ভারতে এমন বহু মন্দির আছে, যা আজও রহস্যের চাদরে ঢাকা। তবে সময় বদলেছে। যুক্তি এবং বিজ্ঞানের প্রসার ঘটেছে। তার পরও কুসংস্কার যায়নি। বন্ধ হয়নি প্রচলিত বিশ্বাস। আজ ইন্টারনেটের যুগ। চাইলে, কুসংস্কার বা রহস্যের অন্ধকার ভেদ করতে পারেন বিজ্ঞান সচেতন ও যুক্তিবাদীরা। তাঁদের সেই অভিজ্ঞতা করতে পারেন ক্যামেরাবন্দি। তা ছড়িয়ে দিতে পারেন ইন্টারনেটের মাধ্যমে।
এতে সচেতনতা বাড়বে। কমবে কুসংস্কার। ধ্বংস হবে প্রচলিত অন্ধ বিশ্বাস। কিন্তু, সত্যি কথা হল, কারণটা যাই হোক না-কেন, বিজ্ঞান সচেতন মানুষের মধ্যেও এমন চেষ্টার খামতি আছে। আর, তার ফলেই দানা বাঁধছে অন্ধবিশ্বাস। তার প্রতি আস্থা জন্মাচ্ছে অনেকেরই। প্রশ্ন উঠছে, যদি অন্ধবিশ্বাসই হবে, তবে কেন তা দূর করতে পারছেন না যুক্তিবাদীরা।
এমনই এক বিশ্বাস ঘিরে রয়েছে রাজস্থানের কিরাডু মন্দিরকে ঘিরে। যে বিশ্বাস বলে, এই মন্দিরে প্রবেশ করলে পাথরের মূর্তিতে পরিণত হয়ে যেতে পারেন দর্শনার্থী। সত্যজিৎ রায়ের সোনার কেল্লার দৌলতে রাজস্থানের সঙ্গে বাঙালির সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। এই মরুরাজ্যের বারমের জেলাতেই রয়েছে কিরাডু মন্দির। বারমের শহর থেকে যার দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। এখানকার সিহনি গ্রামে রয়েছে ওই মন্দির। মরুভূমি ঘেঁষা এলাকায় গ্রাম ও মন্দির। দিনের বেলাতেও যেখানে এলে রীতিমতো গা ছমছম করে পর্যটকদের।
এই মন্দিরের অধিষ্ঠাতা দেবতা শিব। ষষ্ঠ শহকে কিরাদবংশীয় রাজারা এখানে রাজত্ব করতেন। সেই অনুযায়ী এই জায়গার নাম ছিল কিরাদকোট। বর্তমানে, কেবলমাত্র মন্দিরের নামটুকু সেই পরিচয় বহন করছে। প্রবেশের সদর দরজা জং ধরে বহুকাল অকেজো। মন্দিরে প্রবেশের জন্য রয়েছে ছোট দরজা। সেখান দিয়েই প্রবেশ করতে হয় মন্দিরে। স্থানীয় বাসিন্দাদের বিশ্বাস এই মন্দির অভিশপ্ত এব রহস্যময়। খাজুরাহো মন্দিরের সঙ্গে এই মন্দিরের মিল রয়েছে। সেই জন্য এই মন্দিরকে রাজস্থানের খাজুরাহোও বলা হয়।
বাসিন্দাদের দাবি, এই মন্দিরে এমন ভাস্কর্য রয়েছে, যা বৃষ্টির পূর্বাভাস নিখুঁতভাবে বলে দিতে পারে। এখানকার পরিবেশ যতই শান্ত হোক না-কেন, সন্ধের পর এই মন্দিরের ত্রিসীমানায় বাসিন্দারা থাকেন না। ত্রিসীমানা দূর, সন্ধের পর কিরাডু মন্দিরের এক কিলোমিটারের মধ্যেও ঘেঁষেন না বাসিন্দারা। কারণ, তাঁদের বিশ্বাস যে সন্ধের পর এই মন্দির প্রবেশ করলে হয় মৃত্যু নয় তো পাথরের মূর্তিতে পরিণত হওয়া নিশ্চিত। গ্রামবাসীদের দাবি, রাত বাড়লেই অভিশপ্ত ছায়ামূর্তিরা মন্দির চত্বরে ঘুরে বেড়ায়। পাথর থেকে বেরিয়ে আসে মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ।
আরও পড়ুন- এই তীর্থস্থানের দেবী ভক্তের প্রার্থনা ফেরান না, লাগোয়া পুকুরে স্নানে হয় রোগমুক্তি
বাসিন্দাদের মনে এই বিশ্বাস তৈরির পিছনে রয়েছে এক কাহিনি। তা হল বারোশো শতকে এখানে সোমেশ্বর নামে পারমার বংশের রাজা রাজত্ব করতেন। তুর্কিদের আকর্মণে তিনি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হন। শিবভক্ত রাজা সেই ক্ষতি থেকে বাঁচতে এক সন্ন্যাসীর শরণাপন্ন হন। রাজার অনুরোধে সাড়া দিয়ে শিষ্যদের নিয়ে ওই সন্ন্যাসী এই মন্দিরে ডেরা বাঁধেন। তাঁর আশীর্বাদে ধীরে ধীরে সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে বারমের জেলা। কিন্তু, সেই সন্ন্যাসী ও তাঁর শিষ্যদের কথা আর গ্রামবাসীরা মনে রাখেননি। একদিন ওই সন্ন্যাসীর এক শিষ্য গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু, তারপরও তাঁকে সাহায্য করেননি গ্রামবাসীরা।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওই সন্ন্যাসী গ্রামবাসীদের অভিশাপ দেন। তাঁর অভিশাপে সেই সন্ধ্যাতেই গ্রামবাসীরা পাথরে পরিণত হন। বারোশো শতকের সেই ঘটনাকে আজও মনে রেখেছে বারমের। আজও সন্ধ্যের পর গোটা এলাকা তাই জনমানবশূন্য হয়ে যায়।