Mothers Day Special: "খুব উচ্চবিত্তদের কথা জানি না, মধ্যবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত পরিবারে মায়েরা কর্মরত হলেও, সন্তানের ব্যাপারে তাঁদের দায় দায়িত্ব বেশি থাকে। বাবা-মা দুজনেই অফিস থেকে ফিরলেও, সাধারণভাবে ছেলেমেয়ের নিত্যদিনের খোঁজখবর নেওয়ার চাপ তাঁদের উপরেই পড়ে। ফলে, খুব স্বাভাবিক ভাবেই রাগ বা আবদার সবই মা ও সন্তানের মধ্যে বেশি থাকে।"
মাদার্স ডে-র ঠিক আগে কথা হচ্ছিল স্বাতী রায়ের সঙ্গে। স্বাতী পর্যটনোদ্যোগী। বিভিন্ন রকমের ট্যুর প্ল্যানিং ও তা ঘটিয়ে ফেলার দায়-দায়িত্বই তাঁর ও তাঁর সংস্থার কাজ। স্বাতীদের নতুন প্রকল্প, মম উইথ কিড ট্যুর। ঠিক কেন এরকম অভিনব একটা পরিকল্পনা! উত্তরে জানা গেল, কিছুদিন আগে থেকে তাঁরা একটা প্রকল্প চালু করেছেন। উইমেন্স ওনলি ট্যুর। সে ট্যুরের সাড়া ও সাফল্য দেখে এই নতুন পরিকল্পনার কথা মাথায় এসেছে তাঁর। উইমেন্স ওনলি ট্যুরে কোনও পুরুষসঙ্গীই থাকেন না। পর্যটন সংস্থার তরফ থেকেও শুধু মহিলাই থাকেন। তাঁর স্পষ্ট কথা, "যদি নিরাপত্তা ইত্যাদি নিয়ে এত ভয়-ভয় ভাব থাকে, যদি কোনও মহিলা মনে করেন, তাঁর বাড়ির বা সঙ্গী কোনও এক পুরুষ দুনিয়ার যে কোনও সম্ভাব্য বিপদ থেকে ত্রাণ করতে পারবেন, তাহলে, তিনি এই ট্যুরে যাবেন না।" উইমেন্স ওনলি ট্যুর মুক্তির স্বাদের জন্যও বটে।
তেমনই, বাড়িতে মা-সন্তানের যে বন্ডিং, যে তুচ্ছাতিতুচ্ছ বিষয়ের দৈনন্দিনতা, তা থেকে সম্পর্ককে একটু আলাদা চোখে দেখে নেওয়ার সুযোগ দিতে এই মম উইথ কিড ট্যুরের পরিকল্পনা, বললেন স্বাতী। "মুক্তিটা খুব জরুরি। বিশেষ করে মেয়েদের জীবনে। ভালো থাকাটা খুব প্রয়োজন। একজন মা যদি সন্তানের সঙ্গে বাইরে বেড়াতে গিয়ে ভাল থাকেন, এই মুক্তির স্বাদ নিয়ে অন্যদেরও ভাল রাখতে পারবেন তিনি।"
এই ট্যুরে যোগ দেওয়ার নিয়মকানুন সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে মঁ ভয়্য়াজ সংস্থার কর্ণধার স্বাতী রায় জানালেন, "চার মাসের বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে এক মা-ও আমাদের সঙ্গে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অত ছোট বাচ্চার শরীর খারাপ হলে সামলানো সম্ভব হবে না। অন্তত চার বছর না হলে নিয়ে যাওয়া একটু ঝুঁকির।" বয়সের ঊর্ধ্বসীমারও একটা মাপকাঠি রয়েছে। পুত্রসন্তান হলে ১৪ বছর পর্যন্তই এই ট্রিপে নিয়ে যাওয়া হয়। "বয়ঃসন্ধির ছেলেদের অনেক মহিলাদের মাঝে একটু খাপছাড়া লাগার সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে তার মা-ও বিষয়টি নিয়ে একটু বেশি সাবধানী হয়ে পড়বেন, উপভোগ করতে পারবেন না।" কন্যাসন্তান হলে বয়সের কোনও ঊর্ধ্বসীমা নেই।
মালদার বাসিন্দা এক স্কুলশিক্ষিকা এই ট্যুরে যোগ দিচ্ছেন। তাঁর মেয়ের বয়স সাত বছর। তিনি বললেন, "ফেসবুক সূত্রে আমি এই ট্যুর প্রোগ্রামের কথা জানতে পেরেছি। আমি নিজে সোলো ট্রিপে উৎসাহী ছিলাম। কিন্তু যেহেতু আমি সিঙ্গল মাদার, মেয়েকে বাড়ি রেখে যেতেও চাই না। এই ধরনের উদ্যোগের কথা জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গেই যোগাযোগ করি। তার একটা বড় কারণ, ওঁরা যে খরচের কথা বলছেন সেটা একেবারেই সাধ্যের মধ্যে।"
এই বিশেষ ধরনের পর্যটনের ব্যাপারে মায়েদের উৎসাহের কমতি যেমন নেই, তেমনই গৃহস্বামীও নিজে যোগাযোগ করে স্ত্রী-সন্তানের জন্য ট্যুর বুক করতে শুরু করেছেন।
যেমন সুচেতা মুখোপাধ্যায়। নিউব্যারাকপুরের বাসিন্দা সুচেতা আগে স্কুলে চাকরি করলেও এখন গৃহবধূ। তাঁর স্বামী কর্মসূত্রে অধুনা বিদেশেবাসী। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই ঘুরতে ভালবাসেন। সুচেতা জানালেন, "আমার স্বামী সোশাল মিডিয়ায় এ সম্পর্কিত খবর দেখে আমাকে জানায়, ট্যুর বুক করতে বলে। আমার মেয়ের বয়স ৯ বছর। স্বামী অন সাইটে থাকার ফলে ওর অনেক জায়গায় ঘোরা হয়ে যায়, আমার কিছুই দেখা হয় না সেই তুলনায়।" সুচেতা মুখিয়ে আছেন এই ট্যুরের জন্য।
অগাস্ট মাসে সিকিমের ছায়াতাল দিয়ে এই নতুন ধরনের পর্যটন শুরু হচ্ছে। তবে সব সিট এখনই বুকড বলে জানানো হয়েছে মঁ ভয়্যাজ সংস্থার তরফ থেকে।