/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2023/01/f1.jpg)
নন্দিনীর হাতের রান্না চেখে না দেখলেই নয়
জেদ সে যে এমন জিনিস, যা মানুষকে সম্পূর্ণ অন্যভাবে তৈরি করে নিতে পারে। আর এই অদম্য জেদের কারণেই রাস্তার ধারে একটা গোটা সংসার সাজিয়ে ফেলেছেন Smart দিদি নন্দিনী গঙ্গোপাধ্যায়। বয়স নেহাতই কম, কিন্তু জীবনের চড়াই উতরাই পেরিয়েছেন নিজের সাহসে। আর তাঁকে প্রবল সঙ্গ দিয়েছেন পরিবারের প্রত্যেকে।
করোনা মহামারীর পর থেকেই তাঁর এই পথচলা শুরু। ডালহৌসির অফিস পাড়ায় সকলকে হাসিমুখে খাবার পরিবেশন করেন নন্দিনী। শুধু তাই নয়, রান্নাটা নিজেই করেন। সকাল আটটা থেকে শুরু হয়ে যায় প্রতিদিনের কর্মযজ্ঞ। নন্দিনীও কোমর বেঁধে লেগে পড়েন। তবে সবথেকে বেশি সাহায্য যাঁর থেকে পান তিনি হলেন তাঁর বাবা। নন্দিনীর কথায়, এই ব্যবসা তাঁরই। বাবা সবকিছু ঢেলে দিয়েছেন এর জন্য।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2023/01/WhatsApp-Image-2023-01-16-at-11.22.54-PM.jpeg)
শুরুর সময়টা কেমন ছিল? জীবন কখনই একরকম চলে না। নন্দিনীর জীবনটাও ছিল ভয়ঙ্কর। অল্প বয়সে স্ট্রোক তারপর, এক কঠিন পরিস্থিতি। পরিবার ভেঙে পড়েছিল সাংঘাতিকভাবে। সেই যুদ্ধে জয়ী হয়েছেন নন্দিনী। ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে পড়াশোনা করার পরেও শুধু পরিবারের খাতিরে সুদূর গুজরাটে হোটেলে চাকরি করেছেন। লক্ষ্য ছিল একটাই, পরিবারের পাশে দাঁড়ানো। নন্দিনী বললেন, "সোনার চামচ মুখে নিয়ে হয়তো জন্মাইনি। তবে, রুপোর চামচ মুখে নিয়ে আমিও জন্মেছিলাম। কিন্তু, সেসব এখন অতীত। আমাকেও লড়তে হচ্ছে প্রতিদিন। লড়াই করে বেঁচে থাকাটাই এখন আমার সয়ে গেছে"।
অফিসপাড়ায় দোকান চালাচ্ছেন তিনি। কারওর কাছে দিদি, কেউ বলছেন ম্যাডাম আবার কেউ বলছেন শুধু নন্দিনী। কেউ কেউ খোঁজ নিয়ে যাচ্ছেন মাংসটা কখন হবে? আবার কেউ বলছেন, মাছের ঝোল দিয়েই ভাত দিয়ে দাও। তাঁদের কাছে নন্দিনী আজও বিখ্যাত কেউ না বরং এমন একজন মানুষ যে রেঁধে বেড়ে খাওয়াতে ভালবাসেন। এদিকে, দিনকয়েক হল 'ভাইরাল' তকমা জুটেছে তাঁর। নিজের মত করে রান্না করছেন, কিন্তু তাঁর আশেপাশে ভিড় জমিয়েছে অনেকেই। চারিদিকে ক্যামেরার ফোকাস, ব্যস্ততার মাঝেও মুখে লেগে রয়েছে হাসি। কারণ, তাঁর কাছে যাঁরা খেতে আসেন তাঁরা সকলে পরিবারের লোক।
এতকিছুর মাঝেও রয়েছে নেতিবাচক কিছু মন্তব্য। যদিও নন্দিনীর কথায়, এসব কিছুই তাঁকে আঘাত করে না। শেষ দুবছর অনেক কিছুই দেখেছেন তিনি। এখন তো অনেক ভাল পরিস্থিতি। দোকানে যে বা যাঁরা আসছেন তাঁদের বেশিরভাগের লক্ষ্য একটাই, নন্দিনীকে একবার দেখা তাঁর সঙ্গে একবার ছবি তোলা। আবার কেউ কেউ এসে বেশ কিছুদিন আগের ঘটে যাওয়া সেই ঘটনাকে উল্লেখ করছেন। জনৈক এক ব্যক্তির সঙ্গে ঘটে যাওয়া বাদানুবাদকে ইঙ্গিত করেই বলছেন, 'ফেসবুক যে ঝামেলা করতে দেখলাম আপনাকে।' তারপর? এরপরেও নন্দিনীর মুখে হাসি লেগেই রয়েছে। একবারও কারওর সঙ্গে খারাপ আচরণ তো দূর বরং সাবধানতা অবলম্বন করার কথাও নিজেই বলছেন।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2023/01/WhatsApp-Image-2023-01-16-at-11.22.51-PM.jpeg)
ব্যবহারই মানুষের পরিচয়, একথাই বারবার আওড়ে গেলেন তিনি। নন্দিনীর নাকি দেমাগ বেড়ে গেছে? এপ্রসঙ্গে তাঁর মতামত? নন্দিনী বললেন, "অনেকে অনেক কিছু বলবেন। কিন্তু তাঁর আগের ঘটনা, পরের ঘটনা চাক্ষুষ না দেখেই মন্তব্য করতে শুরু করেন। শুধু তাই নয়, কেউ কেউ এসে এমন ভাবে আমায় বলতে শুরু করেন যে সেইসময় মাথা ঠিক রাখা যায় না। আসলে, আমিও তো একজন মানুষ। কতক্ষণ নিজেকে ঠিক রাখা যায়। আজ আমায় যাঁরা সফল বানিয়েছেন তাঁদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমার রুজিরুটি এই ব্যবসা। আমার যদি ঘ্যাম বাড়ত, তাহলে এত ভিডিও কীভাবে হত"?
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2023/01/WhatsApp-Image-2023-01-16-at-11.22.52-PM-1.jpeg)
এত এত পুরুষ ব্যবসায়ীর মাঝে তবে কি একজন মেয়ে বলেই তাঁকে সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে? যদিও আশেপাশের মানুষজনের এই নিয়ে কোনও মাথাব্যথা নেই। বরং নন্দিনীর যাতে কোনও অসুবিধা না হয় সেই খেয়াল রাখছেন তাঁরা। তবে, নন্দিনীর কথায় কিছুটা তো তাই-ই! "আমি একজন মেয়ে বলে কিছু সমস্যা তো রয়েছেই। তবে, বাকিদের ভালবাসা আমায় এই লড়াই চালিয়ে যেতে সাহায্য করছে।" তাই, বাঙালের হাতে বাঙালি রান্না খেতে হলে নন্দিনীর পাইস হোটেলে চলে আসতে হবেই।