Advertisment

২৫ বছর ধরে ম্যাচের টিকিট জমাচ্ছেন এই মোহনবাগানি

পীযূষ নন্দী, বয়স বিয়াল্লিশ। পেশায় বিমা এজেন্ট, নেশা মোহনবাগান। বারাসতের কালিকাপুরের এই বাসিন্দা গত ২৫ বছর ধরে ফুটবল ম্যাচের টিকিট জমাচ্ছেন। সংগ্রহে রয়েছে দু’টাকা থেকে ৫০০ টাকার ম্যাচ টিকিট।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Pijush Nandy football Match ticket collector Express Photo Shashi Ghosh

২৫ বছর ধরে ম্যাচের টিকিট জমাচ্ছেন এই মোহনবাগানি। ছবি: শশী ঘোষ

পীযূষ নন্দী, বয়স বিয়াল্লিশ। পেশায় বিমা এজেন্ট, নেশা মোহনবাগান। তবে বারাসতের কালিকাপুরের এই বাসিন্দার একটা সম্পূর্ণ অন্য পরিচয় রয়েছে। শেষ ২৫ বছর ধরে তিনি ফুটবল ম্যাচের টিকিট জমাচ্ছেন। সংগ্রহে রয়েছে দু’টাকা থেকে ৫০০ টাকার ম্যাচ টিকিট।

Advertisment

ফুটবল ম্যাচের টিকিট জমানোর নেশার কথা বড় একটা শোন যায় না। কলকাতা বা তার আশেপাশে, এমনকি এই দেশেও, ক’জন এরকমটা করে থাকেন, তা রীতিমতো গবেষণার বিষয়। পীযূষের বড় মামা, প্রয়াত রমেশ চন্দ্র নন্দী, ফিলাটেলিস্ট (স্ট্যাম্প সংগ্রহকারী) ছিলেন। মামাকে দেখেই ভাগ্নে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। পীযূষ বলছেন, "মামাকে দেখতাম স্ট্যাম্প জমাতে। আমার বেশ ভাল লাগত। তারপর একদিন ভাবলাম আচ্ছা, ম্যাচের চিকিট জমালে কেমন হয়? বিদেশে অনেকে এরকমটা করে থাকেন। এ দেশে খুব একটা শুনিনি। ফুটবলাররা যদি ম্যাচের জার্সি বা বুট নিজের সংগ্রহে স্মৃতি হিসেবে রাখতে পারেন, তাহলে ফ্যানেরা কেন টিকিটগুলো জমাতে পারবে না? এই ভাবনা থেকেই টিকিট জমানো শুরু করি।"

Pijush Nandy football Match ticket collector Express Photo Shashi Ghosh টিকিটগুলোকে ছুঁয়ে আলাদা অনুভূতি পান পীযূষ। ছবি: শশী ঘোষ

পীযূষ বলছেন সেই আট-ন বছর বয়স থেকে তিনি কলকাতা ময়দানে আসা শুরু করেন বাবা কৃষ্ণগোপাল নন্দীর হাত ধরে। এরপর ১৯৯৩ সালে মাধ্যমিক দেওয়ার পর থেকে বন্ধুরা মিলে কলকাতায় প্রায় সব ম্যাচ দেখতেন। তখন যদিও ইস্টবেঙ্গল বা মোহনাবাগান বাছবিচার করতেন না। সব টিমের খেলাই দেখতেন। মাঠের মানুষের সঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার আড্ডাও জমল স্থানীয় মনোরঞ্জন স্মৃতি সংঘের মাঠেই।

ফাইলে ভরে নিয়ে এসেছিলেন ম্যাচের টিকিট। তাঁর পরনের কাস্টোমাইজড জার্সিটা বলে দিচ্ছিল মোহনবাগান, গঙ্গাপারের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব রয়েছে তাঁর হৃদয়জুড়ে। বুকে জ্বলজ্বল করছে সনি নর্ডির সঙ্গে তোলা ছবিটা। বললেন, "মোহনবাগানের আমি অন্ধ ফ্যান। শুধু কলকাতাতেই নয়, মোহনবাগানের অ্যাওয়ে ম্যাচেও হাজির থাকি। ক্লাবের গোলপোস্টের পিছনের গ্যালারিতে এখন যে টিকিটের দাম কুড়ি টাকা, তখন সেটার দামই ছিল দু’টাকা। মোহনবাগান ১৯৯৭-তে প্রথমবার ন্যাশনাল লিগ পায়, সেটা ছিল ন্যাশনাল লিগের দ্বিতীয় বছর। প্রথমবার জেসিটি জিতেছিল। '৯৭ সালের লিগ জয়ের টিকিটও রয়েছে আমার কাছে। আবার ২০১৪ আই-লিগ জয়ের টিকিটও রয়েছে।"

