোয় তখন রোনাল্ডো ছাঁট নিয়ে উন্মাদনা। বাড়ির অনুমতি না নিয়ে চুল কেটে ফেলায় কারোর কারোর জুটেছে রাম ঠ্যাঙ্গানি। বাংলার শহর-আধা শহরগুলোর সব মাঠ তখনও প্রোমোটারের নেকনজরে পড়েনি। বৃষ্টি শেষের বিকেল গুলোয় মাঠের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ছুটে বেড়ানো দামালগুলো কেউ নিজেদের রোনাল্ডো ভাবছে, কেউ রিভাল্ডো। রোনাল্ডিনহোর সেটা প্রথম বিশ্বকাপ।
আর হ্যাঁ, ফুটবলে জীবন ছিল, গতি ছিল, হারজিত ছিল। ফেসবুক ছিল না, টুইটার ছিল না, ইন্সটা ছিল না। সোশ্যাল মিডিয়ার রমরমা হওয়ার আগের সেই শেষ বিশ্বকাপ ফাইনাল। খাতার ভাঁজে তখনও জমানো হতো কাকা, রবার্তো কার্লোস, রিভাল্ডোর ছবি। ফুটবলের চরিত্র তখনও আগ্রাসী ছিল না এমন। ব্রাজিল জিতলে আনন্দ হতো খুব। কিন্তু তাৎক্ষণিক উদযাপন শেষ হলে একলা অলিভার কানের জন্যেও কষ্ট হতো। ভিজে উঠত চোখের কোণ।
ওই ৯০ মিনিট আসলে ব্রাজিলের না, জার্মানির না। ইতিহাসে যাদের কথা কোনোদিন লেখা হবে না, সেইসব নগন্য মানুষের আজীবনের সম্পদ হয়ে থাকবে ওই ৯০ মিনিট। ষাট সত্তর বছর বেঁচে থেকে যাদের সঞ্চয় রোনাল্ডোর ওই আনস্মার্ট হাসিটুকুই। ঘণ্টা দেড়েকের এক ম্যাচে ধরে রাখা আছে আস্ত একটা সময়। নিতান্ত ছোট ছোট কথা, তুচ্ছ ঘটনা, গান গল্প। সময় তখনও অন্যরকম। স্বপ্নের বিকেলের আজ আঠারো বছর পার।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন
আমাদের নিউজলেটার সদস্যতা!
একচেটিয়া অফার এবং সর্বশেষ খবর পেতে প্রথম হন