হিন্দু ধর্মে বারো মাসে তেরো পার্বণ। তার মধ্যে অন্যতম পার্বণ নীলষষ্ঠী বা নীলাবতীর বিয়ে। চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন এটি পালিত হয়। শিব-দুর্গার বিয়ে হিসেবে এই ষষ্ঠী বেশি পরিচিত। মায়েরা সন্তানের মঙ্গলকামনায়, সন্তানের সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করে এই ব্রত পালন করে থাকেন। সারাদিন উপবাস থেকে সন্ধ্যায় মায়েরা সন্তানের কল্যাণের জন্য শিবপূজা করে তাঁর উপবাস ভঙ্গ করেন। এবছর নীল ষষ্ঠীর সময়সূচি হল ইংরেজির ১৩ এপ্রিল, ২০২৩। বাংলায় ২৯ চৈত্র, বৃহস্পতিবার। বাতিদানের শুভ মুহূর্ত হল সন্ধ্যা ৫টা ৫৩ থেকে ৬টা ৩০।
পুজোর সামগ্রী
এই পুজোর সামগ্রী হল- কাঁচা দুধ, দই, ঘি, মধু, চিনি। তা দিয়ে তৈরি করতে হবে পঞ্চামৃত। এছাড়াও লাগবে গঙ্গার জল, পৈতে, অখণ্ড আতপচাল, সিদ্ধিপাতা, বেলপাতা, চন্দন, আকন্দ ফুলের মালা, নীল অপরাজিতা ফুল, নীল অপরাজিতা ফুলের মালা, ধুতরা ফল, মিষ্টি, নতুন মাটির প্রদীপে ঘি-সহ পলতে জ্বালিয়ে এই নীল ষষ্ঠীর দিন দেবাদিদেবকে অর্পণ করতে হয়। এছাড়াও প্রত্যেক সন্তানের নাম স্মরণ করে তাঁদের নামে নীলের ঘরে অর্থাৎ মহাদেবের কাছে একটি করে মোমবাতি জ্বালাতে হবে। ফলের মধ্যে অতি অবশ্যই বেল ও ধুতরা ফল মহাদেবকে নিবেদন করতে হয় এই ষষ্ঠীর সন্ধ্যায়। পাশাপাশি কলা, শশা ইত্যাদি যে কোনও ফল মহাদেবকে নিবেদন করা যেতে পারে। এই পুজো নারী, পুরুষ- সকলেই করতে পারেন।
কীভাবে করবেন অভিষেক
পুরাণ অনুযায়ী শিবলিঙ্গের ডানদিকে চরণে থাকে গণেশ ও বামদিকে কার্তিক। আর, শিবলিঙ্গ ভগবতী পার্বতীর হাতে অবস্থান করে। এর মধ্যে শিব ও পার্বতীর কন্যা দেবী অশোকসুন্দরীর অবস্থান। তাই উত্তরদিকে মুখ করে প্রথমে শিবলিঙ্গের ডানদিকে বা গণেশের ওপর জল দিতে হয়। তারপর বামদিকে জল দিতে হয়। তারপর অশোকসুন্দরীর ওপর জল দিতে হয়। তারপর দেবী পার্বতীর হাতের চারপাশের ওপর দিয়ে শেষে মহাদেবের শিবলিঙ্গের ওপর জল অর্পণ করতে হয়।
আরও পড়ুন- বিখ্যাত পাতালেশ্বর শিবমন্দির, যেখানে ভক্তদের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেন ভোলেনাথ
ব্রত পালনকারীদের নিয়মাবলি
যাঁরা এই ব্রতপালন করবেন, তাঁদের ব্রতপালনের আগের দিন নিরামিষ খেতে হয়। ব্রতপালনের দিন মহাদেবের পূজা দেওয়ার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত উপবাস থাকতে হয়। কেউ চাইলে অবশ্য জল, চা পান করতে পারেন। সেটা সম্পূর্ণ নিজের ভক্তির ব্যপার। উপবাস ভঙ্গের পর ফল, সাবু ইত্যাদি খেতে হয়। এছাড়াও ময়দার তৈরি যে কোনও দ্রব্যসামগ্রী খাওয়া যেতে পারে। যেমন- লুচি, পরোটা। তবে, কোনও পোড়া জিনিস যেমন রুটি, মুড়ির মত কোনও খাদ্যসামগ্রী না-খাওয়াই উচিত। খেতে হবে সন্ধপ লবণ।