নদিয়া জেলার প্রাচীন ও প্রসিদ্ধ শহর নবদ্বীপ। অনেকে বলেন, মায়াপুরে নয়। এখানেই নাকি জন্ম হয়েছিল শ্রীচৈতন্যদেবের। শুধুমাত্র ভক্তি আন্দোলনের নেতা চৈতন্যদেবই নন। প্রাচীন শহর নবদ্বীপের যেন ঈশ্বর লীলার অন্ত নেই। এখানে রয়েছে চৈতন্য ভিটে, সোনার গৌরাঙ্গ, গৌড়ীয় মঠ, সমাজবাড়ি আশ্রম, গন্ধেশ্বরী আশ্রমের মত অসংখ্য স্থান মাহাত্ম্যে পরিপূর্ণ তীর্থস্থান। আর, তার মধ্যেই ভক্তদের হৃদয়জুড়ে আছেন পোড়া মা তলার দেবী পোড়া মা। ভক্তদের অনেকের কাছেই তিনি নীল সরস্বতী রূপে পূজিতা হন।
Advertisment
কথিত আছে জানবাজারের রানি রাসমণির গুরুদেব উমাচরণ ভট্টাচার্য একসময় নবদ্বীপের পোড়া মা তলায় সাধনা করতেন। সেই সময় এই দেবী কেউ পোড়া মা বলতেন না। ভক্তদের কাছে তিনি পরিচিত ছিলেন 'ভবতারিণী' রূপে। রানি রাসমণি দক্ষিণেশ্বরে 'জগদীশ্বরী'র মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। উমাচরণ যার নাম নিজের আরাধ্য দেবীর সঙ্গে মিলিয়ে রাখেন 'ভবতারিণী'। সেই নাম মেনেও নিয়েছিলেন পরমপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণ।
দেবী পোড়ামার ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায় যে পঞ্চদশ শতাব্দীতে বৃহদ্রথ নামে এক সিদ্ধ সন্ন্যাসী ও তন্ত্রসাধক নবদ্বীপে ছিলেন। সেই সময় নবদ্বীপের বিস্তীর্ণ অঞ্চল ছিল জঙ্গল বা বন। বৃহদ্রথ সেই জঙ্গল বা বনের মধ্যে দেবী কালীর ঘট স্থাপন করেন। সেই সময় নবদ্বীপের অত্যন্ত নামী পণ্ডিত ছিলেন বাসুদেব সার্বভৌম। তাঁর ঠাকুরদা ছিলেন বৃহদ্রথর মন্ত্রশিষ্য। বৃহদ্রথর মৃত্যুর পর ওই ঘট পূজার দায়িত্ব পান বাসুদেব সার্বভৌম। তিনি বন থেকে ঘটটি নিয়ে এসে নবদ্বীপ শহরে এক গাছের তলায় তা স্থাপন করেন।
সার্বভৌমের সেই ঘটে দক্ষিণাকালী দেবী 'বড় মা'-র নিত্যপূজা হত। সেখানে দেবীর সেবার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন নদিয়ার রাজা। একবার বাজ পড়ে সেই গাছ পুড়ে যায়। সেই থেকে দেবী ভক্তদের কাছে পরিচিত হন 'পোড়া মা' নামে। নবদ্বীপ বাজারের মধ্যে এই 'পোড়া মা' তলা মন্দির। এই মন্দিরকে ঘিরে রয়েছে একটি বট গাছ। সরস্বতী পুজোর দিন এখানে দেবীর বিশেষ পুজো হয়। ভক্তরা বটগাছটি প্রদক্ষিণ করে, এখানে ঢিল বেঁধে দেন। নবদ্বীপ অথবা কৃষ্ণনগরে নেমে অটোতে যাওয়া যায় নবদ্বীপ ঘাট। ঘাট পেরিয়ে কিছুটা এগোলেই 'পোড়া মা' মন্দিরের দেখা মেলে। ভক্তদের বিশ্বাস, দেবী অত্যন্ত জাগ্রত। তাঁর কাছে প্রার্থনা করলে পূর্ণ হয় মনোবাঞ্ছা।