করোনা পরবর্তী সময়ে শরীরে দেখা যাচ্ছে নানান ধরনের সমস্যা, সেগুলি থেকেই কিন্তু লং কোভিডের মত দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে স্কিনের সমস্যা এবং জয়েন্টের ব্যথা খুব বেশি পরিমাণে কষ্ট দিচ্ছে। কিন্তু কী কারণে এই সমস্যার মুখে পড়ছেন তারা?
জয়েন্ট এর ব্যথার কারণ কী?
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, কম করে চার থেকে পাঁচ শতাংশ মানুষের শরীরে করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরে অ্যাথ্রেটিস এবং ব্যথা বেদনা অনেক বেশি করে দেখা দিচ্ছে। ধারণা দিচ্ছেন চিকিৎসক নরেন্দ্র বৈদ্য.... তিনি বলছেন, কোভিডের সময় প্রদাহজনিত অনুগুলি পেশী প্রোটিন ভেঙে দেয়। ফলে এর সংশ্লেষণ হ্রাস পায়, পেশী ক্লান্ত হয়ে পড়ে, কার্টিলেজ ক্ষতিগ্রস্থ হয় যার ফলেই অথ্রেটিস জাতীয় সমস্যা দেখা যায়।
করোনা চিকিৎসার সময় ব্যবহৃত হয় স্টেরয়েড, অ্যান্টি ভাইরাল ওষুধের সিক্যুয়াল যেটি থেকেও ব্যথা বাড়তে পারে। জয়েন্ট অসাড় হয়ে পড়ে, পেশী শক্ত হয়ে যায় এবং ব্যথার মত উপসর্গগুলো পেশীকে সবল হতে দেয় না। অনেকের শরীরে আবার অটো ইমিউন অ্যাথরাইটিস এর সমস্যা দেখা দিয়েছে।
এর সঙ্গেই তিনি জানাচ্ছেন, চরম ক্লান্তি থাকছে। প্রতিক্রিয়াশীল অ্যাথ্রাইটিস, ভাসকুলাইটিস এই জাতীয় রোগের কথাও শোনা যাচ্ছে। কয়েক মাস ধরে এই সমস্যা চলতে পারে। স্টেরয়েডের অতিরিক্ত ব্যবহার, ব্যথা বাড়িয়ে তুলতে পারে। হাড় এর সমস্যায় অস্টিওনেক্রসিস দেখা যেতে পারে - ফলে দ্রুত অবক্ষয় এবং ব্যথা বাড়তে পারে।
কীভাবে রোগ প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা করা সম্ভব?
আরামে থাকতে হবে। হাত পায়ের যত্ন নিতে হবে। প্রতিদিন ব্যায়াম করা উচিত। ভাল ভাবভঙ্গি বজায় রাখা উচিত। জয়েন্ট তথা পেশী ব্যাথায় ঠান্ডা গরম সেঁক দিলে বেশ ভাল।
স্কিনের সমস্যা কীভাবে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে?
কোভিডের অনাক্রমতা অনেক লোকের মধ্যে অটো ইমিউন এর মাধ্যমে সুপ্ত সংক্রমণকে প্ররোচিত করতে পারে সৃষ্টি করতে পারে হারপিস এবং ওয়ার্ট। চিকিৎসক বিশ্বজিৎ চভান বলছেন, মনক্লনাল অ্যান্টি টিএনেফ এর সঙ্গে চিকিৎসার কারণে অ্যান্টিবডি প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে হারপিস সৃষ্টি করতে পারে। মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে অনেক লোক হারপিস কিংবা ওয়ার্ট জাতীয় সমস্যার কথা জানিয়েছেন। মহিলাদের মধ্যে বেশি এই সমস্যা দেখা যায়। ত্বকে লাল ফুসকুড়ি, চোখের পাশে দাদ, নাক বন্ধ এবং ঠোঁটের কালোভাব এইধরনের অভিযোগ আসে। হারপিস এবং অন্যান্য ত্বকের জটিলতা এমন রোগীদের মধ্যেই দেখা যায় যাদের মধ্যে পূর্ব রোগের লক্ষণ ছিল। ত্বকে নানা ধরনের প্যাচের আবরণ দেখা যায়.... অবিলম্বে চিকিৎসা করুন।
কীভাবে চিকিৎসা করবেন?
চিকিৎসক সৌরভ শাহ বলেন, সপ্তাহে অন্তত একটি করে হারপিস রোগীকে দেখছি। এবং কারণ হিসেবে বলতে পারি, ইমিউনিটি কম... যেহেতু করোনা পরবর্তীতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় তাই এই চর্মরোগে আক্রান্ত হতে পারে। হারপিস জস্টার ভাইরাস সব মানুষের শরীরে উপস্থিত থাকে। যখন শরীরের অনাক্রমতা সঠিকভাবে কাজ করে না, বিপদে পড়ে তখন হারপিস জস্টার যেটি সুপ্ত অবস্থায় সেটি জ্বলতে থাকে এবং চাগাড় দিতে থাকে। ডায়াবেটিস রোগীদের এবং দীর্ঘস্থায়ী রেনাল রোগীদের মধ্যে দেখা যাবে। কেমোথেরাপি জাতীয় সমস্যায় এর সম্ভাবনা বেশি। অনেক সময় অস্ত্রোপচারের পরবর্তীতেও এই সমস্যা দেখা যায়।
যাদের শরীরে ছত্রাকের মাত্রা বেশি, তাদের মধ্যেও এর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি দেখা যায়। ফুসকুড়ি গুলি সংক্রমণের পরে শরীরের বেশিরভাগ অংশ লাল চুলকানি দেখা যেতে পারে, তবে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই সেটি অদৃশ্য হয়ে যায়। এই রোগের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, নইলে পরে মুশকিল হতে পারে।