/indian-express-bangla/media/media_files/2025/06/02/7tZlwzLB39f39BLjEJ4e.jpg)
Health Lifestyle: মাইগ্রেনের তীব্র ব্যথা থেকে পান মুক্তি। (ছবি- প্রতীকী)
Health Lifestyle: মাইগ্রেনের সমস্যায় ভোগেন না, এমন লোকের সংখ্যা হাতেগোনা। কী করলে মাইগ্রেন সারবে, সেনিয়ে তাই ভাবনাচিন্তার শেষ নেই। অনেকেই নানাভাবে মাইগ্রেনের সমস্যা কমানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু, এতে ধারাবাহিকভাবে খুব বেশি লাভ হয়নি। এই পরিস্থিতিতে ব্যথামুক্ত জীবনের জন্য ঘরোয়া উপাদানই পথ দেখাতে পারবে, এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের। এই ঘরোয়া উপাদান ব্যবহার করে ইতিমধ্যেই অনেকে সাফল্য পেয়েছেন বলেও তাঁদের দাবি।
যেসব সমস্যা হয়
ডা. যাদব জানিয়েছেন যে প্রচণ্ড মাইগ্রেনের সমস্যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এটা রোগীরা প্রত্যেকেই জানেন। আর, এই প্রচণ্ড যন্ত্রণা রোগীদের দৈনন্দিন কাজকর্মকে প্রভাবিত করে। তাঁরা জোরে শব্দ, অতিরিক্ত স্ক্রিন দেখা, তীব্র গন্ধ, তাপমাত্রার পরিবর্তন অথবা আলোর সংস্পর্শে আসা সহ্য করতে পারেন না।
আরও পড়ুন- ভালোবাসা খুঁজছেন? ডেটিংয়ে সফল হতে এই ৭টি সহজ টিপস মেনে চলুন
এই ধরনের ক্ষেত্রে রোগীরা সমস্যা থেকে বাঁচতে নানা ওষুধের আশ্রয় নেন। কেউ দোকানে বলে ওষুধ কেনেন। যাকে বলে ওভার-দ্য-কাউন্টার ওষুধ। অনেকে আবার চিকিৎসককে দেখান। সেক্ষেত্রে চিকিৎসক প্রেসক্রিপশন করে দেন। সেই অনুযায়ী রোগীরা দোকান থেকে ওষুধ কেনেন।
মাইগ্রেন বিশ্বজুড়ে একটি অত্যন্ত সাধারণ ও গুরুতর স্নায়বিক সমস্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং স্বাস্থ্য গবেষণা সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী:
বিশ্বের পরিসংখ্যান (Global Stats):
-
প্রতিদিন প্রায় ১ কোটি (১০ মিলিয়ন) মানুষ মাইগ্রেনের কারণে আক্রান্ত হন।
-
বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫% মানুষ মাইগ্রেন সমস্যায় ভোগেন।
-
প্রতি বছর প্রায় ১০০ কোটি (১ বিলিয়ন) মানুষ কখনও না কখনও মাইগ্রেনের সমস্যায় ভোগেন।
ভারতের প্রেক্ষাপটে (India Specific):
-
ভারতের প্রায় ২৫ কোটির বেশি মানুষ মাইগ্রেনে আক্রান্ত (IHS & Lancet অনুসারে)।
-
প্রতি বছর ২ কোটির মতো নতুন মাইগ্রেন রোগী শনাক্ত হয়।
-
মহিলাদের মধ্যে আক্রান্তের হার পুরুষদের তুলনায় তিন গুণ বেশি।
-
ভারতের শহরাঞ্চলে মাইগ্রেনের প্রাদুর্ভাব বেশি, বিশেষত যারা বেশি সময় স্ক্রিন দেখেন বা মানসিক চাপে থাকেন।
সব মিলিয়ে প্রতিদিন বিশ্বজুড়ে ১ কোটি বা তারও বেশি মানুষ মাইগ্রেনের কারণে দুর্বিষহ দিন কাটান। এটি কর্মক্ষমতা কমায়, মানসিক স্বস্তি নষ্ট করে এবং প্রায়শই সঠিক চিকিৎসা ছাড়াই দিনের পর দিন চলতে থাকে।
আরও পড়ুন- কুকুর বা বিড়ালের ছানারা হঠাৎ কামড়ায় কেন? কারণ জানলে অবাক হবেন! পশু চিকিৎসকের বিশেষ পরামর্শ
মাইগ্রেনের সমস্যায় চিকিৎসকরা সাধারণত দুই ধরনের অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ ব্যবহার করেন:
১. অ্যাকিউট (তৎক্ষণাৎ) চিকিৎসার ওষুধ
যখন মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হয়, তখন উপসর্গ কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
সাধারণত ব্যবহৃত ওষুধ:
ওষুধের নাম | কাজ | ব্র্যান্ডের উদাহরণ |
---|---|---|
Paracetamol | হালকা ব্যথা উপশম | Crocin, Calpol |
NSAIDs (Ibuprofen, Naproxen) | ব্যথা ও প্রদাহ কমায় | Brufen, Naprosyn |
