Advertisment

ম্যাজিক নাকি? জলের ধারে দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন!

একটা দেশলাই কাঠিতেই বাজিমাত। খোলা আকাশের নীচে মাটির তলা থেকে বেরনো মিথেন গ্যাসের আগুনেই হয়ে যাবে সমস্ত রান্নাবান্না। এই প্রাকৃতিক গ্যাস নষ্ট হলেও যায় আসে না প্রশাসনের।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
methane gas damodar Express Photo Shashi Ghosh

এই পাথরের ফাঁক-ফোকর থেকেও বের হয় মিথেন গ্য়াস। ছবি- শশী ঘোষ

ম্যাজিক নাকি? দেশলাই কাঠির আগুনের ফুলকি পড়তেই দামোদর নদের চরে দাউ-দাউ করে আগুন জ্বলতে শুরু করল। নেভার কোনও লক্ষণ নেই। আসানসোলে দামোদরের চরের পাথরের ফাঁকে যত্র-তত্র ক্রমাগত বেরোচ্ছে মিথেন গ্যাস। একনাগাড়ে এই গ্যাস বেরনোর ফলে পরিচিত হয়ে উঠেছে দামোদর সংলগ্ন ধেনুয়া গ্রাম। পিকনিক করার ইচ্ছা হলেই আশপাশের মানুষজন হাঁড়ি-কড়াই নিয়ে হাজির হয়ে যান এখানে। তারপর শুধু একটা দেশলাই কাঠি। রান্নার সরঞ্জাম নিয়ে আসার কোনও প্রয়োজনই নেই। খোলা জায়গায় প্রকৃতির নিয়মে বেরনো প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর কারও নিয়ন্ত্রণও নেই।

Advertisment

methane gas damodar Express Photo Shashi Ghoshdamodar-1561-003 ধেনুয়া গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে দামোদর। ছবি: শশী ঘোষ

পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের ধেনুয়া গ্রামের পাশ থেকে বয়ে গিয়েছে দামোদর। এখানে মাটির নীচ থেকে বেরনো গ্যাসই পরিচিতি বাড়িয়েছে ধেনুয়ার। ওই গ্রামের ওপারেই বাঁকুড়া জেলা। নৌকায় এপার-ওপার যাতায়াত করেন দুই পাড়ের মানুষ। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরেই এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করে আসছেন। ঘোর বর্ষায়ও তাঁরা জানেন পাথরের কোন ফাঁকে দেশলাই দিলেই আগুন জ্বলে উঠবে। কেন এভাবে আগুন জ্বলে?

বালি-পাথরের নীচের এই আগুন একেবারে নতুন যে তা নয়। একটি বেসরকারি সংস্থা এখান থেকে গ্যাস সংগ্রহ করে। তারপরেও যে ভাবে অনবরত গ্যাস বেরিয়ে যাচ্ছে তার ফলে অপচয় হচ্ছে বিপুল পরিমান প্রাকৃতিক সম্পদ। তবু কোনও হেলদোল নেই পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসনের। প্রশাসনিক কর্তারা ধেনুয়া নামটাই যেন নতুন শুনছেন।

methane gas damodar Express Photo Shashi Ghosh দামোদরের চরে দেশলাই কাঠি জ্বালিয়ে ধরলেই দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে যাবে। ছবি: শশী ঘোষ

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই মিথেন গ্যাস বেরিয়ে আসছে। পিকনিকের সিজনে ওভেন বা আগুন জ্বালানোর জন্য কোনও কিছু নেওয়ার প্রয়োজন নেই। শুধু কড়াইতে মাংস বা তরকারি কষানোর অপেক্ষা। মাংস থেকে মাছ, সবজি বা যে কোনও কিছুই অনায়াসে রান্না হয়ে যাবে। যখনই মনে হবে, পিকনিকের আয়োজন করলেই হল। অাপনার যা খুশি, যতক্ষণ ইচ্ছা মনের মত রেসিপি তৈরি করুন। অসানসোলের ধেনুয়া গ্রামের এটাই স্বাভাবিক চিত্র। বর্ষায় একটু সমস্যা থাকলেও বছরভর ওই চরে গিয়ে রান্না করতেই পারেন।

methane gas damodar Express Photo Shashi Ghosh একটি বেসরকারি সংস্থা এখান থেকে মিথেন গ্যাস সংগ্রহ করছে। ছবি: শশী ঘোষ