Pijush Nandy football Match ticket collector Express Photo Shashi Ghosh সংগ্রহে রয়েছে দু’টাকা থেকে ৫০০ টাকার ম্যাচ টিকিট। ছবি: শশী ঘোষ

২৫ বছর ধরে টিকিট জমাচ্ছেন পীযূষ। বেশ কিছু টিকিটের অবস্থা রীতিমতো বেহাল। যে কোনও সময় ছিঁড়ে যেতে পারে। কোনও ভাবে জুড়ে রয়েছে সেগুলো। কিভাবে সংরক্ষণ করবেন বুঝতে পারছেন না। পীযূষ বলছেন, "এ ব্য়াপারে অনেক ফিলাটেলিস্টের সঙ্গে কথা বলেছি। কেউ কোনও সমাধান দিতে পারেননি। আসলে স্ট্যাম্পের মোটামুটি একটা সাইজ থাকে। ফলে ওটা অ্যালবামে রাখা যায়। কিন্তু টিকিটের নির্দিষ্ট কোনও সাইজ হয় না, এটাই সমস্য়া। কিন্তু আমি ল্যামিনেশন করাব না, তাহলে ছুঁয়ে দেখার অনুভূতিটা নষ্ট হয়ে যাবে।"

টিকিট জমানো মানুষটা ময়দানের বদলটা দেখেন অন্যভাবে। টিকিট বদলের কথা ধরে বললেন, "আগে টিকিটে ক্লাবের নামও থাকত না। রঙ ছিল না কোনও। পরে ক্লাবের নাম বসল, লোগো এল। রঙীন হলো টিকিট।"

Pijush Nandy Football Match ticket Collector Express Photo Shashi GhoshWhatsApp Image 2018-08-15 at 1.16.17 AM-001 করিম বেঞ্চারিফার অটোগ্রাফ করা ডার্বির টিকিট। ছবি: পীযূষ নন্দী

পীযূষের কাছে রয়েছে আইএফএ শিল্ডের শতবর্ষ উপলক্ষে খেলা ম্যাচ টিকিটও। এমনকি মিঠুন চক্রবর্তীর বেঙ্গল ফুটবল ‌অ্যাকাডেমির ম্যাচও দেখতে গিয়েছিলেন। সেই টিকিটও রেখেছেন। তবে একজন মোহনাবাগানি হিসেবে তাঁর কাছে সবচেয়ে স্পেশ্যাল টিকিট ২০০৯ সালের আই-লিগ ডার্বির। দিনটা ছিল ২৫ অক্টোবর। চিডি এডের (একমাত্র ফুটবলার যাঁর ডার্বিতে চার গোল করার কৃতিত্ব রয়েছে) চার গোলে ভর করে মোহনবাগান পাঁচ গোল দিয়েছিল ইস্টবেঙ্গলকে। সবুজ-মেরুন জয় পেয়েছিল ৫-৩ গোলে। যথার্থই এই ম্যাচটা ছিল বাগানের কাছে বদলার ম্যাচ। ১৯৭৫ সালে আইএফএ শিল্ডের ফাইনালে ইস্টবেঙ্গল ৫-০ গোলে হারিয়েছিল মোহনবাগানকে। আর এই জয়ে গায়ের জ্বালা মিটিয়েছিলেন বাগান সমর্থকরা। পীযূষ বলছেন, "ম্যাচের শেষে করিম বেঞ্চারিফা টিকিটে অটোগ্রাফ দিয়ে স্কোরলাইনটা লিখে দিয়েছিলেন। এটা আমি কখনও ভুলতে পারব না।"

Mohun Bagan
Advertisment