গুরু না অ্যাপ? নাড়া বাঁধা কার কাছে?
অরুণিমা কর্মকার
'হিরো' নামক একটি ছবির কথা মনে আছে? সলমন খানের ছবি, ২০১৫ সালে মুক্তিলাভ। ছবিটি মুক্তি পাওয়ার আগে পর্যন্ত সলমন খানের একটি বিশেষ প্রতিভা সম্বন্ধে আমরা কেউই অবগত ছিলাম না। আরও অনেক কিছু করার পাশাপাশি. তিনি নাকি গানও গাইতে পারেন! কাজেই ছবিতে স্বয়ং নায়কের গলায় টাইটেল ট্র্যাক শুনে সবাই বিস্মিত। সল্লুভাইয়ের সংগীতচর্চার কথা তো আগে শোনা যায়নি। অবশ্যই এসব কানাকানিতে কান দেননি সলমন। উল্টে গান গাওয়ার পাশাপাশি এবার গান লিখতেও শুরু করেছেন। 'রেস থ্রি' ছবির 'সেলফিশ' গানটির কথা তাঁরই। বলা বাহুল্য তাঁর এই প্রতিভাও যে আছে সে সম্পর্কেও আমাদের ধারণা ছিল না।
সল্লু একা নন, সাম্প্রতিককালে আমরা শুনেছি পরিণীতি চোপড়া, তস্য দিদি প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, আলিয়া ভাট প্রমুখের কণ্ঠে গান।এছাড়াও আরও কিছু অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মধ্যে গান গাওয়ার রেওয়াজ দেখা যাচ্ছে ইদানিং। রেওয়াজ ছাড়াই তাঁরা গান গেয়ে ফেলছেন আকছার। কেউ কেউ লিখছেন লিরিকও।
আরও পড়ুন: আবার গায়কের আসনে অমিতাভ বচ্চন
রহস্যটা কী? সিনেমায় গান গাওয়ার সুযোগ হলেও গানের জগতে কেন এতদিন ছাপ ফেলেননি এঁরা? এখানে কি লুকিয়ে আছে প্রযুক্তির কৌশল? গান গাইতে সুর লাগে কণ্ঠে, জন্ম থেকে সুর পেলেও প্রয়োজন হয় গুরুর শিক্ষার, প্রযুক্তির জল যতই গড়াক না কেন। এমনটাই দাবি করছেন গানের জগতের নক্ষত্ররা। এদিকে দৈনন্দিন জীবন যখন বাঁধা পড়ছে অ্যাপের জালে, সব কিছুই সম্ভব হচ্ছে অ্যাপের মাধ্যমে, অ্যাপ কি গানের শিক্ষার মূল সুরকে হারিয়ে দিতে চলেছে?
গুটিকয়েক অ্যাপের সাহায্যে সুর সহ নিজের কণ্ঠস্বর ঘষামাজা করতে পারেন আপনিও। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে দুটি অ্যাপের রাজত্ব চলছে। Sing! এবং StarMaker অ্যাপ দুটি সবার গাওয়ার সুপ্ত বাসনা পূর্ণ করে দিতে পারে। অনেকে প্রথম দিকে পাত্তা দেননি, আবার অনেকে নিজের ফোনে ইনস্টল করে গান গাওয়ার চেষ্টা করেছেন। অ্যাপের নির্দেশে সুর লয় মিললেই আপনি সুরেলা, আপনি গায়ক বা গায়িকা। মিউজিকের সঙ্গে আপনার গানকে কোন রকম বাহ্যিক আওয়াজ ছাড়া রেকর্ড করতে সক্ষম এই অ্যাপ।
তাহলে কি ভাইজানও এমন কোনো অ্যাপ ব্যবহার করেছেন? বলিউডের সংগীতশিল্পী আরমান মালিক আবার Sing! অ্যাপের বিজ্ঞাপনও করেছেন। এ আবার অন্য প্রহসন। কলকাতার জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী সৌম্যজিৎ দাস অবশ্য এই প্রসঙ্গে বলছেন, আরমান অর্থের বিনিময়ে ওই অ্যাপে গান গাইতে রাজি হয়েছেন মাত্র; এটা মনে করা একেবারেই ঠিক হবে না যে তিনিও এই ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করে থাকেন।
চাইলেই মিউজিক সহ গান গাইতে পারবেন আপনি
তবে এই অ্যাপের সাহায্যে গান গাওয়ার বিরোধী প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী শ্রাবণী সেন থেকে শুরু করে লোকপ্রিয় প্লেব্যাক গায়িকা ইমন চক্রবর্তী । শ্রাবণী সেনের মতে, গুরু ছাড়া গান শেখা যায় না। একই মত ইমন চক্রবর্তীরও। তিনি আরও বলছেন, "অ্যাপের মাধ্যমে সঠিক গান গেয়ে ওঠা কখনই সম্ভব নয়। গান সাধনা ও চর্চার বিষয়।" অন্যদিকে এই অ্যাপ সম্পর্কে কিছুটা হলেও দ্বিমত রয়েছে সৌম্যজিতের। তাঁর বক্তব্য, কাউকেই শেখার পদ্ধতি শিখিয়ে দেওয়া যায় না, ঠিক কীভাবে প্রেম করবেন তা যেমন শিখিয়ে দেওয়া যায় না। "তবে এই অ্যাপ ব্যবহার করে কেউ যদি একটু আধটু গান গেয়ে নিতে চান, মন্দ কি? অবশ্যই এই করে কেউ গায়ক হতে পারবেন না," বলেন সৌম্যজিৎ।
সুতরাং আপনি যদি বাথরুম সিঙ্গারের চেয়ে কিছু বেশি হতে চান, নিজেই পরখ করে নিতে পারেন এই অ্যাপের দৌড় ঠিক কতটা। সল্লুভাই পারলে আপনার না পারার কোনো কারণ নেই!