এই বর্ষায় গিয়েও দেখা গেল চরের বিভিন্ন জায়গা থেকে অনর্গল গ্যাস বের হচ্ছে। গ্যাসের তোড়ে জলেও ঢেউ খেলছে। শুধু দেশলাই জ্বালানোর অপেক্ষা। যেহেতু দামোদর এবার বানভাসী হয়নি, তাই এখনও নদের মাঝখানেও গ্যাসের সন্ধান মিলছে। পাথরের এক ফাঁকে দেশলাই কাঠি দিতেই দাউ-দাউ করে জ্বলে উঠলো আগুন। ধেনুয়া গ্রামের বাসিন্দা চণ্ডিচরণ মল্লিক বলেন, "খুব ছোট বয়স থেকেই মাটির নীচ থেকে আগুন বেরতে দেখছি। আমার যতদূর মনে পড়ছে ১৯৯০ সাল থেকে এই আগুন জ্বলছে। মিথেন গ্যাস বেরচ্ছে মাটির নীচ থেকে। পিকনিকের সময় এই আগুন দিয়েই আমরা রাান্না করে থাকি।" 

নৌকোর মাঝি বিশ্বজিৎ বারুইয়ের জানা রয়েছে কোন কোন জায়গা থেকে গ্যাস বেরোয়। অনায়াসে দেখিয়েও দিলেন সেই সব জায়গা। দেশলাই কাঠি পড়তেই দাউদাউ করে জ্বলে উঠলো। বিশ্বজিত জানান, দুই পারেই বিভিন্ন জায়গায় মাটির নীচ থেকে বেরনো গ্যাস থেকে আগুন জ্বলে। এখন দামোদরের চরের কিছু অংশ জলে ঢেকে গেছে। কিন্তু জলের বুদবুদ দেখলেই বোঝা যাচ্ছে গ্যাসের উৎসের অবস্থান।

methane gas damodar Express Photo Shashi Ghosh ধেনুয়া গ্রামের মিথেন গ্যাস নিয়ে তেমন কোনও তথ্যই নেই জেলা প্রশাসনের কাছে। ছবি: শশী ঘোষ

বিশেষজ্ঞদের মতে, আসানসোলের মাটির নীচে বিস্তীর্ণ এলাকায় রয়েছে কয়লাখনি। তার ফলেই এই গ্যাসের উৎপত্তি। আসানসোল পুরনিগমের ৯৪ নম্বর ওয়ার্ডের আওতায় পড়ছে ধেনুয়া। স্থানীয় কাউন্সিলর ধর্মদাস মাজি বলেন, "২০০৬-০৭ সাল থেকে একটি বেসরকারি সংস্থা দামোদর নদের এপার-ওপার দুদিক থেকেই গ্যাস বের করে ব্যবহার করছে। তবে তার বাইরেও বেশ কিছু জায়গা থেকে গ্যাস বেরোচ্ছে। নীচে কয়লা থাকায় এই গ্যাস তৈরি হচ্ছে। তবে এ নিয়ে ওএনজিসির কোনও পরিকল্পনা আছে বলে আমি জানি না।" বিপুল পরিমান গ্যাস যে নষ্টও হচ্ছে তা মেনে নিয়েছেন কাউন্সিলর। তাঁর কথায়, চিন্তা ভাবনা রয়েছে কিন্তু উপায় হয়নি। এদিকে পশ্চিম বর্ধমান জেলার প্রশাসনের কর্তারা এই গ্যাসের বিষয়ে উদাসীন। কাজেই এই মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ হেলায় হারিয়ে যাচ্ছে।

asansol
Advertisment