Triptans (Sumatriptan, Rizatriptan) | মাইগ্রেনের নির্দিষ্ট চিকিৎসা | Suminat, Rizact |
Ergotamines (Ergotamine + Caffeine) | রক্তনালী সংকোচন করে | Cafergot |
Anti-nausea drugs (Domperidone, Metoclopramide) | বমিভাব ও বমি নিয়ন্ত্রণে | Domstal, Perinorm |
২. প্রোফিল্যাক্টিক (প্রতিরোধমূলক) চিকিৎসার ওষুধ
যাঁদের মাসে ৪ বা তার বেশিবার মাইগ্রেন অ্যাটাক হয়, তাঁদের ক্ষেত্রে নিয়মিত এই ওষুধ দেওয়া হয়।
সাধারণত ব্যবহৃত ওষুধ:
ওষুধের নাম | শ্রেণি | ব্র্যান্ডের উদাহরণ |
---|---|---|
Propranolol / Metoprolol | বিটা-ব্লকার | Inderal, Betaloc |
Amitriptyline / Nortriptyline | ট্রাইসাইক্লিক এন্টিডিপ্রেসেন্ট | Tryptomer, Nortrip |
Topiramate | অ্যান্টি-এপিলেপটিক | Topamac |
Valproate / Divalproex Sodium | অ্যান্টি-সিজার | Encorate, Valpex |
Flunarizine / Cinnarizine | ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার | Sibelium, Stugeron |
Botox injections (severe chronic migraine-এ) | পেশীর উত্তেজনা কমাতে ব্যবহৃত | Botox Therapy |
কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা
এই ব্যাপারে ফরিদাবাদের অমৃতা হাসপাতালের কনসালট্যান্ট নিউরোলজিস্ট ডা. দীপক যাদব জানিয়েছেন, এনিয়ে কোনও সুষ্ঠু প্রমাণ নেই। একইসঙ্গে অবশ্য তিনি বলেছেন, 'কাঁচা পাতিলেবুতে কাজ না হলেও গরম জলে পা ভিজিয়ে রাখলে কিছুটা উপকার হয়তো পাওয়া যেতে পারে। কপালে, ঘাড়ে বা চোখে ন্যাকড়া দিয়ে গরম জলের ভাব দেওয়া যেতে পারে। তাতে পেশীগুলো যেমন শিথিল হবে। রক্তসঞ্চালন বাড়বে। এতে প্রচণ্ড মাথাব্যথা থাকলে কমে যাবে। বমি বমি ভাব এবং আলোর প্রতি সংবেদনশীলতার মত লক্ষণগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।'
আরও পড়ুন- মহিলারা কেন ২০-তেই বুড়ি? জানুন ৪টি গুরুত্বপূর্ণ কারণ, সহজ সমাধান জানালেন বিশেষজ্ঞরা
গরম সেঁক
তিনি আরও বলেন, 'একটি গরম করা ঘাড়ের ব্যান্ড বা প্যাড ব্যবহার করলে ঘাড় এবং পিঠের ওপরের পেশীগুলো ক্রমাগত তাপ পাবে। এতে পেশীগুলো শিথিল হবে। আর তাতে মাইগ্রেনের জন্য দায়ী উত্তেজনা কমে যাবে। যদি ন্যাকড়া দিয়ে গরমের সেঁক দেওয়া না যায়, তাহলে গরম জলে স্নান করার চেষ্টা করাও যেতে পারে। এতেও গরম সেঁক দেওয়ার মতই কাজ করবে।'
আরও পড়ুন- বৃষ্টির দিনে বাড়িতে সাপ ঢুকছে? ঘরোয়া ৭টি টিপসে মিলবে রক্ষা
এমনটাই জানিয়েছেন ডা. দীপক যাদব। তিনি জানিয়েছেন, ব্যবহারকারীদের মাথায় রাখতে হবে যে তাপ পেশী শিথিল করতে পারে। সেই কারণে মাথা এবং ঘাড়ের অংশে টান কমাতে গরম সেঁক অব্যর্থ। মাইগ্রেনের সময় সাধারণত পেশীর চাপ বাড়ে। সেটাই গরম সেঁকে শিথিল হয়ে যায়।
গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা:
-
মাইগ্রেনের ওষুধ কখনই নিজে থেকে না খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
-
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, ডোজ এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব থাকতে পারে।
-
অনেক রোগী ওভার-দ্য-কাউন্টার ওষুধ বেশি ব্যবহার করে মেডিসিন-ওভারইউস হেডেক (MOH)-এ ভুগতে শুরু করেন।
মাইগ্রেন কমাতে Triptan জাতীয় ওষুধ দ্রুত কাজ করে, আর প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয় বিটা ব্লকার, এন্টি-ডিপ্রেসেন্ট, অ্যান্টি-এপিলেপটিক জাতীয় ওষুধ। সব ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ বাধ্যতামূলক।