বাংলায় জাগ্রত শক্তিপীঠের সংখ্যা নেহাত কম নয়। তার মধ্যে এমন কিছু পীঠস্থান আছে, যেগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে দীর্ঘ ইতিহাস। সেই সব পীঠে বহু ভক্ত উপকৃত হয়েছেন বলে শোনা যায়। আর, সেই কারণে ভক্তদের ভিড়ও কমবেশি লেগেই থাকে। তার মধ্যে আবার বেশ কিছু সতীপীঠও আছে। এই সব পীঠগুলোকে বাঙালি ৫১ সতীপীঠের অন্যতম বলেই মনে করে।
এই ৫১ সতীপীঠের অন্যতম দেবী কিরীটেশ্বরীর মন্দির। মুর্শিদাবাদের প্রাচীনতম মন্দিরগুলোর একটি এই মন্দির। এখানে দেবী সতীর কিরীট বা মুকুট পড়েছিল। তাই এই মন্দির, সতীপীঠের পাশাপাশি উপপীঠ হিসেবেও পরিচিত। দেবী খুবই জাগ্রত। শাক্তমতে তাঁর নাম বিমলা। আর, ভৈরব সম্বর্ত। অতীতে এই পীঠ কিরীটকণা নামে পরিচিত ছিল। এখানে দেবীর মূর্তি পরে তৈরি হয়েছে। যাকে দেবীর মুকুট বলে পুজো করা হয়, সেটা একটা পাথরের বেদী।
১৪০৫ সালে মূল মন্দিরটি ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু, সেই মন্দিরের কারুকার্যখচিত প্রস্তরবেদী আজও ইতিহাসের সাক্ষী দিচ্ছে। কথিত আছে, কুষ্ঠ রোগগ্রস্ত মীরজাফর শরীরের জ্বালা জুড়োতে দেবীর চরণামৃত পান করেছিলেন। সেই সময় এখানে ছিল ১৭২টি শিবমন্দির। বর্তমান মন্দিরটি তৈরি হয়েছে ১৮ শতকে। তৈরি করিয়ে দিয়েছিলেন জমিদার দর্পনারায়ণ। এই মন্দিরের কিরীট রানি ভবানীর তৈরি গুপ্তমঠে স্থানান্তরিত করা হয় বলেই শোনা যায়। বাংলার শাক্ত সম্প্রদায় এই মন্দিরকে প্রাচীন মহাপীঠ বলে মনে করে। এখানকার গুপ্ত মন্দিরে দেবী বস্ত্রে আচ্ছাদিত থাকেন। পুরোহিতদের একাংশের দাবি, দেবীর সেই রূপ দর্শন নিষিদ্ধ।
শোনা যায়, পাঠান, মোঘল শাসনের সময়ও এই মন্দিরের খ্যাতি ছিল। শোনা যায় শংকরাচার্যের সময়, এমনকী গুপ্ত যুগেও কিরীটেশ্বরী মন্দিরের অস্তিত্ব ছিল। এখানে দিঘির পাড়ে রয়েছে বহু দেবদেবীর ভাঙা মূর্তি। বর্তমানে বিভিন্ন দেবদেবীর ১৬টি মন্দির আছে। এই মন্দিরে দেবীর বেদী দর্শন করাই যায়। কিন্ত, দেবীর মূর্তি দর্শন করতে হলে যেতে হবে পৌষ মাসের মঙ্গলবারে দুপুর ২টো থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে। তখন ভক্তরা দেবীর রাজবেশ দেখতে পান। সেই সময় এই মন্দিরের কাছে মেলা বসে।
আরও পড়ুন- কীভাবে তৈরি হয়েছিল কালীঘাটের মন্দির, জানেন তার আসল ইতিহাস?
এখানকার মন্দিরগুলো নিয়ে পুরোহিতদের মধ্যে মতভেদ আছে। দেবীর একাধিক মন্দির রয়েছে। আর, যে মন্দিরের যে পুরোহিত, তিনি নিজের মন্দিরকেই দেবীর আসল মন্দির বলে দাবি করেন। তার মধ্যে নাটোরের রানি ভবানীর তৈরি করা মন্দিরকেই দেবীর আসল মন্দির বলে পুরোহিত এবং ভক্তদের একাংশ মনে করেন।